দেশের সংবাদ ফিচার্ড

স্বামী-স্ত্রী মিলে মাসে বানান কোটি টাকার জাল নোট

ছবি : সংগৃহীত

স্বামী-স্ত্রী মিলে মাসে বানান কোটি টাকার জাল নোট

বছরখানেক আগে রাজধানীর বাড্ডার নুরেরচালা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় জাল নোট ছাপানোর মিনি কারখানা শুরু করেন আবদুর রহিম শেখ ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। স্বামী-স্ত্রীর ঘরের মধ্যেই কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তারা পরিচালনা করছিলেন কারখানাটি। মাসে সেখানে তৈরি করা হতো কোটি টাকার জাল নোট। আসন্ন কোরবানি ঈদবাজার ছিল তাদের মূল টার্গেট। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিল এ দম্পতির জাল টাকার কারবার।

তবে শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। গতকাল সোমবার ভোরে নুরেরচালা সাঈদনগরের একটি সাততলা বাড়ির ষষ্ঠতলায় অভিযান চালিয়ে ওই দম্পতিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ।

গ্রেপ্তারকৃতরা অন্যরা হলেন- রহিম শেখের বন্ধু গার্মেন্টপণ্য ব্যবসায়ী হেলাল খান, আনোয়ার হোসেন ও ইসরাফিল আমিন। এ সময় কারখানাটি থেকে হাজার ও ৫০০ টাকা মূল্যমানের প্রায় ৪৩ লাখ জাল টাকা, একটি ল্যাপটপ, দুটি কালার প্রিন্টার, বিপুল পরিমাণে আঠা ও আইকা, বিভিন্ন ধরনের রঙ, জাল টাকা তৈরির প্রচুর কাগজ, নিরাপত্তা সুতার বান্ডেল, লেমিনেটিং মেশিন, কাটার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগোসম্পন্ন বিশেষ কাগজ জব্দ করা হয়; যা দিয়ে কয়েক কোটি মূল্যের জাল টাকা তৈরি সম্ভব।

অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাঈদনগরের ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা তৈরির ঘরোয়া কারখানাটি আবিষ্কার করা হয়। জাল টাকা তৈরি এবং বিপণনের কাজে জড়িত এক নারীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। মূলত আবদুর রহিম শেখ ও তার স্ত্রী ফাতেমা কারখানাটি পরিচালনা করতেন। বাকিরা ছিলেন তাদের সহযোগী। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তারা কারখানায় জাল নোট ছাপানোর কার্যক্রম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারা প্রতিমাসে কোটি কোটি জাল টাকা ছাপিয়ে মার্কেটে ছাড়তেন।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকা খুচরা এবং পাইকারি বিক্রি করছেন। তিন বছর ধরে ঈদসহ অন্যান্য উৎসবের আগে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি জাল টাকা বাজারে ছেড়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন তারা। ১০০টি কাগজের নোটের এক বান্ডেল জাল টাকা তৈরি করতে তাদের খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। তৈরিকারকরা প্রতি বান্ডেল পাইকারি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। পাইকাররা আবার এগুলোকে প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রতি বান্ডেল ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন, যা রুটপর্যায়ের জাল টাকার কারবারিরা কখনো কখনো গহনাগাঁটি, কখনো কাপড়চোপড়, ভোজ্যপণ্য, এমনকি পশুরহাটে বিক্রির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশুর হাটসহ নানা জায়গায় নোটগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল।

মশিউর রহমান আরও জানান, এর আগে হাতিরঝিল এলাকায় ভাড়া বাসায় জাল নোটের কারবার করতেন আবদুর রহিম শেখ। সেখানে সুবিধা না হওয়ায় এক বছর আগে বাড্ডার নুরেরচালা এলাকায় চলে আসেন। তার স্ত্রী ফাতিমা বেগম ২০১৯ সালে হাতিরঝিল এলাকার ওই বাসায় জাল টাকা তৈরির সময় অপর এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে ওই সময় তার স্বামী আবদুর রহিম পালিয়ে যান। এর আগেও তারা বেশ কয়কবার জাল টাকা অথবা মাদক কেনাবেচার কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ করে আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে জাল টাকা তৈরি চক্র, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। আমরা এদের তৎপরতা রুখতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। জাল টাকায় শুধু দেশবাসী প্রতারিত হচ্ছে না, রাষ্ট্রও বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ তাই আসন্ন ঈদ উপলক্ষে যারা অনেক টাকা বহন করবেন, তাদের নগদ ক্যাশ বহন না করে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য অনুরোধ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা।

সূত্রঃ আমাদেরসময় ( স্বামী-স্ত্রী মিলে মাসে বানান কোটি টাকার জাল নোট )


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন