বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডব: নিহত বেড়ে ১০ । টানা চার ঘণ্টার বেশি সময় তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। ভয়াল গতি নিয়ে সেই সুন্দরবনেই ছোবল মারে অতি প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় । এর আগেও সিডর-বুলবুলের আঘাত আসে সুন্দরবনে। এই সুন্দরবনই বাঁচিয়ে দেয় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ।বুধবার (২০ মে) সুপার সাইক্লোন আমফান কেড়ে নিয়েছে অন্তত ১০ জনের প্রাণ। নিহতদের মধ্যে পটুয়াখালীতে ২, ভোলায় ২, যশোরে ২, বরগুনায় ১, সাতক্ষীরায় ১, সন্দ্বীপে ১ ও পিরোজপুরে একজন রয়েছে। এছাড়া এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কয়েক ফুট বেড়েছে নদনদীর পানি। হুমকির মুখে রয়েছে বেড়িবাধ। ফলে বাধ ভাঙার আতংকে রয়েছেন উপকুলবাসী। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে –
ঘূর্ণিঝড় আমফান তাণ্ডব বেশি চলেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।একই সঙ্গে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনার নিম্নাঞ্চলও জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে আম্পানের কারণে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েও থেমে নেই আমফান। শত কিলোমিটার গতিতে দেশের উপকূল অঞ্চল পেরিয়ে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এটি।
পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
তাদের মধ্যে গলাচিপা উপজেলায় রাসেদ (৬) নামে এক শিশু ও কলাপাড়ায় শাহ আলম নামে সিপিপি’র এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গলাচিপা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ছয় বছরের শিশু রাসেদ মারা গেছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে মো. শাহ আলম মীর (৫৫) নামে একজন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে খেয়া পার হওয়ার সময় পানিতে পড়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরে সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
চরফ্যাশন (দক্ষিণ): ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে চরফ্যাশন উপজেলায় সিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এছাড়া এক নারী গুরুতর জখম হয়েছেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেইনট্রি গাছ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে সিদ্দিক ফকির জখম হয়। তাকে তাৎক্ষণিক চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পথের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে একই সময় চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড ইয়ানুর বেগমের (৩০) গায়ে সুপারি গাছ ভেঙ্গে মাথায় আঘাত লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার মাথায় প্রায় ২৫/২৬টি সেলাই লেগেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ভোলা: ভোলায় ঘূর্ণিঝড়আমফানের তাণ্ডবে পড়ে রামদাসপুর চ্যানেল ৩০ যাত্রীসহ একটি ট্রলার ডুবে একজন নিহত হয়েছে। ট্রলার ডুবিতে নিহত ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায়। ওই ব্যক্তিসহ ৩০ যাত্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসেন। তারা লক্ষ্মীপুর জেলার মজুচৌধুরী ঘাট থেকে ট্রলার যোগে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ভোলায় আসে। ওই ট্রলার রাজাপুর সুলতানীঘাটের কাছে এলে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় স্রোতের টানে ভেসে যান রফিকুল ইসলাম। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ রতন কুমার শীল জানান, ট্রলার ডুবে যাওয়ার স্পটটি ছিল মেহেন্দীগঞ্জ সীমানায়।
সাতক্ষীরা: উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় আমফান । বুধবার রাত ৮টার পর দ্বিতীয়বার ১৪৮ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছে এ জেলায়। প্রবল বর্ষণে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নয় গ্রাম। এ ছাড়া ১৩টি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এদিকে এর মাত্রা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী। তিনি জানান, রাত ৮টার পর এ গতিতে আঘাত হানে আম্পান। রাত ১০টা পর্যন্ত ঝড়ের গতি একইরকমভাবে বিরাজ করছে। ঝড়ের আঘাতে সাতক্ষীরা সদর থানার কামালনগরে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ির। ভেঙেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি।
সন্দ্বীপ: বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সন্দ্বীপ পৌরসভা ২ নং ওয়ার্ডে ঘূর্ণিঝড় আমফানের জোয়ারে ভেসে যাওয়া এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। নিহত যুবকের নাম মো. সালাউদ্দিন (১৮)। তিনি পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের হোনাজীর বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে। জানা গেছে, চরে গবাদিপশুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় সালাউদ্দিন।
পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দেওয়া ধসে শাহজাহান মোল্যা (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া এদিকে সাইক্লোন আমফানের আঘাতে আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর ও চাকলায় বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। অপরদিকে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এদিকে বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখান বাজার এলাকায় জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শহীদ (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যশোর: প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে যশোরের চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামে ঘরের উপর গাছ পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন চানপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাবেয়া (১৩)। বুধবার (২০মে ) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে, আমফানের তাণ্ডবে বুধবার কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড় চলার সময়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আম্পানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের খবর মিলছে। এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
-পূর্বপশ্চিমবিডি
সিবিএনএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন