বাস্তবতার মুখোমুখি কানাডার প্রবাসী বাঙালিরা
কানাডায় প্রবাসী বাঙালিরা ভালো নেই। বিশ্ব মহামারীর করোনা প্রবাসীদের জীবনকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে প্রিয় স্বজনদের কাছ থেকে। নানা জটিলতায় প্রিয় স্বজনদের শেষ মুহূর্তেও বাংলাদেশে যেয়ে দেখা করতে পারছেন না অনেকেই। গত এক বছরে অনেক প্রবাসী এবং প্রবাসী বাঙালিদেরকে দিনের পর দিন ধৈর্য ধরে থাকতে হচ্ছে।
একদিকে বিমানে ওঠার আগে কানাডা সরকারের ৭২ ঘণ্টার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেটের আল্টিমেটাম, অন্যদিকে ভ্রমনের পর এবং কানাডায় ফিরে আসা পর্যন্ত দুই দেশের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের আল্টিমেটামে বিচলিত প্রবাসী বাঙালিরা। অনেকেই করোনা কালীন সময়ে মুঠোফোন আর ভার্চুয়ালি যোগাযোগ রাখছে প্রিয় স্বজনদের সাথে। ব্যথিত হৃদয় চিত্তে ভার্চুয়ালি দেখে নিচ্ছে প্রিয় স্বজনদের কখনো বা ঘরে কখনো বা হাসপাতালের বেডে।
কানাডায় প্রবাসী সাংবাদিক আহসান রাজীব বুলবুল জানালেন, গত মাসের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখে বাংলাদেশের ফরিদপুর হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তা মা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তার বাবা মাইনর স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি। বর্তমানে এখন বাড়িতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিচ্ছেন, প্রায় একমাস হতে চললেও নিজ মাতৃভূমি এবং বাবাকে দেখতে যেতে পারিনি। চরম এক বাস্তবতায় ভার্চুয়ালি বাবা ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি আর ভাবছি প্রবাসী এই জীবন কি আশীর্বাদ না অভিশাপের?
কানাডায় প্রবাসী সাংবাদিক বুলবুলের মত হাজারো বুলবুল রয়েছে যাদের অবস্থা প্রায় একই রকম। করোনার এই মুহূর্তে অফিসের ছুটি, ছুটির সাথে কোয়ারেন্টাইন সময়, পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে তার খরচ এবং আনুষঙ্গিক অবস্থা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত আর প্রিয়জনদের সাথে দেখা করতে যাওয়া হচ্ছে না। জীবনের এই চরম বাস্তবতায় দিনযাপন করছে কানাডার প্রবাসী বাঙালিরা। এসকল প্রতিকূলতার মধ্যেও দু-একজন যে দেশে যাচ্ছেনা তা নয়, কিন্তু সেটার সংখ্যা হাতে গোনা। এরমধ্য আরো যোগ হয়েছে বিমান যোগাযোগ ও তার সীমাবদ্ধতার।
অন্যদিকে, কানাডায় প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালি নিজেরাও করোনা আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। তাদের শরীর ও পরবর্তী ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেও অনেকে আবার স্বদেশে যাচ্ছেন না। সবকিছু মিলে এ এক অন্যরকম প্রবাসী জীবন যা প্রবাসী বাঙালিরা কোনদিন কল্পণাও করতে পারেনি। স্মৃতির আল্পনা, হারানো প্রিয়জনদের কথা, আর তাদের ছবি দেখেই সময় কাটছে প্রবাসী বাঙ্গালীদের।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ই ডিসেম্বর থেকে কানাডায় ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলেও প্রবাসী বাঙালিরা সবাই যে কবে থেকে ভ্যাকসিন পাবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তার শেষ নেই। এতকিছুর পরও মানবজীবনের সঞ্জীবনী শক্তি আশা নিয়েই প্রবাসী বাঙালিরা দিন গুনছেন।