কানাডার সংবাদ

কানাডার শহরে শহরে সনাতন বাঙালির প্রাণের দুর্গোৎসব শুরু

বাঙালির প্রাণের দুর্গোৎসব

কানাডার শহরে শহরে সনাতন বাঙালির প্রাণের দুর্গোৎসব শুরু

আজ কানাডার বিভিন্ন শহরে সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ  প্রাণের ও আনন্দের উৎসব দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

অন্যান্য বছরের মতো তিথী অনুসারে যাবতীয় পুজো শুরু হলেও বিগত বছরের মতো পুজোমন্ডপগুলোতে তথা মন্দিরে আবালবৃদ্ধবণিতার ঢল নামবে না। ঢাকের বাজনা হয়তো বাঁজবে, উলুধ্বণি আর ঘন্টার শব্দও থাকবে, সন্ধ্যা আরতির পাশাপাশি নানাবিধ ভোগ, নৈবেদ্য, উপচার, ধূপধুনার গন্ধ, পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ সবই থাকবে  শুধু বিগত বছরের মতো প্রবাসীদের মিলনমেলায় রকমারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মালা থাকবে না। কানাডার শহরে শহরে বাঙালির প্রাণের দুর্গোৎসব শুরু হলেও বলতে গেলে এবছর কোভিডের কারনে নিরানন্দ এই প্রাণের উৎসব।

অবিশ্বাস্য শব্দহীন বিশ্বযুদ্ধ কোভিড-১৯ করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সারা বিশ্বের মতো কানাডার বিভিন্ন শহরে মলিনবদনে উৎসববিহীন পুজো অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মন্দিরে কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শক, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কড়া নজরদারীতে পূজাপার্বণ অনুষ্ঠিত হবে। মন্দিরের ভিতরে কয়েক শত মানুষের ধারণ ক্ষমতা থাকলেও এবছর মাত্র ২৫ জন মন্ডপে থাকার অনুমতি রয়েছে। তন্মেধ্যে পুরোহিত, পূজার সহযোগিরা এবং সিকিউরিটিসহ প্রতি আধ ঘন্টায় মাত্র ২৫জন, ফলে শুধু ১৫জন দর্শনার্থী আধা ঘন্টার জন্য মন্দিরে অবস্থান করতে পারবেন। পুরো পুজোর দিনগুলোতে যারা যাবেন দেবীদর্শনে সবাইকে পূর্বেই অনলাইনে কিংবা ফোনে সময় নির্ধারণ করে যেতে হবে। অন্যান্য বছরের মতো কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দলবদ্ধভাবে অঞ্জলি নেওয়া হবেনা। মাস্ক অবশ্যই থাকতে হবে এবং একজন অন্যজন থেকে দুমিটার দুরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।

মন্ট্রিয়লের সনাতন ধর্ম মন্দিরের পুরোহিত শ্রী রীতীশ চক্রবর্তী সিবিএনএকে জানান আমরা আশা করব স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই পূজা-অর্চনা করবেন। কভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সাবধান থাকার পাশাপাশি আমাদের সবাই সজাগ থাকতে হবে কোনক্রমেই যেনো সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্য বিধি লংঘন না হয়। আর সেজন্যে সনাতন ধর্ম মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবক কর্মকর্তাবৃন্দরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যবিধির প্রতিটি পর্যায় মেনেই দেবী দর্শন এবং পূজা অর্চনায় যোগ দেওয়ার সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে।

অপরদিকে মন্ট্রিয়লের হিন্দু মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শ্রী কৃপেশ পাল বলেন আগামী ২১শে অক্টোবর বুধবার মহাষষ্ঠী থেকে ২৫শে অক্টোবর  রবিবার  বিজয়া দশমী পর্যন্ত মন্ট্রিয়ালস্থ বাংলাদেশ হিন্দু মন্দিরে শারদীয় দুর্গা পুজা ২০২০ এর যাবতীয় মাঙ্গলিক কর্মাদি সনাতন বৈদিক শাস্ত্রাণুসারে সম্পন্ন করা হবে। তবে চলমান মহামারী কোভিড-১৯ উপলক্ষে কুইবেক প্রাদেশিক সরকার প্রণীত জন-স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ক নির্দেশিকা সুস্পষ্ট ও  সুনির্দিষ্ট ভাবে পালনের জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ সবাইকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছে।

