সাহিত্য জগত একটি বটবৃক্ষের মতো। একটি পরিপূর্ণ বটবৃক্ষের যেমন নানা শাখা প্রশাখা আছে, নতুন নতুন পাতা তাকে প্রকৃতির কাছে গ্রহণযোগ্য ও সুন্দর রাখে। তেমনি সাহিত্যেরও নানা শাখা প্রশাখা আছে। আর এই শাখা প্রশাখায় নতুন পাতা হয়ে লেখকের জন্ম হয়। বটবৃক্ষের রস ও প্রকৃতির আলো-বাতাসে পাতা হয়ে ওঠে সবুজ ও সতেজ। আর যে পাতায় রস ও প্রকৃতির আলো-বাতাস গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটে, সেটি হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ে। সাহিত্য জগতও একই রকম। এখানে যে লেখকের ভেতরে সাহিত্যরস থাকে, যে লেখক পরাবাস্তবতা তুলে ধরেন, পাঠকের মনে বোধের জন্ম দেন- তারাই বটবৃক্ষের সবুজ পাতার মতো সতেজ, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে পাঠক সমাজে। আর যে লেখক এটি পারেন না তিনি হলুদ পাতার মতোই ক্ষণিক পরে ঝরে পড়েন।
তবে মানসম্মত বই লেখার পেছনে প্রকাশক ও ভালো সম্পাদনাও জরুরি বলে মনে করেন লেখকরা। যদিও মানসম্মত বই কেউ নির্ধারণ করতে পারে না। বই পড়ে পাঠকরাই ঠিক করে দেন কোনটা মানসম্মত, কোনটা মানসম্মত নয় বলে মনে করেন প্রকাশকরা।
প্রতিবছরই বইমেলায় কয়েক হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। নতুন নতুন লেখকেরও জন্ম হয় বইমেলাকে ঘিরে। তবে খ্যাতিমান ও আলোচিত লেখকদের ভিড়ে তরুণ ও নতুনদের টিকে থাকার জন্য সাহিত্যরস ও ভাবনা খুবই জরুরি। এটি মেধা মননের জায়গা। এখানে যে লেখক পাঠকের মনোজগতের তৃষ্ণা মেটাবেন তাকেই পাঠক গ্রহণ করবে। লেখক হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সাহিত্য হলো যুগের খেলা। একটি উপন্যাসকে যদি ২০ বছর টিকিয়ে রাখতে না পারা যায়, তাহলে সেটি টিকে থাকা কঠিন। ফলে তরুণ লেখকরাও মনে করেন, খ্যাতিমান লেখকদের ভিড়ে টিকে থাকা বেশ কঠিন। তবে গভীর অনুভূতি আর চেষ্টা দিয়ে লেখাকে হৃদয়গ্রাহী ও শক্তিশালী করতে পারলে এ জগতে টিকে থাকা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে তরুণ লেখক কাজী রাফি জাগো নিউজকে বলেন, হঠাৎ করেই একটা বই লিখে নিজেকে পরিচিত করানো কঠিন। সেজন্য শুরুতেই জনপ্রিয়তা কিংবা বই বিক্রি করে উপার্জন তরুণ লেখকদের জন্য কঠিন। এক্ষেত্রে তরুণদের নিষ্ঠার সঙ্গে লিখতে হবে। লেখা যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে ওই লেখাই শক্তি হিসেবে এই জায়গায় টিকিয়ে রাখবে।
অমর একুশে বইমেলায় নানা ধরনের বইয়ের প্রকাশ ঘটে। কোনো লেখক কিংবা লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হলেই তা সাময়িক বইয়ের কাটতি বাড়ায়। তবে যুগের সঙ্গে তা টিকে থাকে না। একই সঙ্গে ক্ষণিকের এই চাহিদা প্রকাশককে কিছু ব্যবসা করে দিলেও লেখকের প্রতি প্রথমেই পাঠকের একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। পাঠকের কাছে একবার তার লেখা বাতিল মনে হলে তার আর গ্রহণযোগ্যতা মেলে না। পাঠকের কল্পনা থেকে লেখকের কল্পনার জায়গা ঊর্ধ্বে না হলে সেই লেখক আর পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠেন না। মূলত মানসম্মত বইয়ের দিকেই পাঠকের দৃষ্টি বেশি থাকে।
মেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সূচনা ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মেলায় প্রতিবছরই নতুন নতুন বই আসে। এক মেলা থেকে পরবর্তী মেলাতেই সেগুলো আর কেউ মনে রাখে না, হারিয়ে যায়। ভালো কোনো গল্প নেই, মানসম্মত কোনো লেখাও নেই। বইগুলো পড়ে মনে হয় একটা সিনেমার মতো। পড়লাম আর কিছুক্ষণ সেটি কল্পনা করলাম, পরের দিনই তা হারিয়ে গেলো। বইয়ের লেখা হবে মানসম্মত, বাস্তবতা ও পাঠকের চিন্তার জগত থেকেও আরো বেশি গভীর। এখনকার বই হয়ে গেছে ফেসবুকে প্রচার-প্রচারণা বা লেখকের ফলোয়ারের মতো। এগুলো দেখেই অনেকে কেনে। কিন্তু পড়ার পর সেখানে তেমন ভালো কোনো গল্প খুঁজে পায় না। শেষে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দের কাছেই ফিরে যেতে হয়।
শুধু বইমেলাই নয়, প্রতিদিন পত্রিকায় বহু গল্প লেখা হচ্ছে- কিন্তু পাঠক মনে রাখছে না। মানসম্পন্ন গল্প কিংবা সাহিত্যের উপাদান সেখানে নেই। সেখানে অন্যভাবে লেখাটি কিংবা লেখকের বইটি পাঠকের সঙ্গে কথা বলে না। যেখানে পাঠকের বোধের সঙ্গে খেলা করে না, অনুভবের সঙ্গে কাজ করে না- সেই লেখা বা বই পাঠক মনেও রাখে না। পাঠক মনে রাখে সেই বিলাসী, অপু, কুবের কিংবা হিমুদের কথাই।
তবে সাহিত্যের বিকাশের জন্য বই প্রকাশের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন লেখকরা। বইয়ের গল্প বা লেখার মান যাচাইয়ের কোনো মানদণ্ড না থাকায় মানসম্মত নয় এমন বইও প্রকাশ করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রকাশক ও ভালো সম্পাদনা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
এবিষয়ে লেখক আনিসুল হক জাগো নিউজকে বলেন, মানসম্মত নয় এমন বইও প্রকাশ করতে দেওয়া উচিত। কারণ মান নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি পৃথিবীতে নেই। মান নিয়ন্ত্রণ করলে রবীন্দ্রনাথের বইও বের হতো না। জীবনানন্দ বা বুদ্ধদেব বসুর প্রথম বইও বের হতো না। কিন্তু মানসম্মত প্রকাশক দরকার। আমাদের প্রকাশকরা সম্পাদনা করেন না। প্রকাশকদেরকে সম্পাদনা পরিষদ রেখে ভালো সম্পাদক রাখতে হবে। এটাই আমার চাওয়া।
বাতিঘর প্রকাশনীর প্রকাশক মো. নাজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে একটি মানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে পাণ্ডুলিপি বাছাই করে বই বের করা হয়। মানসম্মত নয় এমন বই বের হবেই। একশটা ছবি, গান বা নাটক হলে বেশিরভাগই মানহীন হয়। লেখালেখির ক্ষেত্রেও সেটি রয়েছে। একইভাবে প্রচুর লেখা ও বই বের হয়। কিন্তু খুব কম লেখা ও বইয়ের পাঠকপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকে। এটাই স্বাভাবিক ও বাস্তবতা।
তিনি বলেন, তবে যেটা করা যেতে পারে আমাদের বাছাই, সম্পাদনা, পাণ্ডুলিপি মূল্যায়ন আর ভালোভাবে করা যেতে পারে। মানসম্মত বই কেউ করতে পারে না। এটা পাঠক ঠিক করে দেয় কোনটা খারাপ কোনটা ভালো। আমরা গল্পটা ঠিক আছে কি না আর লেখনিটা ঠিক আছে কি না সেটার ওপরই বেশি জোর দিয়ে থাকি। তারপর পাণ্ডুলিপিতে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা ঠিক করি।
বাইমেলা শুধু লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের মেলা-ই নয় এটি এখন বাঙালির সংস্কৃতি ও সৃষ্টিশীলতাকেও ধারণ করে। আর এই সৃষ্টিশীল কাজের মানের পার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক।
এবিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, নতুন যেসব লেখক এসেছেন তাদের ভেতরে সম্ভবনা রয়েছে। একেবারেই নতুন যারা এসেছেন তাদের মধ্য থেকে হঠাৎ কে বেরিয়ে আসবেন আমরা তা কেউ জানি না। তাদের ভেতরে অনেকের বই মানুষ পড়ছে। এই কারণে সেগুলোর প্রচারণা দরকার। আমাদের সেই প্রচারণাটা কম। নতুন লেখকের বই সম্পর্কে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। একবার, দুইবার, তিনবার যদি বই আসে তাহলে দেখা যাবে যে সেই বই বা লেখক পরিচিত হয়ে যাবেন। এটা সময়ের ব্যাপার। তবে কোনো লেখকের ১০টা বই বের হয়ে কোনোটাই পাঠক না পাওয়ার চেয়ে মানসম্মত একটা বের করে পরিচিতি পাওয়াটাই ভালো।
কবি নূরুল হুদা বলেন, লেখক দুই ধরনের। একটি হলো খুব বেশি লেখেন, লেখার মান যাইহোক। এমনভাবে লেখেন যে বই মানুষ প্রথমে পড়েই বুঝে ফেলবে আর কিছু লাগবে না। নতুন লেখকদের দুটা বিষয় জানতে হবে। একটা হলো লেখার কলাকৌশল, আরেকটি স্ব-সম্পাদনা। নিজের বই নিজে সম্পাদনা করতে হবে। সেটা পৃথিবীর সব বড় লেখকরা করেছেন।
বইমেলা আমাদের বাঙালিত্ব, আমাদের সৃষ্টিশীলতাকে এগিয়ে নিচ্ছে। এখানে লেখক, পাঠক, প্রকাশক সহ মানুষের যেমন একটি সম্মিলন ঘটে; আবার লেখার যে সৃষ্টিশীল চিন্তা সেটির প্রকাশ ঘটে।
এবিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, বইমেলা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। এখানের মতো এত লেখক আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। ভারতবর্ষেও দেখি তাদের চেয়ে আমাদের এখানে লেখকের সংখ্যা বেশি। এর কারণ এই বইমেলা। তারপর আরেকটা ব্যাপার আছে- সৃষ্টিশীলতা। তবে লেখার গুণগত মান কম থাকলেও আমি এগুলোকে উৎসাহিত করি। মাঠে যতগুলো ধান গাছ আছে তার চেয়ে আগাছা বেশি থাকে। তেমনি যে লেখাটা মাঠে থাকবে না সে লেখকতো ঝরে যাবেই। হলুদ পাতা ঝরে যাবে, সবুজ পাতা থাকবে। যে বই সবুজ পাতা হিসেবে থাকবে আমি সেই বই-ই চাই। কিন্তু হলুদ, সবুজ পাতা নিয়েই একটি গাছ।
কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহের একসঙ্গে পাঁচটি উপন্যাস প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্ব বাংলা গণমাধ্যমে সুরিন্দর সুরাইয়া ।। গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মাত্র সাত দিনে পাঁচখানা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ। সেই পাঁচটি উপন্যাস পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি দেশ থেকে ইতিমধ্যেই ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। কানাডা থেকে প্রকাশিত […]
কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীর মৃত্যু কানাডার অটোয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আসিফ সৈয়দ (২৭) প্রবাসী বাংলাদেশি । গতকাল ঈদের দিন কানাডার স্থানীয় সময় শনিবার আনুমানিক ভোররাত তিনটায় কানাডার অটোয়া হাইওয়ে ১৭৪ এবং এর ৪১৭ এর বিভক্তিকরণের চত্বরে গাড়ী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই যাত্রী আসিফ সৈয়দ নিহত হন। গাড়ীর চালক চাচাতো ভাই নওশাদ সৈয়দকে গুরুতর অবস্থায় […]
যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ এলামনাই এসোসিয়েশনের বর্ণাঢ্য আয়োজন । শেষ হল নবনিবাচিত কমিটির অভিষেক, থ্যাংকস গিভিং ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সভাপতি আবু সাঈদ চৌধুরী কুটি, সাধারণ সম্পাদক এম আহমেদ ফয়সল নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ এলামনাই এসোসিয়েশনের এর উদ্যোগে নবনির্বাচিত কার্যকরী কমিটির অভিষেক, থ্যাংকস গিভিং ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২৬শে নভেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পালকি […]
সংবাদটি শেয়ার করুন
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে কুকিজ ব্যবহার করি যাতে বারবার ভিজিটের ক্ষেত্রে আপনাকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা দিতে পারি। "স্বীকার করুন" ক্লিক করে, আপনি কুকি ব্যবহার করতে সম্মত হন৷
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.