আমাদের মধ্যে অনেকেই কাজের কারণে দেরি করে বাড়ি ফেরেন বা রাত জেগে থাকেন। তখন রাত ৮টার পরেই ডিনার সারতে হয়। কিন্তু নিয়মিত দেরিতে রাতের খাবার খাওয়ার প্রভাব শুধু ঘুমের ওপরই নয়, এটি শরীরের হজম, মেটাবলিজম এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। রাতে দেরিতে খাওয়া শরীরের স্বাভাবিক খাদ্যপ্রক্রিয়াকে বদলে দেয়। শোয়ার সময়ের কাছাকাছি খাবার খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, চর্বি সঞ্চয় ও দেহঘড়ি বিঘ্নিত হয়। এর ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা ও বিভিন্ন মেটাবলিক ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
এতে বলা হয়, এই অভ্যাস ছয় মাস ধরে চললে এর প্রভাব জমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। ফিটনেস ডায়েটিশিয়ান ও পুষ্টিবিদ আশলেশা জোশি জানান, রাতে দেরিতে খেলে শরীরের স্বাভাবিক মেটাবলিক রিদম নষ্ট হয়। সূর্যাস্তের পর হজমক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে এবং গ্লুকোজ টলারেন্সও কমে যায়। ফলে কেউ যদি কয়েক মাস ধরে রাত ৮টার পর খাবার খান, তাহলে সেই খাবারের শক্তির বড় অংশ শরীরে চর্বি হিসেবে জমে যায়, ক্ষয় হয় না। তিনি আরও বলেন, এই অভ্যাস দীর্ঘদিন চললে ওজন বৃদ্ধি, রক্তে শর্করার ওঠানামা, খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বৃদ্ধি, গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেহঘড়ির ভারসাম্যও নষ্ট হয়, যা মেটাবলিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। জোশির মতে, হ্যাঁ, রাতে দেরিতে খাওয়ার ফলে শরীরে উল্লেখযোগ্য হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে। রাতের বেলায় ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমে যায়, ফলে শরীর তখন রক্তে শর্করা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পাশাপাশি লেপটিন, যা তৃপ্তির সংকেত দেয়, সেটির কার্যকারিতাও কমে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। অন্যদিকে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন)-এর মাত্রা তখনও উঁচু থাকে, যা চর্বি জমাতে, ক্ষুধা বাড়াতে এবং মেটাবলিক সমস্যা তৈরি করতে ভূমিকা রাখে। এই হরমোনীয় ভারসাম্যহীনতা কয়েক মাস ধরে চললে একটি চক্র তৈরি হয়- অতিরিক্ত ক্ষুধা, খারাপ ঘুম এবং ওজন কমার পরিবর্তে বাড়তে থাকা।
যদি কাজের বা জীবনযাত্রার কারণে দেরিতে খাওয়া এড়ানো না যায়, তবে কিছু কৌশল মেনে চললে এর ক্ষতি কমানো সম্ভব। হালকা ও পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন- যেমন চর্বিহীন প্রোটিন, সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার। তেল, মাখন, চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট কম রাখুন খাবার তালিকায়। কারণ এগুলো রাতে হজম হতে সময় লাগে। খাওয়া ও ঘুমের মধ্যে কমপক্ষে দুই ঘণ্টার বিরতি রাখুন, যাতে হজম সম্পূর্ণ হয়। খাবারের সময় নিয়মিত করুন। যদিও দেরি হয়, প্রতিদিন একই সময়ে খেলে দেহঘড়ি কিছুটা মানিয়ে নেয়। দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পানি পান, ক্যাফেইন নিয়ন্ত্রণ এবং পরদিন সকালে সুষম ব্রেকফাস্টের অভ্যাস গড়ে তুলুন। এসব অভ্যাস হরমোন ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। জোশি বলেন, দেরিতে খাওয়া একান্তই প্রয়োজন হলে, খাবারের গুণগত মান ও সময়ের ব্যবধানের দিকে নজর দিন। এতে শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ, ঘুমের মান এবং শক্তির ভারসাম্য অনেক ভালো থাকবে।
সূত্র : মানবজমিন
এফএইচ/বিডি
CBNA24  রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।

 
			