১. কোভিড ১৯ এ সংক্রমিত বা তাঁর সান্যিধ্যের ব্যাক্তিবর্গ এবং উপক্রমিত (সর্দি, কাশী, জ্বর, গলা ব্যাথা, স্বাদ ও গন্ধহীন অনুভুতি প্রভৃতি) ব্যাক্তিবর্গকে মন্দিরে না আসার বিশেষ অনুরোধ জানান হচ্ছে।

২. সর্বদা মুখাবরণ (Mask) ব্যবহার বাধ্যতামুলক।

৩. পারষ্পারিক দূরত্ব দুই মিটার বজায় রাখা বাধ্যতামুলক; তবে একই ঠিকানার ও পরিবারের সদস্যবৃন্দ একসাথে মন্দিরের নির্ধারিত স্থানে বসতে পারবেন ।

৪. মন্দিরে কখনোই ২৫ জনের বেশি লোক (পুরোহিত ও স্বেচ্ছা সেবক সহ) অবস্থান করতে পারবেন না।

৫. পূজায় আগমনেচ্ছু ভক্তবৃন্দকে আগে থেকেই ইপ্সিত আগমনের তারিখ এবং সুনির্দিষ্ট সময় মন্দির কর্তৃপক্ষকে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

৬. মন্দিরে প্রবেশ দ্বার স্পর্শ করার পুর্বেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৭. দুপুরে অঞ্জলি নেয়া সহ মন্দিরে আধা ঘন্টা অবস্থান করা যাবে।

পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ, প্রসাদ ও বিজয়া বিষয়ক সিদ্ধান্তঃ

– সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭.৩০ টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা পর পর ১৫ থেকে ২০ ব্যাক্তিকে একসাথে অঞ্জলি প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রসাদ শুধু Takeout কন্টেইনারে দেয়া হবে।

ভক্তবৃন্দ যারা বিনা এপয়েন্টমেন্টে আসবেন  তাদের জন্য বিশেষ  তাবুর  ব্যবস্থা করা হয়েছে মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে । সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে প্রবেশের জন্য তাবুতে অপেক্ষা করতে হবে ।

কানাডার প্রায় সবক’টি প্রদেশ আলবার্তা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, মনিটোবা, নিউ ব্রুনসউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডার, নোভা স্কশিয়া, অন্টারিও, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ, ক্যুইবেক, এবং সাসকাচুয়ানসহ প্রায় প্রতিটি প্রভিন্সের শহরগুলোতে বাঙালিদের বসবাস এবং কমবেশী সেখানে সবধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিশেষকরে কানাডার টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ভ্যানকুভার, ক্যালগেরি, সাসকাচুয়ান, মনিটোবাসহ বেশ কয়েকটি শহরে একাধিক পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

ক্যানাডার টরন্টো এবং ক্যালগেরিতে কিন্তু এবারের আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা করোনাকালে শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে সব আয়োজন। বয়স্ক ব‌্যক্তি ও শিশু ইচ্ছা থাকলেও এবার পূজায় আসতে পারবে না। তাদের জন্য ভার্চুয়ালি অঞ্জলির ব্যবস্থা থাকবে সব আয়োজনে।

ক্যালগেরির “আমরা সবাই” এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রুপক দত্ত বলেন, আসছে শুভ দিনে মায়ের আশীর্বাদে দেশে ও বিশ্বের মধ্যে শান্তি বিরাজ করবে, আগামী দিনগুলো আরো সুন্দর হয়ে উঠবে, করোনাসহ সকল পাপ ও পঙ্কিলতা দূর হয়ে মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ পূজা পরিষদ অব ক্যালগেরির এক্সকিউিটভি কমিটির সদস্য প্রকৌশলী সুব্রত বৈরাগী বলেন, দুর্গতি বিনাশ করার জন্য তার আবির্ভাব। তাই দেবির নামকরণ ‘র্দুগা’। এ বছর আমরা সবাই মিস্ করবো গতবারের মিলনমেলাকে। তবে আমরা বিশ্বাস করি দেবী সর্বত্র আছেন, মঙ্গলের বার্তা দিয়ে তিনি পৃথিবীকে শান্তিময় করে তুলবেন।

টরন্টো দুর্গাবাড়ি থেকে পূজার নিয়মকানুনসহ প্রবাসীদের অভিমত ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রচার করছে। সেখানেও কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগের সকল নিয়ম মেনেই পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন