মিষ্টি মেয়ের জন্মদিন আজ
মিনা পালের বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর। পরিচালক সুভাষ দত্ত তার সিনেমার জন্য খুঁজছিলেন একটা কিশোরীকে। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যান মিনাকে। সাংস্কৃতিক পরিবারেই বড় হয়ে উঠছিলেন মিনা। মা পুঁথি পড়তেন, ভাইবোনেরা নাচতেন-গাইতেন, ছোট ভাই তবলা বাজাতেন আর সে নাচ করতো। তবে আগে অভিনয় করা হয়নি কখনও। সিনেমার অফার আসার পর মিনার বাবা আগ্রহী হলেও মা তাকে দিতে চাননি। তারপরেও পরিবারের রক্ষণশীলতা কাঁটিয়ে চলে আসেন বড় পর্দায়। সুভাষ দত্তের প্রথম সিনেমা ‘সুতরাং’ এর ‘পরানে দোলা দিলো এই কোন ভোমরা’ গানের মাধ্যমে মাত্র ১৩ বছরের সেই কিশোরী মিনা পাল নায়িকা হিসেবে দর্শকদের কাছে পরিচিতি হন।
‘সুতরাং’ সিনেমাটি দিয়ে যেমন বাংলাদেশি সিনেমার আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রাপ্তি শুরু হয়েছিল, তেমনই বাংলা চলচ্চিত্র খুঁজে পেয়েছিল চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েকে। প্রথম সিনেমাতেই দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হন মিনা পাল। হয়ে উঠেন বাংলা সিনেমার কবরী।
সেই ‘মিষ্টি মেয়ে’র জন্মদিন আজ। তবে এবারে তার জন্মদিনকে ঘিরে থাকবে না কোনো উৎসব আনন্দ। তাকে ঘিরে সব দুঃখকেই মনে পড়বে। কারণ আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই। গত ১৭ এপ্রিল সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই তারকা।
১৯০৫ সালের আজকের এই দিনে (১৯ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জন্মস্থান বোয়ালখালী হলেও শৈশব ও কৈশোর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম নগরীতে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নৃত্যশিল্পী হিসেবেও খ্যাত হন।
প্রথম সিনেমা দিয়ে বাজিমাত করার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। একদিকে যেমন দক্ষ অভিনয় আর অন্যদিকে মনকাড়া হাসি দিয়ে সহজেই দর্শকমন হরণ করেন তিনি।
ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেন কবরী। উর্দু সিনেমার ভীড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে আস্থাভাজন হয়ে উঠেন তিনি।
একে একে উপহার দেন সাত ভাই চম্পা, অরুন বরুন কিরণমালা, নীল আকাশের নীচে, ঢেউয়ের পরে ঢেউ, আবির্ভাব, দর্পচূর্ণ, দ্বীপ নিভে নাই, বিনিময়, আপন পর, কত যে মিনতি, ময়নামতির মতোন জনপ্রিয় সিনেমা। শুধু তাই নয় সেই সময় খ্যাতনামা পরিচালক জহির রায়হানের উর্দু সিনেমা ‘বাহানা’-তেও নায়িকা ছিলেন কবরী।
শুধু একক নায়িকা হয়ে নয়, জুটিতেও সেরা কবরী। বাংলা সিনেমার সেরা জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী। । ১৯৬৭ সালে “আবির্ভাব” সিনেমার মধ্যে দিয়ে আবির্ভাব হয় এই জুটির। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। এরপর নির্মাতাদের চাহিদার কেন্দ্রে পৌঁছে যান রাজ্জাক কবরী। একে একে ময়নামতি, নীল আকাশের নিচে,বাঁশরীর মতো সিনেমা দিয়ে দর্শকমনে রাজ করেন এই জুটি। এই জুটির রংবাজ সিনেমাকে ঢালিউডের অন্যতম সিনেমা হিসেবে গন্য করা হয়।
শুধু রাজ্জাক নয় ফারুক, এবং বুলবুল আহমেদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা কবরী।
দীর্ঘ তিন দশকের ক্যারিয়ারে ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
অভিনেত্রী কবরী একাত্তরে কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সেখানে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন।
পরে দেশে ফিরে চলচ্চিত্রে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি ২০০৬ সালে ‘আয়না’ নামে একটি চলচ্চিত্রের পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্মাণে অভিষেক ঘটে কবরীর।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণ হাত দিয়েছেন তিনি।নিয়মিত লেখালেখিও করেন কবরী।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কবরী। -আমারসংবাদ
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান