ফিচার্ড লেখালেখি

৭টি শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলোর ( জি–৭) বার্ষিক সম্মেলন প্রসঙ্গে

৭টি শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলোর ( জি–৭) বার্ষিক সম্মেলন প্রসঙ্গে | বিদ্যুৎ ভৌমিক

গত ১১ জুন থেকে ১৩ জুন শুক্রবার থেকে  রোববার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী জি–৭ অর্থাৎ বিশ্বের প্রথম সারির ৭টি শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলোর ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্যর দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের  কর্নওয়ালে। এই সাতটি দেশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ। জি ৭ (গ্রুপ অব সেভেন) দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও ইতালি নিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশগুলোর একটি আন্তর্জাতিক ক্লাব। যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের কারবিস বেতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাগতিক দেশের সরকার প্রধান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ছাড়াও এ সম্মেলনে অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রো, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি।  জি ৭ এর প্রথম সন্মেলন শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও জি ৭ এ প্রতিনিধিত্ব করে আসছে কয়েক বছর । ২০১৮ সালের রিপোর্টে , ৭টি  শিল্পোন্নত ও ধনী দেশ বৈশ্বিক সম্পদের শতকরা ৫৮ ভাগের প্রতিনিধিত্ব ($৩১৭ ট্রিলিয়ন ডলার)করে এবং বৈশ্বিক জাতীয় উৎপাদনের (Global GDP) ৪৬% এর মালিক শিল্পোন্নত ও ধনী দেশ।

আগামীতে নতুন কোনও বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে জি ৭ নেতারা ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন এই জি ৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে। কারবিস বে ডিক্লারেশন অন হেলথ নামের এই ঘোষণাপত্রের পরিকল্পনায় রয়েছে রোগনির্ণয়, চিকিৎসা এবং টিকা উদ্ভাবন ও অনুমোদনের সময়সীমা ১০০ দিনের মধ্যে নামিয়ে আনা, সম্ভাব্য সংক্রামক রোগের আবির্ভাবের ওপর নজরদারির জন্য বৈশ্বিক নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করা, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সক্ষমতা বাড়ানো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংস্কার এবং  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। ঘোষণাপত্রে সংক্রামক রোগের ওপর নজরদারির এই ব্যবস্থাকে ‘প্যানডেমিক রাডার’ বলে অভিহিত করা হয়।

গত ৪বছরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপশাসন এবং মিত্র ও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর  প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈরী ও বিদ্বেষপ্রসূত আচরণের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা ও জি ৭ দেশগুলোর সাথে আমেরিকার সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারীতে ক্ষমতাসীন হয়ে নূতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিএ ও গনতান্ত্রিক দেশগুলোর  সাথে আমেরিকার সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং এরই মধ্যে মিএদের মাঝে আস্হার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গতিশীল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা,  করোনাভাইরাস রুখতে গতিশীল পরিকল্পনা ও দ্রূত ভ্যাকসিন ব্যবসহার জন্য আমেরিকার জণগনের মাঝেও নূতন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আস্হার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

জি৭ সম্মেলন শেষে ১৩ জানুয়ারী রবিবার স্বাগতিক দেশ হিসাবে জি৭ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলো যে ‘জাতীয়তাবাদী আচরণ’ করছিল, তা খারিজ করেছেন জি–৭–এর নেতারা। তিনি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে টিকা কর্মসূচি চালাতে জি-৭-এর দেশগুলো যে পরিমাণ ডোজ সরবরাহ করবে, এর মধ্য দিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিষয়টি প্রকাশ পাবে। করোনাভাইরাসের জন্য দুই বছর পর জি–৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এ সম্মেলন প্রসঙ্গে বরিস জনসন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় স্বার্থপরতা, জাতীয়তাবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসব—এ জন্য সারা বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়েছিল। মহামারি মোকাবিলায় স্বার্থপরতা, জাতীয়তাবাদী আচরণ আমাদের ক্ষতি করেছে। পুরো বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়েছিল এ জন্য  আমরা আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা, আমাদের অর্থ ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ব্যবহার করে এই কোভিড-১৯ মোকাবিলা করব।’ জি-৭ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মহামারি নির্মূল ও ভবিষ্যৎ মহামারি ঠেকাতে বৈশ্বিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ধনী দেশের নেতারা। এ পদক্ষেপ শিগগিরই শুরু হবে। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব জনসাধারণকে নিরাপদ টিকা দেওয়া হবে।

জি–৭ সম্মেলনে এই দেশগুলোর পক্ষ থেকে আগামী বছর নাগাদ দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ দুষনের বিরুদ্ধে কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল জোগাড়ের অঙ্গীকার করেছেন ধনী ও শিল্পোন্নত জি–৭ নেতারা।

এর আগে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত জি-৭ নেতাদের সম্মেলনের পর জোটের পক্ষ থেকে চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর সম্প্রদায় ও হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের ওপর চীনের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করা হয়। জোটের অন্যতম শরিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করুন।’জি-৭ এর এর নেতৃবৃন্দ আরও বলেছে, ‘আমরা আমাদের মূল্যবোধ তুলে ধরব, যার মধ্যে রয়েছে চীনকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা মেনে চলতে আহ্বান জানানো।’ এখানে উল্লেখ্য যে, চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লংঘনের জন্য বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ঘোষণা করেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশের বন্দীশিবিরগুলোয় লক্ষ লক্ষ উইঘুরকে আটকে রেখেছে চীন – যেখানে বন্দীদের ওপর নির্যাতন, জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে জি–৭–এর নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন শেষে ১৩ জুন যে বিবৃতি দেওয়া হয় এতে আরও বলা হয়েছে, ‘নিজের মাটিতে রাশিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দ্রুত তদন্ত এবং এই অস্ত্র ব্যবহারের বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যার দাবি জানাচ্ছি আমরা। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজ, সংবাদমাধ্যমের ওপর পদ্ধতিগত দমন–পীড়ন বন্ধ এবং এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত ও শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। রাশিয়া থেকে চালানো সাইবার হামলা ও অন্যান্য সাইবার অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনারও জোর দাবি জানাচ্ছি।’অনেক সাইবার হামলা হচ্ছে মুক্তিপণের জন্য। প্রথমে হামলাকারীরা সাইবার হামলা চালিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ডেটা নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং সেগুলো ফিরিয়ে দিতে মুক্তিপণ দাবি করে। এই হামলা ‘র‌্যানসমওয়্যার অ্যাটাক’ নামেও পরিচিত।

তথ্য: আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ

৭টি শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলোর ( জি–৭) বার্ষিক সম্মেলন প্রসঙ্গে | বিদ্যুৎ ভৌমিক লেখকঃ সাবেক অধ্যাপক, লেখক ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা | ১৪ জুন ২০২১ খ্রী



সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন