দিলীপ কুমারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাড়িতে হাজির বলি তারকারা, শোকে কাতর সায়রার পাশে শাহরুখ
৯৮ বছর বয়সে মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’ দিলীপ কুমার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে কয়েকদিন আগেই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। আইসিইউতে থাকলেও স্থিতিশীল বলে জানিয়েছিলেন জীবনসঙ্গিনী সায়রা বানু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না তাঁকে।
হাসপাতাল থেকে দিলীপ কুমারকে নিয়ে আসা হয় তাঁর পালি হিলের বাসভবনে। তারপর জুহুতে তাঁকে বিকেল পাঁচটায় সমাধিস্থ করা হবে বলেই ঘোষণা করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে ঘোষণা করেন, আজ বিকেল ৫টায় মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত অভিনেতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
কিংবদন্তিকে শেষ বারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে পালি হিলের বাসভবনে করোনা আবহে ভিড় জমান বলি তারকারা। শাহরুখ খান, বিদ্যা বালান, রণবীর কাপুর, অনিল কাপুর, শরদ পাওয়ার, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে, আদিত্য ঠাকরে, ধর্মেন্দ্র, করন জোহর, শাবানা আজমি একে একে পৌঁছান দিলীপ কুমারকে শ্রদ্ধা জানাতে।
তারকাদের মাঝেই দিলীপ কুমারের মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সায়রা বানু। শোকসন্তপ্ত সায়রার পাশে দাঁড়ান শাহরুখ খান। অভিনয় জগতে থেকে দূরে সরে থাকলেও দিলীপ কুমারের প্রতিটা জন্মদিনে ফুলের স্তবক নিয়ে দেখা করতে যেতেন শাহরুখ খান, সলমন খান, অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্ররা। করোনা আবহেই শুধু বিরত ছিলেন জন্মদিন পালন থেকে। ৯৮ বছরে পা রেখে জানিয়েছিলেন, এবছর সায়রার সঙ্গে নিভৃতে থাকতে চান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে বলিউড সহ গোটা দেশ।
‘ট্র্যাজেডি কিং’-এর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ইমরান, টুইট করে কেন কৃতজ্ঞতা জানালেন দিলীপ কুমারকে?
পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করলেও দিলীপ কুমারের বেড়ে ওঠা, এবং জীবনের বেশিরভাগ অধ্যায় কেটেছে ভারতেই। ভারতে যেমন ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারে তিনি সম্মানিত। তেমনই পাকিস্তান সরকারের তরফে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘নিশান-এ-ইমতিয়াজ’-এ ভূষিত করা হয় তাঁকে। তাঁর প্রয়াণে ভারতের মতোই শোকের ছায়া নেমে এসেছে পাকিস্তানেও। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবারও এক পুরনো ঘটনা উল্লেখ করে ‘ট্র্যাজেডি কিং’কে কৃতজ্ঞতা জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ইমরান জানালেন, তখন তাঁর জীবনে এক কঠিন সময়। লাহোরে মা শওকত খানুমের নামে ক্যানসার হাসপাতাল গড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাসপাতাল তৈরির খরচ বহন করার মতো ক্ষমতা ইমরানের তখন ছিল না। কিন্তু তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে এসেছিলেন দিলীপ কুমার। নিজে থেকে শুধু অর্থ সাহায্য করেছিলেন তাই নয়। এমনকি তাঁর কারণেই দেশ-বিদেশের আরও বহু মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন সাহায্য করতে।
টুইট করে ইমরান লেখেন, ‘আমি গভীরভাবে শোকাহত। কোনও দিন ভুলব না ওঁর অবদানের কথা। প্রয়াত মায়ের স্মরণে পাকিস্তানের এক ক্যানসার হাসপাতাল গড়ার জন্য তিনি যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, তা আজীবন মনে রাখব। ওই হাসপাতাল তৈরির শুরুর দিকে ১০ শতাংশ ত্রাণ জোগাড় করতে গিয়ে বহু কষ্ট করতে হয়েছিল। কিন্তু ওঁ নিজেই তখন অর্থ সাহায্য করে এগিয়ে এসেছিল। তারপর ওঁর সহায়তার কারণেই পাকিস্তান এবং লন্ডন থেকে বহু অর্থ সাহায্য আসে।’ এরপরই আরও একটি টুইট করে ইমরান লেখেন, ‘আমাদের প্রজন্মের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এবং সেরা অভিনেতা ছিলেন তিনিই।’
‘যেন নিজের দাদাকে হারালাম…’, দিলীপ-প্রয়াণে কান্নায় ভেঙে পড়লেন ধর্মেন্দ্র
এক ইন্ডাস্ট্রিতে থাকাকালীন সৌজন্যমূলক আলাপচারিতা অনেকেই করেন। তবে মনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেন খুব কম মানুষ। এক সিনেমায় কাজ করতে করতেই কখন যে আত্মীয়তার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তা টের পাওয়া যায় অনেক পড়ে।
সিনেমা যেন দিলীপ কুমার এবং ধর্মেন্দ্রর আত্মাকে মিলিয়ে দিয়েছিল। ১৯৬৬ সালে ‘পাড়ি’ এবং ১৯৭২ ‘অনোখা মিলন’-এ একসঙ্গে কাজ করলেও, দিলীপ কুমারের অভিনয়ের গুণমুগ্ধ ছিলেন ছোট থেকেই। সিনেমায় পা রাখার আগে থেকেই পালি হিলের বাসভবনে যাতায়াত ছিল ধর্মেন্দ্রর। প্রথমবার দিলীপ কুমারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই সমস্ত টুকরো টুকরো স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভেসে উঠছে ধর্মেন্দ্রর।
দিলীপ কুমারের প্রয়াণে শোকে কাতর বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র। ঘুম থেকে উঠেই খবর শুনে তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। সায়রা বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর বাসভবনে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেছিলেন দিলীপ কুমারের পাশে।
ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘আজ কিছু বলার মতো ভাষা নেই আমার। মনে হচ্ছে যেন নিজের দাদাকে হারালাম। আমার বড় ভাইয়ের মতো আমায় আগলে রেখেছিল এতোদিন। অসংখ্য স্মৃতি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব। তাঁর দেওয়া কত উপহার থেকে গেল আমার কাছে। তিনি শুধু একজন কিংবদন্তি অভিনেতা নন। একজন অসামান্য ব্যক্তিত্বের মানুষ। আমার বড় ভাই। এই শূন্যস্থান কোনওদিন পূরণ হবে না।’
স্মৃতি ভিড় করে এলে কথা হারিয়ে ফেলেন ধর্মেন্দ্র। হঠাৎ মনে পড়ে এক পুরনো সোয়েটারের কথা। যেটা উপহার দিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। শুটিং চলাকালীন যে সোয়েটার উপহার হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন, জীবনের সবচেয়ে দামি এবং মনের কাছের সেটা। ধর্মেন্দ্র জানান, ‘প্যারিস থেকে দুটো সোয়েটার দিলীপ সাব কিনেছিলেন। একটা নাসির, তাঁর নিজের ভাই নিয়েছিলেন। আর একটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। সোয়েটারটা নেওয়ার সময় বলেছিলাম, এই যে নিলাম, আর কিন্তু ফেরত দেব না।’ রাগ করেননি দিলীপ কুমার, বরং এক গাল হেসে উপহারের মতোই দিয়েছিলেন তিনি।
ধর্মেন্দ্র আরও বলেন, ‘আমরা এক মায়ের পেটে না জন্মালেও, রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও, আমাদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।’
সূত্রঃ আজকাল (দিলীপ কুমারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাড়িতে হাজির বলি তারকারা)
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান