ট্রাম্প নিশ্চিত করলেন: শনিবার থেকে কানাডীয় আমদানিতে বড় শুল্ক, তেলের অন্তর্ভুক্তি অনিশ্চিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ নিশ্চিত করেছেন যে তিনি শনিবার থেকে কানাডীয় আমদানির ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি কার্যকর করবেন, যদিও ফেডারেল সরকার সীমান্ত সুরক্ষাকে জোরদার করার মাধ্যমে তার উদ্বেগ সমাধানের চেষ্টা করছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “দেখুন, মেক্সিকো এবং কানাডা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের কখনোই ভালো ব্যবহার করেনি। তারা আমাদের সঙ্গে খুবই অন্যায্য আচরণ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা খুব দ্রুত এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব, কারণ আমাদের তাদের পণ্যের প্রয়োজন নেই। আমাদের নিজেদের পর্যাপ্ত তেল রয়েছে, কাঠ রয়েছে। আমাদের কাছে এই দুটি ক্ষেত্রে প্রায় সবার চেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে।”
শুল্ক আরোপের কারণ
ট্রাম্প বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ মাদক ও অভিবাসী প্রবেশের সংখ্যা এবং কানাডার দেওয়া “বড় ধরনের ভর্তুকি” (যা তিনি বাণিজ্য ঘাটতির সাথে তুলনা করেছেন) এই শুল্কের মূল কারণ।
তিনি প্রথমে নভেম্বরের শেষ দিকে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, দ্বিতীয় মেয়াদের “প্রথম দিনেই” কানাডা ও মেক্সিকো থেকে সব আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। যদিও তিনি গত সোমবার এই পরিকল্পনা স্থগিত রাখেন, তবে নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষরের সময় তিনি বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি নতুন কার্যকর তারিখ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প আরও বলেন, “এই শুল্ক সময়ের সাথে বাড়তেও পারে বা নাও পারে।”
তেলের অন্তর্ভুক্তি অনিশ্চিত
ট্রাম্প বলেন, তেল এই শুল্কের আওতায় থাকবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
প্রথমে তিনি বলেছিলেন, “তেলের এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই,” তবে পরে স্পষ্ট করেন যে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন “আমরা আজ রাতেই এই সিদ্ধান্ত নেব,” ।
কানাডার প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় কানাডার ফেডারেল সরকার বলেছে, প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সব বিকল্প উন্মুক্ত রয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি রপ্তানি বন্ধ করা বা নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি কর বসানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
আলবার্টার প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল স্মিথ এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, “কানাডাকে ট্রাম্পের উদ্বেগ, বিশেষ করে সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে, হুমকি দেওয়ার পরিবর্তে।”
স্মিথের প্রেস সেক্রেটারি স্যাম ব্ল্যাকেট বলেছেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং হোয়াইট হাউস তাদের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর আমরা আরও বলব।”
তিনি আরও বলেন, “প্রিমিয়ার ফেডারেল সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছেন যেন অবিলম্বে একজন যোগ্য ‘বর্ডার জার’ নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা যৌথভাবে সীমান্তে মাদক ও অবৈধ অভিবাসন বন্ধের পদক্ষেপ সমন্বয় করবেন।”
ওয়াশিংটনে কানাডার প্রতিনিধি দল
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি এবং জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডেভিড ম্যাকগিনটি বর্তমানে ওয়াশিংটনে রয়েছেন এবং তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত।
কানাডা ইতোমধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তার উন্নয়নে ১.৩ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে।
বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জোলি বলেন, “আমরা যে কাজ করছি তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কানাডা-মার্কিন সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর, এবং যেকোনো ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হবে।”
একটি সূত্র জানিয়েছে, কানাডার অর্থমন্ত্রী ডোমিনিক লেব্লাং সম্প্রতি ট্রাম্পের বানিজ্য সচিব প্রার্থীর কাছে সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন, যা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ।
প্রতিশোধমূলক শুল্ক পরিকল্পনা
একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার মতে, কানাডার তিন দফার প্রতিশোধমূলক পরিকল্পনা রয়েছে—
১. প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ভোক্তা পণ্য (যেমন কেন্টাকি বোরবন, ফ্লোরিডার কমলার রস) টার্গেট করা হবে।
২. এরপর ৩৭ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো হবে।
৩. প্রযোজ্য হলে, আরও ১১০ বিলিয়ন ডলারের শিল্প ও অন্যান্য পণ্যে বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
“কানাডাকে শক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে” – ডগ ফোর্ড
অন্টারিওর প্রোগ্রেসিভ কনজারভেটিভ নেতা ডগ ফোর্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন।
ফোর্ড সম্প্রতি একটি ক্যাপ পরেছেন, যাতে লেখা ছিল “Canada is not for sale” (কানাডা বিক্রির জন্য নয়)। তিনি বলেছেন, “ট্রাম্প আমাদের দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আমরা প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কানাডা এই লড়াই শুরু করবে না, তবে আমাদের এটি জেতার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”
“সংসদ ফের ডাকুন” – জগমীত সিং
এনডিপি নেতা জগমীত সিং বলেছেন, কানাডার উচিত ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজের রপ্তানি বন্ধ করা।
তিনি সংসদ দ্রুত ডাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা মার্চে সরকার ফেলে দেব, তবে এখনো দুই মাস বাকি। এখনই শ্রমিকদের সহায়তায় আইন পাস করা দরকার।”
সূত্রের বরাত দিয়ে সিটিভি নিউজ জানিয়েছে, ফেডারেল সরকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ পরিকল্পনা করছে, যা শুল্কের মাত্রার ওপর নির্ভর করবে।
-সূত্র: সিটিভি
CBNA24 রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।