জমে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই। চলছে আগাম ভোটযুদ্ধ। আনুষ্ঠানিক ভোটের আর মাত্র ১২ দিন বাকি। শেষ ধাপের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছে দলগুলো। একের পর এক রাজ্য দখলে ছুটছেন প্রার্থীরা। আক্রমণ হানছেন প্রতিপক্ষের ওপর। ফোটাচ্ছেন কথার ফুলঝুরি, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
দিনরাত এক করে প্রচারণা চালাচ্ছে দুই দলই। ‘অযোগ্য’ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎখাত করতে মরিয়া বিরোধী নীলশিবির। অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের মতো জয় নিশ্চিত করতে এতটুকু ছাড় দিচ্ছে না ট্রাম্পের লালশিবিরও। তবে এবার সব জনমত জরিপই ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনকে এগিয়ে রাখছে। সিএনএনের সর্বশেষ জরিপও বলছে একই কথা।
জরিপ মতে, মোট ৫০টি রাজ্যের ২৩টিই এখন নীল দুর্গ। অর্থাৎ এই রাজ্যগুলোতে নিশ্চিত জয় পেতে যাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। অন্যদিকে ২১টি রাজ্যে রিপাবলিকানদের লালকেল্লা। এই রাজ্যগুলোতে জয় অনেকটাই নিশ্চিত ক্ষমতাসীনদের। বাকি ছয় রাজ্যকে এবারের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা রণক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জরিপ বিশেষজ্ঞরা। এই ছয় রাজ্যের হাতেই হোয়াইট হাউসের চাবি। কাকে ভোট দেব- ট্রাম্প নাকি বাইডেন? ভোট দিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা এ রাজ্যগুলোর ভোটাররাই এবার দুই প্রার্থীর ভাগ্যবিধাতা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে বড় কারিশমা হল ইলেক্টোরাল কলেজ বা ইলেক্টোরাল ভোট। জনগণের সরাসরি ভোটে নয়, বরং ইলেক্টোরাল ভোটে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট। ৫০টি রাজ্যে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে দরকার ২৭০টি। কোন প্রার্থী কতটা ভোট পেতে যাচ্ছেন, জনমত জরিপের ওপর ভিত্তি করে সেটাই বারবার সামনে আনছে দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। নির্বাচনের ডেডলাইন ৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে সম্প্রতি ‘রোড টু ২৭০’ শীর্ষক ইলেক্টোরাল ম্যাপ প্রকাশ করেছে সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের সব রাজ্য নিয়ে একটা নির্বাচনী মানচিত্র দেখানো হয়েছে তাতে। রাজ্যগুলোর কোনোটা গাঢ় নীল, কোনোটা টকটকে লাল। আবার কোনোটা ফ্যাকাশে নীল বা ফ্যাকাশে লাল। কোনোটা আবার বেগুনি। এভাবে অন্তত ২৩টি রাজ্যকে (সলিড ডেমোক্রেটিক) গাঢ় নীল দেখানো হয়েছে। এই রাজ্যগুলোই ডেমোক্রেটিক ঘাঁটি। টকটকে লাল দেখানো হয়েছে ২১টি রাজ্যকে (সলিড রিপাবলিকান) যেখানে জয় পেতে যাচ্ছে রিপাবলিকানরা। কয়েকটা রাজ্যের আগেকার নীল রং ফিকে হতেও শুরু করেছে। অর্থাৎ এই রাজ্যগুলোতে ক্রমেই নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা। লাল রংও ফিকে হয়ে যাচ্ছে কোনো কোনো রাজ্যে। এর মানে এসব রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে রিপাবলিকানরা। আর হাতেগোনা অর্থাৎ ছয়টি রাজ্যকে দেখানো হয়েছে বেগুনি হিসেবে।
এই রঙের রাজ্যগুলোই ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড। অর্থাৎ এই ছয় রাজ্যেই ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে। এই রঙবদলের প্রক্রিয়ায় মার্কিন রাজনীতিতে এবার মেরুকরণের ধারা সুস্পষ্ট। এমনকি ২০১৬-র তুলনায় বেশ কিছু রাজ্যে এই বিবর্তনের ফল চোখে পড়ার মতো। ফলে যতই দিন যাচ্ছে বাইডেনের পাল্লা ততই ভারি হচ্ছে। অন্য দিকে হালকা হচ্ছে ট্রাম্পের পাল্লা। সিএনএনের ইলেক্টোরাল ম্যাপ ‘রোড টু ২৭০’র সর্বশেষ হিসাব মতে, ডেমোক্রেটিক প্রার্থী পাচ্ছেন ২৯০ ইলেক্টোরাল ভোট আর ট্রাম্প মাত্র ১৬৩ ভোট। বাকি ৮৫টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ ৬টি রাজ্যে। অর্থাৎ ব্যাটল গ্রাউন্ডের ইলেক্টোরাল ভোট ছাড়াই বাইডেনকে এগিয়ে রাখছে সিএনএন।
