সৌদি প্রবাসীদের বিক্ষোভ ! টিকিটের জন্য হাহাকার
নূরে আলম জিকু || দেশে এসে করোনা পরিস্থিতির কারণে আটকা পড়েছিলেন তারা। আশায় ছিলেন পরিস্থিতি ভালো হলে বিমানে চেপে ফিরবেন কর্মস্থলে। সৌদি আরবে ফ্লাইট শুরুর খবরে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন কয়েক হাজার প্রবাসী। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের অনুমতি সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলে সৌদি প্রবাসীদের যাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, কারও ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। কারও ভিসার মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। কারও আকামার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় কর্মস্থলে ফিরতে উদগ্রীব সৌদি প্রবাসীরা ফ্লাইট চালুর খবর শুনে ছুটছিলেন বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসে।
সৌদি এয়ারলাইন্স টিকিট বিক্রিও শুরু করেছে। আগামীকাল থেকে তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আচমকা এক ঘোষণায় সৌদি প্রবাসীদের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে যায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। যদিও রাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জটিলতার অবসান হয়েছে। ২৩শে সেপ্টেম্বর সউদিয়া এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত ফ্লাইট চলবে। ১লা অক্টোবর থেকে ৩টি গন্তব্যে বাংলাদেশ বিমানও সৌদি আরবে ফ্লাইট পরিচালনা করবে। ওদিকে, নির্ধারিত সময়ে টিকিট না পেয়ে এবং বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর তিনটি স্থানে বিক্ষোভ করেছেন সৌদি প্রবাসীরা। তারা জানিয়েছেন, দ্রুতই তাদের সৌদি ফিরতে না পারলে কাজ হারাতে হবে, না হয় ভিসা বাতিল হবে। টিকিট না পেয়ে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পাশে সৌদি এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে, মতিঝিলে বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রয় কেন্দ্র ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করছেন সৌদি আরব থেকে দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসীরা।
অনিশ্চয়তার মধ্যে রোববার ও সোমবার সকাল থেকেই সোনারগাঁও হোটেলের পাশে সৌদি এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে টিকিটের অপেক্ষায় উপস্থিত হন কয়েক হাজার সৌদি ফেরত বাংলাদেশি। তাদের বেশির ভাগেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসে শেষ দিন। ফলে টিকিট না পেয়ে সোমবার দুপুরের সড়ক অবরোধ করেন তারা। অন্যদিকে, এদিন সকাল থেকেই মতিঝিলে বিমানের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সে ফ্লাইট বাতিলের জন্য বিমানকে দুষছেন তারা।
সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থিত সৌদি এয়ারলাইন্সের বিক্রয় কেন্দ্র্রে সোমবার সকাল থেকে টিকিট প্রত্যাশীদেরকে অফিসের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রবাসীদের রোদ আর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ফুটপাথে এবং সড়কে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন একটি টিকিটের জন্য। চাহিদার তুলনায় টিকিট নগণ্য। হাতে গোনা কয়েকজন টিকিট পেলেও অধিকাংশ যাত্রীই ফিরেছেন খালি হাতে। টিকিট না পেয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সৌদি এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সমানে বিক্ষোভকারীরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে তারা বিভিন্ন সময়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের আসা-যাওয়ার টিকিট করে দেশে ফিরেছেন। দেশে ছুটি কাটিয়ে সৌদি আরব ফেরত যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলেও ফ্লাইট বন্ধ থাকায় তারা যেতে পারেননি। দেশে আটকা পড়ার এই সময়ে অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ। কারো কারো এখনো ১/২ মাস সময় আছে। বিদেশ ফেরতরা তাদের নিয়োগদাতার সঙ্গে কথা বলে টিকিট কাটতে আসছেন। তবে গত দুইদিন দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেও টিকিট মিলছে না।
এই সময়ের মধ্যে সৌদি যেতে না পারলে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। তাদের অভিযোগ, সৌদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গত ২ দিনে প্রায় ১৯ শ’ জনকে টোকেন দিয়েছে। এর মধ্যে ২৩, ২৪, ২৭, ২৮শে সেপ্টেম্বরে টিকিট বিক্রি হলেও সবাইকে দেয়া হচ্ছে না। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট না পেয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন টিকিট প্রত্যাশীরা। পরিস্থিতি উতপ্ত হলে পুলিশ এসে তাদেরকে সোনারগাঁও হোটেলের পশ্চিম-দক্ষিণ পার্শ্ব থেকে বের করে দেন। এতে টিকিট প্রত্যাশীরা সড়ক অবরোধ করে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
টিকিটের জন্য সিলেট থেকে আসা মিঠু জানান, চলতি বছরের ২৫শে জানুয়ারি সৌদি আরব থেকে সৌদি এয়ারলাইন্সের রিটার্ন টিকিট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। এতোদিন ফ্লাইট না থাকায় যেতে পারিনি। এই মাসের মধ্যে আমাকে ফিরে যেতে হবে। তা না হলে ভিসা নিয়ে সমস্যা হবে। বরিশাল থেকে আসা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ৩০শে সেপ্টেম্বর আমার ভিসার মেয়াদ শেষ। এই সময়ের মধ্যে সৌদি আরব না যেতে পারলে আমাদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
-সূত্রঃ মানবজমিন
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন