ফিচার্ড শিক্ষাঙ্গন

মাধ্যাকর্ষণের বাস্তব জ্ঞানার্জন ।। প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি

মাধ্যাকর্ষণের বাস্তব জ্ঞানার্জন ।। প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি 
 
ইংরেজি ভাষায় একটি প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। “KNOWLEDGE IS POWER”. অর্থাৎ জ্ঞান-ই শক্তি।  জ্ঞান আমাদের চরিত্রকে বিকশিত করে। আর জ্ঞানকে যদি ” বি” উপসর্গ দ্বারা বিশেষায়িত করা যায়, তবে সেই জ্ঞানের মান আরো হাজার গুণ বৃদ্ধি পায় বইকি। কারণ এই “বি” উপসর্গের নিজস্ব অর্থ -ই হচ্ছে “বিশেষ”।  জ্ঞানের সাথে “বি” উপসর্গের সংযুক্তিতে উৎপত্তি হয় বিজ্ঞানের। যার অর্থ হচ্ছে ” বিশেষ জ্ঞান”। বিজ্ঞানের স্পর্শে মানবজীবন আজ সাফল্যের শীর্ষশিখরে। বিজ্ঞান মানবজীবনকে করে তুলেছে অতি সহজ। বিজ্ঞানের স্পর্শে যেমন মানবজীবন সহজতর ও অত্যাধুনিক হয়ে উঠেছে তেমনি এই জটিল পৃথিবীর অনেক জটিল বিষয় বিজ্ঞান মানবসমাজের চোখের সম্মুখে তুলে ধরেছে।
উপরিউক্ত বাক্যটি কেন আমার মনে উঁকি মারলো?
কারণ:- গতকাল আমি বাড়ির আম বাগানের পার্শ্ব অতিক্রম করার সময় একটি আম আমার পায়ের কাছে এসে পড়লো। ভাগ্য ভালো আমটি মাথায় পড়ে মাথায় একটি প্রকাণ্ড আলুর উদ্ভব হয়নি। হলে হয়তো এতোক্ষণে বিছানাই হতো আমার একমাত্র ঠিকানা।  উক্ত কারণে হয়তো ঘটনাটি আজকে সকলের সামনে বিবৃত করা আমার পক্ষে সম্ভবপর হতো না।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, একটি নিতান্ত আম মাথায় পড়লে মাথা কীভাবে ফুলতে পারে? এটি ঘটে অভিকর্ষজ ত্বরণের প্রভাবে।অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে এবং কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর আকর্ষণকে অভিকর্ষ বলে।
এই ঘটনাটি ঘটতেই আমার মনে পড়ে গেল বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি-র কথা।  তাঁর মনোমুগ্ধকর আবিষ্কার  – পড়ন্ত বস্তুর তিনটি সূত্র। 
তাহলে এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনায় আসা যাক :-
An unbelievable invention of “GALILEO GALILEI”-The father of modern science. 
“THE LAW OF FALLING BODIES “
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অতি স্বাভাবিক একটি অংশ হলো- কোনো বস্তুকে উপর থেকে নিচে পড়তে দেখা। এ কথা বলতে গিয়েই আরও একটি কথা যেন মনে নাড়া দিয়ে উঠলো। আমরা দৈনন্দিন জীবনে একটি শব্দ ব্যবহার করে থাকি-“GRAVITY”. যার বাংলা অর্থ  হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ। পদার্থ বিজ্ঞানে এটিকে “g” দ্বারা প্রকাশ করা হয়।এই মাধ্যাকর্ষণ  বা অভিকর্ষজ ত্বরণের (g) প্রভাবে কোনো বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে তার গতিশীল অবস্থায় নিম্নমুখী পতন ঘটে। 
এ ধরণের পড়ন্ত বস্তু পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি (1564-1642) তিনটি সূত্র আবিষ্কার করেন। সেই সূত্রত্রয় নিম্নরুপ :-
প্রথম সূত্র :- স্থির অবস্থান ও একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করবে।
দ্বিতীয় সূত্র :- স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত বেগ ঐ সময়ের সমানুপাতিক। 
তৃতীয় সূত্র :- স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দুরত্ব অতিক্রম করে তা ঐ সময়ের বর্গের সমানুপাতিক। 
 
প্রথম সূত্রের ব্যাখ্যা:-
                                       একই উচ্চতা থেকে কোনো দুটি  বস্তুকে ছেড়ে দিলে একই সময়ে নিচে পড়বে। অর্থাৎ এটি বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করে না কিন্তু এটি আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার ব্যস্তানুপাতিক। যেমন :- এক টুকরো কাগজ এবং একটি ছোট পাথর যদি উপর থেকে ছেড়ে দেওয়া যায় তাহলে দেখা যায়, পাথরটি আগে এবং কাগজটি পরে নিচে পড়ে। এটি ঘটে বাতাসের বাধার কারণে। বস্তু যত  হালকা হবে তার উপর বাতাসের চাপ তত বেশি অনুভূত হবে। 
 
দ্বিতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা:-
                                         দ্বিতীয় সূত্রটি “g”- এর কারণে বেগ বৃদ্ধির সূত্র। আদিবেগ “u”   এর মান 0 হলে বেগ “v” এর সমানুপাতিক। 
 
তৃতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা:-
                                        তৃতীয় সূত্রটি হচ্ছে অতিক্রান্ত  উচ্চতা “h” এর সূত্র। এখানে শেষবেগ “v” এর মান 0 ধরলে অতিক্রান্ত উচ্চতা t(সময়) এর বর্গের সমানুপাতিক। 
এদের গাণিতিক মান নিম্নরূপ:-
 
কিন্তু এখন কথা হচ্ছে, পৃথিবী নিজেও মহাবিশ্বে ভাসমান তবে পৃথিবীকে কেন কোথাও পড়তে দেখা যায় না? এর উত্তর অনুধাবন করা আমাদের মতো নগন্য মনুষ্যকূলের কর্ম নয়।আমার নিজস্ব মতানুযায়ী, এটিকে এক কথায় বলা চলে, “কূদরত কা কারিশমা “। পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক বস্তু-ই ” কূদরত কা কারিশমা ”  আর এই কূদরত অর্থাৎ প্রকৃতির সৃষ্টিকারী একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত আর কেউ নন। আর স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টিকারীর নিকট আপন সৃষ্টি আপনার চেয়েও অধিক প্রিয়।সেহেতু, সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসার জন্য তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। কারণ সৃষ্টিকর্তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত তৃপ্তি নিহিত। 
 
১৭/০৬/২০২২ খ্রিষ্টাব্দ
সংবাদটি শেয়ার করুন