ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স || পর্ব -৩ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ রয়
পূর্ব প্রকাশের পর। পর্ব- ৩
পিরিয়ডের ডেট পেরুবার দশ দিন পর থেকেই নীলার গা গুলিয়ে বমি শুরু হল৷ কিছু খেতে পারছে না৷ মাছে গন্ধ লাগে৷ কল্যাণী ডাক্তার ডাকলেন৷ ইউরিন টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এল৷ নীলার মনেও একটা খুশীর হাওয়া তিরতির করে বইতে লাগল৷
সেদিনের ঘটনার পর অনীক একটু লজ্জিত৷ নীলার সঙ্গে অনেক বার কথা বলতে গিয়েছে, কিন্তু নীলা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ নীলা এখনও সে রাতে অনীকের ব্যবহার মন থেকে ভুলতে পারেনি৷
ডাক্তারের ওষুধে নীলা এখন একটু ভাল আছে৷ অল্প অল্প করে খেতে পারে৷ সারাদিন শুয়ে বসেই কাটায় নীলা৷ আর ফেলে আসা জীবনের কথা ভাবে৷ মাঝে মাঝে মায়ের জন্য ডুকরে ওঠে৷ মা যদি এভাবে চলে না যেত নীলার জীবনটা তাহলে অন্য রকম হতো৷
মা না থাকায় বাবাও মানসিক জোর হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ নীলা এখন আর কাউকেই দোষারোপ করে না৷ কাকা , কাকীমাও বা তাঁর দায়িত্ব নেবে কেন? নীলাতো আর তাদের নিজের মেয়ে নয়৷
এর মধ্যে একদিন রাতের বেলা অনীক নীলাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, তোমার এই নীরব উপেক্ষা আমি আর মেনে নিতে পারছি না৷
নীলা কঠিন চোখে অনীকের দিকে তাকিয়েছিল৷ অনীক আর কিছু বলেনি৷ শুধু বলেছিল, কালকে মিসেস গাঙ্গুলীর জন্মদিনের পার্টি৷ তুমি না গেলে আমার সম্মান থাকবে না৷
নীলা বলেছিল, তোমার সম্মানটা যখন আমার সঙ্গে জড়িত, যাব৷ তবে বেশীক্ষণ থাকব না৷ কারণ আমার শরীর ভাল নয়৷
অনীক বলেছিল, বেশ৷
মিসেস রমিতা গাঙ্গুলী, বিজনেস টাইফুন দিব্যেন্দু গাঙ্গুলীর স্ত্রী৷ সাজে গোজে আধুনিকা শুধু নয় উগ্র আধুনিকা৷ আজকে তার জন্মদিন৷ পরনে ডিপ কাটের স্লিপলেস আর দামী নীল রঙের শিফন শাড়ি৷ যে শাড়ি মেয়েদের লজ্জা নিবারণের জন্য, এই শিফন শাড়িতে লজ্জার আবরণ আরও মুক্ত৷
ভাগ্যিস দ্রৌপদী দ্বাপর যুগে জন্মেছিল ৷
নাহলে এই যুগে হলে দ্রৌপদী এসব পার্টি দেখে লজ্জা পেতেন৷
রমিতা গাঙ্গুলী নীলা আর অনীককে ঢুকতে দেখে এগিয়ে এল৷ দুজনকেই হাগ করল৷ হাতে শ্যাম্পেনের গ্লাস৷ নীলার থুতনি ধরে বলল, তুমি এখনও কনে বউই রয়ে গেলে৷৷ নীলা কোনও উত্তর করল না৷ একটু মৃদু হাসল৷
অনীক হাতে হুইস্কির গ্লাস নিয়ে গল্পে মেতে উঠল৷ নীলা একটা কোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল৷ সে সময়ই রোনক এগিয়ে এসে ওর সঙ্গে আলাপ করল, নীলার হাতে ওর ভিজিটিঙ কার্ডটা ধরিয়ে দিল৷
পার্টিতে এত লোকজনের মাঝেও নীলার রোনককে একটু অন্যরকম লেগেছিল৷
তারপর রমিতা গাঙ্গুলীর কেক কেটে হাততালি দিয়ে হ্যাপি বার্থ ডে করে, রাতের খাবার খেয়ে ওরা তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছিল৷
অনীক সেদিন কথা রেখেছিল নীলার৷ মেয়েদের ধর্মতো পুরুষরা যদি একটুখানি মহিলাদের ভাল লাগার কাজ করে, মেয়েরা তাদের সবটুকু দিয়েই সঙ্গী পুরুষটিকে ভালবেসে ফেলে৷ নীলাও তার ব্যাতিক্রমী নয়৷
আস্তে আস্তে অনীকের প্রতি নীলার ভাল লাগা শুরু হল৷ আজকাল নীলার প্রতি তার খুব নজর৷ নীলারও বেশ লাগে৷ অনীক আজকাল তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে৷ বাড়ি এসে নীলাকে সময় দেয়৷
একদিন নীলাকে বলল, নন্দনে যাবে? ওখানে গগণেন্দ্র নাথ প্রদর্শণশালায় চিত্র প্রদর্শণী হচ্ছে, চল দেখে আসি৷
নীলা আবেগে অনীককে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি তুমি বলছো৷
অনীক নীলাকে কাছে টেনে বলল, আমিই বলছি৷ আমার বউয়ের ভাল লাগাগুলো আমি বুঝব না তো কে বুঝবে, শুনি৷
অনীকের কথাগুলো নীলার মনে খুশীর হাওয়ায় ডানা মেলে উড়িয়ে নিয়ে গেল৷
নীলা বলল, আমি এক্ষুনি তৈরি হয়ে নিচ্ছি৷
হলুদ রঙের পিওর সিল্কে নীলাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ৷ অন্যদিনও যে সুন্দর লাগে না তা নয়, তবে মুখে একটা বিমর্ষ ভাব থাকে৷ আজকে নীলাকে বেশ ঝলমল লাগছে৷
গাড়িতে করে ওরা যখন নন্দন চত্বরে পৌছল, তখন সন্ধে গড়িয়ে চারিদিকে ইলেকট্রিক আলোর ঝর্ণায় ভেসে যাচ্ছে নন্দন৷
গাড়ি পার্কের জায়গায় অনীক গাড়িটা রেখে নীলাকে নিয়ে হাটতে হাটতে গগনেন্দ্র নাথ প্রদর্শণশালায় ঢুকল৷ চিত্র শিল্পীদের রঙ তুলির মিশ্রনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে চরিত্রগুলো৷ নীলা মন্ত্রমুগ্ধর মতন সব ছবিগুলো দেখতে লাগল৷ মনের ভেতর অনুরনিত হতে থাকল রঙীন অনুভূতিগুলো৷
একটা ছবিতে এসে চোখটা আটকে গেল নীলার৷ একজন নারীর পোট্রেট৷ চোখ দুটো জীবন্ত৷ যেন কিছু বলতে চাইছে৷
নীলা অনেকক্ষণ ছবিটার দিকে চেয়ে রইল৷ কোন করে শিল্পীর নামটাও ছোট্ট করে লেখা RONO.
নীলা পেছন ফিরে দেখল অনীক নেই৷ সে এতটাই ছবি দেখায় মগ্ন ছিল যে অনীক আছে কিনা খেয়ালই করেনি৷
নীলার খুব ইচ্ছে হল ছবিটা কেনে৷ অনীককে বলার জন্য নীলা বাইরে এল৷ এসে দেখল অনীক সিগারেট খাচ্ছে৷
নীলাকে দেখে অনীক বলল, কিছু বলবে?
হ্যা আমার একটা ছবি খুব পছন্দ হয়েছে৷
বেশ তো, নিয়ে নাও৷
অনীক নীলাকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে গিয়ে কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করল -ওনার যে ছবিটা পছন্দ প্যাক করে দিন৷
কাউন্টারে বসা অল্প বয়সী মহিলাটি জিজ্ঞাসা করল, কোন ছবিটা ?
নীলা হাত তুলে পোট্রেটটি দেখাল৷
-ছবিটার দাম বারো হাজার পরবে৷
অনীক পকেট থেকে ক্যাশ টাকা মহিলাটির হাতে দিল৷ মহিলাটি একজনকে বলল, ম্যাডামকে ছবিটা প্যাক করে দাও৷
নীলা বলল, আমি কি আর্টিস্টের সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি?
মহিলাটি বলল, সরি ম্যাম৷ উনি তো নিজে আসেন নি৷ ছবিটা উনি পাঠিয়ে দিয়েছেন৷
আপনি একটা কাজ করুন ওনার ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলাম, আপনি কথা বলে নেবেন৷ একটা ছোট্ট সাদা কাগজে ল্যান্ড লাইনের নাম্বার লিখে নীলাকে দিলেন উনি৷
নীলা হ্যান্ড ব্যাগে নাম্বারটা ঢুকিয়ে রাখল৷
নীলার মনে খুশীর ঢেউ উপচে উঠছে৷ বিয়ের এতদিন বাদে অনীককে বেশ ভাল লাগা শুরু হয়েছে৷
চলবে…
কৃষ্ণা গুহ রয়- উপন্যাসিক, কবি। পশ্চিমবঙ্গ
অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে হলে
ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স || পর্ব -১ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ রয়
ধা রা বা হি ক উ প ন্যা স || পর্ব -২ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ রয়
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান