কানাডার সংবাদ ফিচার্ড

শপথ নিলেন কার্নির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ: শেষ হলো কুইবেক অধ্যায়ের

শপথ নিলেন কার্নির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদ: শেষ হলো কুইবেক অধ্যায়ের

কানাডার ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন নবনির্বাচিত লিবারেল নেতা ৫৯ বছর বয়স্ক মার্ক কার্নি। আজ শুক্রবার সকালে গভর্নর জেনারেলের কার্য্যালয় ‘রিডো হল’-এ এক অনুষ্ঠানে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এবং বিভিন্ন পোর্টফোলিওতে নিয়োগপ্রাপ্ত তার মন্ত্রীগণ। এর আগে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো গভর্নর জেনারেল মেরি সাইমনের সাথে দেখা করে পদত্যাগ করেন এবং নতুন নেতাকে সরকার এবং নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য অনুরোধ করার সুপারিশ করেন। টেকনোক্র্যাট প্রধানমন্ত্রী কার্নির মন্ত্রিসভায় থাকছেন মাত্র ২৪ জন মন্ত্রী যেখানে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী ছিলেন ৩৭ জন। কার্নির ছোট মন্ত্রিসভা ট্রুডোর আমলের মতো পুরোপুরি লিঙ্গ সমতাপূর্ণ হয়নি যাতে আছেন তিনি নিজে সহ ১৩ জন পুরুষ এবং ১১ জন মহিলা। এছাড়া আলবার্টা, পি.ই.আই. এবং সাসকাচোয়ান প্রদেশ থেকে কোনো মন্ত্রী নেয়া হয়নি|
ট্রুডোর মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা হলেন প্রাক্তন লিবারেল নেতৃত্ব প্রার্থী কারিনা গোল্ড, পাবলিক সার্ভিসেস অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট মন্ত্রী জিন-ইভেস ডুক্লোস এবং প্রাক্তন অভিবাসন মন্ত্রী মার্ক মিলার এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মার্ক হল্যান্ড। এছাড়া কার্বন ট্যাক্স নিয়ে কট্টর ভূমিকা রাখা পরিবেশমন্ত্রী স্টিভেন গিলবেল্টকে পোর্টফোলিও পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে জীববৈচিত্র্য এবং কানাডিয়ান ঐতিহ্য মন্ত্রণালয়।
দলীয় লিডারশিপ নির্বাচনে মার্ক কার্নির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়া ফ্রিল্যান্ড তার আগের পোর্টফোলিওগুলির তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন এবং অভ্যন্তরীণ বানিজ্য মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। উল্লেখ্য, কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রুডো যখন তাকে পদাবনতি দিয়ে একই পোর্টফোলিওর প্রস্তাব করেছিলেন তখন ক্রিস্টিনা সেটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ট্রুডোর বিদায়কে ত্বরান্বিত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি থাকছেন নিজ মন্ত্রণালয়ে| কানাডা-মার্কিন সম্পর্কে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় অর্থমন্ত্রী ডমিনিক লেব্ল্যাঙ্ককে দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আন্তঃসরকারি পোর্টফোলিও| উদ্ভাবনমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যাম্পেন পেয়েছেন অর্থমন্ত্রণালয়। বিচারমন্ত্রী এবং কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আদিবাসী সম্পর্ক মন্ত্রী গ্যারি আনন্দসাঙ্গারি। ভারতীয় বংশদ্ভুত কামাল খেরা যিনি ছিলেন গত বছরের সর্বোচ ফান্ড রেইজার, তিনি পাচ্ছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। আরেক ভারতীয় বংশদ্ভুত অনিতা আনন্দ বিজ্ঞান ও শিল্প উদ্ভাবন মন্ত্রণালয় পেছেন| ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয়ে মার্ক মিলারের স্থলাভিষিক্ত হলেন উৎরিমন্ট রাইডিংয়ের ডেপুটি রাসেল বেনদাইন।
কানাডার সাম্প্রতিক রাজনীতিকে পাল্টে দেয়া মার্ক কার্নি কতদিন থাকবেন এই দায়িত্বে, সেটা নিয়ে আলোচনা সর্বত্র| হানিমুন পিরিয়ড বলে কিছু থাকবে না এবার| এমনকি, ফেডারেল নির্বাচন আসন্ন এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এতদস্বত্ত্বেও কার্নি বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তার লন্ডন এবং প্যারিস সফরে যাওয়ার কথা।কার্নি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই, তবে দুই দেশ বাণিজ্য যুদ্ধে আটকে থাকায় “যথাযথ মুহূর্তে” ট্রাম্পের সাথে তিনি কথা বলবেন। এদিকে ২৪শে মার্চ পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে কার্নি সরাসরি কিছু বলেননি| ধারণা করা হচ্ছে, এর আগেই নির্বাচনের ডাক দেবেন কার্নি। যার অর্থ অক্টোবরে অনুষ্টিতব্য নির্বাচন এগিয়ে আসছে। কানাডিয়ানরা হয়তো এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের শুরুতে মুখোমুখী হচ্ছেন ফেডারেল নির্বাচনের।
মোটামোটি একটা যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়েই নামছেন মার্ক কার্নি| সে যাই হোক, কুইবেক প্রভিন্সের প্রেক্ষাপটে, লিবারেল পর্টিতে নেতৃত্বের এই পরিবর্তনে একটি যুগের সমাপ্তি হলো। জাস্টিন ট্রুডোর আমলে কানাডার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বেশ কয়েকজন কুইবেক মন্ত্রী অপসারিত হলেন যার মধ্যে রয়েছেন জিন-ইভেস ডুক্লোস, মার্ক মিলার এবং ডায়ান লেবুথিলিয়ার। ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছেন ডেভিড ল্যামেটটি, যিনি এই ট্রানজিশন পিরিয়ডে গুরুত্বপূর্ণ পালন করলেও মন্ত্রীত্বে ফিরেননি। অবশ্য নতুন যোগ দিয়েছেন রাসেল বেনদাইন।

-সংবাদ সংযোগঃ শিহাব উদ্দীন

 

 


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন