ফিচার্ড যাপিত জীবন

বাধার দেয়াল থেকে সম্ভাবনার দুয়ারে

৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। সারাবিশ্বে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশাল এক অনুপ্রেরণার নাম নিক ভুজিসিক। ২০১২ সালে টেড-টক এ দেওয়া তার একটি বক্তৃতার বাংলা অনুবাদ কিছুটা সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত আকারে তুলে ধরেছেন তাসনিমুল হাসান 

বাধার দেয়াল থেকে সম্ভাবনার দুয়ারে

আমার নাম নিক ভুজিসিক। জন্ম ১৯৮২ সালে, অস্ট্রেলিয়ায়। ইন্টারনেটের কল্যাণে আমার জীবনের গল্প অনেকের কাছেই হয়তো পৌঁছে গেছে। অনেকেই হয়তো অবাক হয় এটা ভেবে— একজন হাত-পা বিহীন ছেলে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, মানুষকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করছে! আমার গল্পটা আসলে বাধার দেয়ালকে জীবনের অপার সম্ভাবনাময় দরজায় রূপান্তর করার গল্প।

আমি জানি, পৃথিবীতে বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষ আজকের দিনে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাবে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন হয়তো আত্মহত্যা করছে। না চাইলেও আমাদের এই বাস্তবতাগুলোর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমি আমার জীবনে অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। কেউ হয়তো বড় ব্যবসায়ী, আবার কেউ হয়তো অসহায় এতিম। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা সবাই-ই কিছু না কিছুর স্বপ্নে বিভোর। আর এই স্বপ্নই তাদের বাঁচিয়ে রাখে। আমরা আশা করতে ভালোবাসি, কেননা প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে বাধা পার হওয়ার গল্প।

kanae-Miyahara-e1616539366599 (1)স্ত্রীর সঙ্গে নিক ভুজিসিক।

আমার জীবনের প্রতিবন্ধকতাগুলোর জন্য আমি দায়ী নই, এতে আমার কোনো হাত নেই— এটা মেনে নিতে না পারাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় বাধা। আমাকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তা নিয়ে আমি হয় হতাশ হতে পারব অথবা আমি আমার সীমাবদ্ধতাগুলোকেই ভালোবেসে দৃপ্ত পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারব। আর আমার জীবনে এই দু’য়ের মাঝে একটা বেছে নেওয়াটাই ছিল প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আমার জীবনের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না। যে আমাকে স্কুলের বন্ধুরা অবজ্ঞা করত, সেই আমি আজকে সারা পৃথিবীময় ঘুরে বেড়াই। মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে চেষ্টা করি। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাগুলো আমার সঙ্গে রয়ে গেছে। কিন্তু আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে। জীবনের অনেকগুলো বছর আমি আশাবাদী হওয়ার চেষ্টা করেছি, সুখী হতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। চারপাশের মানুষের নেতিবাচকতাগুলো আমাকে জীবন সম্পর্কে নিরাশাবাদী করে তুলেছিল। মাত্র আট বছর বয়সে আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। আমার মনে হতো আমি আমার পরিবারের জন্য বিশাল এক বোঝা। তবে আমার মা-বাবা আমাকে ভালোবাসতেন, আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি তাদের কারণেই। আর তা না হলে, আমি আজকের জায়গায় থাকতাম না।

752888ছেলের সঙ্গে নিক ভুজিসিক।

অর্থ-বিত্ত ও বাহ্যিক সৌন্দর্য কখনোই মানুষকে সুখী করে না। আমাদের সুখী করে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ভালোবাসা। ভালোবাসা দিয়ে জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার সত্যগুলোকেও আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। আমি পৃথিবীতে কেন এসেছি এবং আমার করণীয়গুলো কী—তা উপলব্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমার বেছে নেওয়া মূল্যবোধ আমার এবং আমার চারপাশের মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করবে। আপনি জীবনে যা-ই করুন, দিনশেষে সুখী হওয়ার জন্য জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি  করা জরুরি। আমি যদি আমার স্বপ্নগুলোকে বড় করে দেখতে পারি, তবে আপনি কেন পারবেন না? নিজের জীবনের প্রকৃত শান্তির জায়গাটা খুঁজে বের করুন। তবেই আপনার দেয়ালগুলো হয়ে উঠবে সম্ভাবনার দুয়ার।

-ইত্তেফাক
সংবাদটি শেয়ার করুন