সিএনএনের ইলেক্টোরাল ম্যাপ অনুযায়ী ট্রাম্প শিবির যে রাজ্যগুলোতে নিশ্চিত জয় পেতে যাচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে আলাবামা (ইলেক্টোরাল ভোটসংখ্যা ৯), আলাস্কা (৩), আরকানসাস (৬), ইদাহো ((৪), ইন্ডিয়ানা (১১), কানসাস (৬), মন্টানা (৩), নেব্রাস্কা (৬টির মধ্যে ৩টি), নর্থ ডাকোটা (৩), ওকলাহোমা (৭), কেনটাকি (৮), লুইজিয়ানা (৮), মিসিসিপি (৬), মিসৌরি (১০), সাউথ ক্যারোলিনা (৯), সাউথ ডাকোটা (৩), টেনেসি (১১), টেক্সাস (৩৮), উতাহ (৬), ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া (৫) ও উয়োমিয়াং (৩)। আর নিশ্চিত ডেমোক্র্যাট রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যারিজোনা (১১), ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫), কলোরাডো (৯), কানেকটিকাট (৭), ডেলওয়ার (৩), ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া (৩), হাওয়াই (৪), ইলিনোইস (২০), নেব্রাস্কা (৫), নেভাদা (৬), নেউ হ্যাম্পশায়ার (৪), নিউ জার্সি (১৪), নিউ মেক্সিকো (৫), নিউইয়র্ক (২৯), অরেগন (৭), পেনসিলভানিয়া (২০), রোড আইল্যান্ড (৪), মেইন (৪), মেরিল্যান্ড (১০), ম্যাসাচুসেটস (১১), মিশিগান (১৬), মিনেসোটা (১০), ভারমন্ট (৩), ওয়াশিংটন (১২) ও উইসকনসিন (১০)।
অতীতের ভোট দেয়ার গতিপ্রকৃতি, এ মুহূর্তে ভোট দেয়ার হার, জনমিশ্রণের অনুপাত এবং ভোটারদের পরিবর্তনশীল মনোভাব বিবেচনায় ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, আইওয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইয়ো ও মেইন- এই ৬টি রাজ্যকে মূল ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিএনএন। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির মতে, এই ছয়টি রাজ্যেই হবে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকানদের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের আসল লড়াই। অন্যান্য জনমত জরিপে এ রাজ্যগুলোর বেশির ভাগেই ৭ থেকে ৯ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এনবিসি ও টেলিমুন্দোরের জনমত জরিপেও দেখানো হয়েছে জো বাইডেন এগিয়ে আছেন। টুগেদার নামের প্রতিষ্ঠানটির জরিপে নারীদের মধ্যে বাইডেন এগিয়ে আছেন ১১ পয়েন্টে আর পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন ৭ পয়েন্টে। চলমান আগাম ভোটেও এগিয়ে আছে ডেমোক্র্যাটরা।
প্রসঙ্গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একক কোনো জাতীয় নিয়মের ভিত্তিতে হয় না। প্রতিটি রাজ্য তার নিজস্ব নিয়ম ও আইনের ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। মেইন ও নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি ৪৮টি রাজ্যে ‘উইনার টেকস অল’ অর্থাৎ বিজয়ীই সব পাবে-এই নীতি অনুসৃত হয়। মানে একটি রাজ্যে যে প্রার্থী বেশির ভাগ পপুলার ভোট পান, সে রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট তার। মেইন এবং নেব্রাস্কার বেলায় এ সরল নিয়ম কাজ করে না।
এই দুই রাজ্যে যে প্রার্থী পপুলার ভোটে জয়লাভ করেন, তিনি পান রাজ্যের দুই সিনেটরের বিপরীতে দুটো ইলেক্টোরাল ভোট। বাকিগুলো নির্ভর করে রাজ্যজুড়ে আনুপাতিক প্রাপ্ত ভোটের ওপর। অর্থাৎ যে প্রার্থী যে কয়টি কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টে জেতেন, তিনি পান আরও ততটি ইলেক্টোরাল ভোট। মেইনে রয়েছে চারটি ইলেক্টোরাল ভোট। এর মধ্যে দুটি যাবে রাজ্যের বিজয়ী প্রার্থীর ঝুলিতে। বাকি দুটির একটি করে পাবেন দুই কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের দুই বিজয়ী। আর নেব্রাস্কায় রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে দুটি পাবে রাজ্যের বিজয়ী। আর তিনটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের বিজয়ী।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন