বিশ্বজিৎ সাহা’র বিরুদ্ধে মামলা এবং মুক্তধারা
মুক্তধারার পথচলা থেমে যাবেনা
শিতাংশু গুহ, ২রা ডিসেম্বর ২০২১, নিউইয়র্ক।। বিশ্বজিৎ সাহা’র বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে মামলা হয়েছে। হতেই পারে, এদেশে মামলা কোন ব্যাপার না, মামলা আদালতের বিষয়, আদালতে নিস্পত্তি হবে, এনিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই? মুক্তধারার স্বত্বাধিকারী বিশ্বজিৎ সাহা মহাপুরুষ নন, দোষেগুণে মানুষ, তাঁর কিছু গুন্ আছে, তেমনি আছে কিছু দোষ, বদনাম, সবারই তা আছে, থাকে। প্রবাসে বিশ্বজিৎ সাহা এমন একটি কাজ করেছেন, যা অন্যরা কেউ করতে পারেনি, সুতরাং বিশ্বজিৎ খারাপ? বিশ্বজিৎ কবি নন, সাহিত্যিক নন, কিন্তু দুই বাংলার বাইরে বাংলা ভাষার সম্প্রসারণে বিশ্বজিতের মুক্তধারা এক ও অনন্য।
ঢাকার বাইরে নিউইয়র্কে প্রচন্ড শীতের মধ্যে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরী করে মধ্যরাতে মহান একুশ পালন করা যায়, বা ঢাকার আদলে নিউইয়র্কে একটি ‘বইমেলা’ করা যায়, তিন দশক আগে এ উদ্ভট চিন্তা বিশ্বজিৎদের মত পাগলদের মাথা থেকেই আসে। ‘বিশ্বজিতদের’ বলার কারণ হচ্ছে, তাঁর সাথে আরো কিছু মানুষ ছিলেন এবং আছেন, আমিও প্রথমদিন থেকেই ছিলাম, বা আছি। আগেই বলেছি, বিশ্বজিৎকে মহাপুরুষ বানানোর কোন ইচ্ছে নেই, তবে তাঁর অবদান স্বীকার করতে কুন্ঠা কোথায়? যাঁরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাঁরা ভুঁইফোড় নন, সংগঠিত, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা মুক্তধারাকে ‘বাঁশ’ দিচ্ছেন।
প্রবাস থেকে আজকাল অনেকে একুশ পাচ্ছেন, একটু চোঁখ বুঝে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এঁরা প্রায় সবাই কোন না কোনভাবে মুক্তধারার সাথে যুক্ত ছিলেন বা আছেন। অর্থাৎ মুক্তধারা এদেরকে প্রভাবিত বা উৎসাহিত করেছে বাংলার প্রতি অনুরাগী হতে, বা এঁরা ‘ঢোলের বারি’ শুনে উৎসাহী হয়েছেন। মিডিয়ার জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশ্বজিৎ বা মুক্তধারারও ‘একুশ’ পাওয়া উচিত ছিলো, এখনো হয়নি, হবে তা নিশ্চিত, ঠেকিয়ে রাখা যাবেনা। বিশ্বজিতের পক্ষে যেমন প্রচুর মানুষ আছেন, বিপক্ষের সংখ্যাটা কম নয়, এবং এঁরা শুধু স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি বলে সাফাই গেয়ে লাভ নেই, এদের মধ্যে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’-এর সংখ্যাটা বেশি।
বিশ্বজিৎকে যাঁরা ‘র’ বা ঐক্য পরিষদী, বা ইস্কন বলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রসূত মন্তব্য করছেন, এঁরা সেই পুরাতন পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি। এদের জন্যেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলায় পাকিস্তানী পতাকা উড়ে? নিয়াজী বলেছিলেন, বাঙ্গালী ললনাদের গর্ভে পাকিস্তানী বীজ ঢুকিয়ে দাও, তাঁরা কিছুটা সফলও হয়েছেন বলেই আমরা এসব শুনছি বা দেখছি, তবে এঁরা সংখ্যায় বেশি নন? বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বজিৎ সাহার পক্ষে মুসলমানরা এগিয়ে এসেছেন, হিন্দুরা সংখ্যায় কম? মুক্তধারার তিন দশকের কর্মকান্ডের পক্ষে এটি পুরুস্কার, সৃজনশীল সাহিত্য কর্মের জন্যে এর প্রয়োজন ছিলো।
দুই বাংলার বই পাড়ায় বা প্রকাশনা শিল্পে বিশ্বজিৎ সাহা একটি পরিচিত নাম। কারণ তিনি দুই বাংলার সাহিত্যমোদীদের একত্রিত করতে পেরেছেন। আমরা হুমায়ন আহমদ ও সমরেশ মজুমদারকে একমঞ্চে দেখেছি। দুই বাংলার প্রকাশকদের একসাথে বই-ষ্টল দিতে দেখেছি। বিশ্বের বেশ ক’টি শহরে এখন বইমেলা বা সাহিত্য সম্মেলন হয়, আগে হতোনা, আমেরিকার মুক্তধারা এই পথটি দেখিয়েছে। লন্ডনে বাঙ্গালীদের আগমন বহু আগে থেকে, বইমেলা তাঁরা শিখেছে, নিউইয়র্ক প্রদর্শিত পথ ধরে? কবিগুরু থাকলে খুশি হতেন যে, শতবর্ষ পরে বাঙ্গালীরা বাংলার বাইরে তাঁর কবিতা পড়ছে।
ছেলেবেলায় পড়েছিলাম, ‘লাভজনক নয় জেনেও যাঁরা বই ব্যবসা করেন তাঁরা মহান’। এ আপ্তবাক্য আজকাল অচল। বই ব্যবসা আজকাল লাভজনক, বিশ্বজিৎ মহান, একথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তবে বিদ্যাসাগর মহাশয়’র একটি কথা প্রণিধানযোগ্য, তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের সমাজে ভাল ভাল ছেলেরা ভাল ভাল পাশ করে ভাল চাকুরী নিয়ে ও ভাল বিয়ে করে তাঁদের জীবনের কর্তব্য শেষ করে; আর সমাজের যা কিছু কল্যাণকর তা করে তথাকথিত মন্দ ছেলেগুলো’। কথাগুলো হুবহু নয়, সমার্থক। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। বিশ্বজিতের জন্যেও একথা সত্য।
বিশ্বজিৎ সাহা যখন ‘মহান একুশ’ বা ‘বইমেলা’ শুরু করেছিলেন তখন জানতেন না যে, তিনি নিজের অজান্তে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছেন। নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়া যেমন বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে দেশের সাথে সংযুক্ত রাখছে, মুক্তধারা ও বিশ্বজিৎ সাহা তেমনি বই বা সাহিত্যমোদীদের সাথে একটি সংযোগ ঘটিয়ে দিচ্ছে। শুধুমাত্র এই কারণে হয়তো সময়ের আবর্তে বিশ্বজিৎ ও মুক্তধারা কিছুকাল বেঁচে থাকবেন। মামলা হয়েছে বিশ্বজিৎ সাহার বিরুদ্ধে, সেটি আইনের নিজস্ব নিয়মে চলবে। বিশ্বজিৎ, মুক্তধারা বা বইমেলা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত; মামলার রায় যা-ই হোক, আশা করি, এতে মুক্তধারার পথচলা থেমে যাবেনা। # [email protected];
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান