শাহাবুদ্দিন মিয়াই হতে পারেন প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জার্মান এমপি
ওমর ফারুক হিমেল জার্মান থেকে।। নির্বাচিত হলে শাহাবুদ্দিন মিয়াই হবেন জার্মানির পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সদস্য।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জার্মানির বুনদেসতাগ বা ফেডারেল পার্লামেন্ট নির্বাচনে পরিবেশবাদী রাজনৈতিক দল গ্রিন পার্টির প্রার্থী হিসেবে একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শাহাবুদ্দিন মিয়া। এই নির্বাচনে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী।
জার্মানির ফেডারেল পার্লামেন্ট বা কেন্দ্রীয় সংসদের ৫৯৮ জন সদস্যের মধ্যে ২৯৯ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। বাকিরা সারা দেশে দলের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হিসেবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে একজন ভোটারকে দুটি ভোট দিতে হয়। একটি সরাসরি তার আসনের সদস্য প্রার্থীকে এবং অপরটি পছন্দের যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলকে। দেশটির ১৬ রাজ্যে ছয় কোটি ৪০ লাখ ভোটার রয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ৫৩টি রাজনৈতিক দলের চার হাজার ৭৮০ জন প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে গ্রিন পার্টির সাহাবুদ্দিন মিয়া নর্দরাইন ভেস্টফালেন রাজ্যের সোয়েস্ট জেলার নির্বাচনী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এর আগে ২০১৭ সালের নির্বাচনে শাহাবুদ্দিন মিয়াই জার্মানির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
তিনি দীর্ঘ প্রায় দুই দশক গ্রিন পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০০৮ সালে তিনি ভ্যার্ল শহরে গ্রিন দলে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ভ্যার্ল শহরের গ্রিন দলের সভাপতি এবং একই সঙ্গে সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি সোয়েস্ট জেলা পরিষদের সদস্য।
গ্রিন পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রিন পার্টি জার্মানির একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা জলবায়ু রক্ষার উদ্যোগ নেওয়ার সকল কর্মসূচি তাদের গঠনতন্ত্রে রেখেছে। তাই একজন পরিবেশপ্রেমী হিসেবে এই দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি।’
গত নির্বাচনে বেশ কয়েকটি রাজ্যে গ্রিন পার্টি বেশ ভালো ফলাফল করলেও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। এবার দলটির সমর্থন কয়েকগুণ বেড়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিন পার্টির চ্যান্সেলর প্রার্থী আনানেলা বেয়ারবকের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তার সঙ্গে জলবায়ু রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া এবারের নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দল ও নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী সাহাবুদ্দিন মিয়ার হিসেবে, গ্রিন দল ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে এবারে সরকার গঠন করবে। তার মতে এবারের নির্বাচন হবে জলবায়ু রক্ষা করার নির্বাচন।
‘আগামী ১০ বছরে যদি জলবায়ু রক্ষার সকল প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে আমাদের পৃথিবী তার কিপ পয়েন্টে পৌঁছে যাবে। অথচ আমাদের দল ছাড়া অন্য কোনো দলের নির্বাচনী ইশতেহারে জলবায়ু রক্ষার বিষয়টি উল্লেখ নেই। জলবায়ু নিয়ে কাজ করা জার্মানি সংস্থাগুলো জলবায়ু রক্ষার দলকে ভোট দিতে অনুরোধ করছে। জলবায়ু রক্ষার ব্যাপারে যারা অত্যন্ত সচেতন, তাদের কাছ থেকে সমর্থনের ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।
তাকে এবং তার দলকে ভোট দেওয়ার জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং জার্মান পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সাহাবুদ্দিন মিয়া। নির্বাচিত হলে পরিবেশ বিপর্যয়, অভিবাসন নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখার ইচ্ছার কথা জানান তিনি।
শাহাবুদ্দিন মিয়া ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে ১৯৭৯ সালে জার্মানিতে পাড়ি জমান তিনি। প্রথম তিন বছর কাজ করেন কারখানায়। ১৯৮৩ সালে ডর্টমুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং মাস্টার্স করেন। ১৯৮৭ থেকে দোভাষীর কাজ শুরু করেন। এরপর ১৯৯২ সাল থেকে নিজের গড়া দোভাষী ও অনুবাদক সংস্থা নিয়ে কাজ করছেন। তার এই সংস্থায় এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার জন্য প্রায় ৫০০ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন।
জার্মানরা ২০২১ সালকে ‘সুপার ভাহল ইয়ার’ বা ‘সুপার নির্বাচন বর্ষ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। নানা দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবারের জাতীয় নির্বাচন। বিষয় করে এঙ্গেলা মার্কেলের ১৬ বছর পর চ্যান্সেলরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আগ্রহ সবারই।
লেখক: জার্মান প্রবাসী সাংবাদিক
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান