ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

ধারাবাহিক একটি রিয়্যালিটি উপন্যাস || দশচক্র || সিদ্ধার্থ সিংহ ।। পর্ব ৫

পর্ব – ৫ | পূর্ব প্রকাশের পর…

ধারাবাহিক একটি রিয়্যালিটি উপন্যাস || দশচক্র || সিদ্ধার্থ সিংহ ।। পর্ব ৫

ঋজুর ছেলে বাবি ক্লাস ফোরে পড়ে। নবনালন্দা স্কুলে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে সে যাতে খুব সহজেই ক্লাস ফাইভে ভর্তি হতে পারে, সে জন্য কাকে না ধরেছে ঋজু? রমাপদ চৌধুরী থেকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। শেষে নীরেনবাবুর জামাই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এ ডি এম আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে পর্যন্ত। তিনি বলেছিলেন, চেষ্টা করবেন। তবে ওখানে ভর্তির জন্য মিশনের উল্টো দিকে যে সব কোচিং সেন্টার আছে, সে রকম কোনও কোচিং সেন্টারে ছেলেকে ভর্তি করে দিতে বলেছিলেন তিনি। তিনিই দিয়ে দিয়েছিলেন এক মাস্টারের খোঁজ। ইনি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনেরই শিক্ষক। থাকেন মিশনের মেন গেটের উল্টো দিকে। বাড়িতেই কোচিং করান।

গত দু’বছর ধরে ঋজু ওর ছেলেকে প্রত্যেক রবিবার এখানে নিয়ে আসে। এখানে যারা পড়ে, তাদের বেশির ভাগ ছাত্রই নাকি মিশনে চান্স পায়। তাই দক্ষিণাও কিঞ্চিত বেশি। যে মাসে চারটে রবিবার সে মাসে দিতে হয় আটশো টাকা। আর যে মাসে পাঁচটা রবিবার, সে মাসে হাজার টাকা। মানে ক্লাস পিছু দুশো টাকা। সকাল সাতটা থেকে ক্লাস। সাড়ে ন’টার সময় মিনিট পনেরোর জন্য বিরতি। সে সময় বাইরে অপেক্ষা করা বাবা-মায়েরা তাঁদের বাচ্চাদের মুখে ঠেসেঠুসে খাবার ঢুকিয়ে দেন। তার পর আবার ক্লাস। চলে এগারোটা, সাড়ে এগারোটা আবার কোনও কোনও দিন বারোটা অবধি।

তা, এত দিন এই শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের কী শিখিয়েছেন, আজ তার চূড়ান্ত পরীক্ষা। মিশনে সিট মাত্র ষাটটা। তিরিশটা বাংলা মাধ্যমের। তিরিশটা ইংরাজি মিডিয়ামের। অথচ পরীক্ষা দিচ্ছে প্রায় হাজার সাতেক ছাত্র।

শুধু ঋজু নয়, ছেলের পরীক্ষা, তাই ওর বউ ভারতীও সঙ্গে এসেছে। বাবি পরীক্ষা দিতে ঢুকে যেতেই ভারতীকে ‘একটু আসছি’ বলে ঋজু মিশন চত্বর থেকে বেরিয়ে পড়ল।

ঘড়িতে তখন দশটা বেজে গেছে। আজ রবিবার। ছুটির দিনে কণিকা একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। এতক্ষণে মনে হয় ও উঠে গেছে। না উঠলেও, ফোন করলে নিশ্চয়ই উঠে যাবে। ওকে বলে দেওয়া দরকার, বাবি পরীক্ষার হলে ঢুকে গেছে।

ফর্ম ফিল-আপের সময় নানান খুঁটিনাটি তথ্যের সঙ্গে, যদি থাকে, একটা মোবাইল নম্বর দিতে বলেছিল ওরা। ঋজুর নিজের কোনও মোবাইল নেই দেখে কণিকার নম্বরটাই দিয়েছে। ওকে না জানালে হয়!

বুথ থেকে ফোন করতেই ওর মেয়ে ধরল। ছোট বাবি না বড় বাবি ও বুঝতে পারল না। সামনাসামনি দেখলেও প্রথম প্রথম ও বুঝতে পারত না, কোনটা ছোট আর কোনটা বড়। দু’জনেই ক্লাস ইলেভেনে পড়ে। লোকে বলে, ছোটবেলায় যতই একই রকম দেখতে থাকুক না কেন, যমজ বাচ্চারা যত বড় হয়, ততই নাকি তাদের মধ্যে পার্থক্য ফুটে উঠতে থাকে। কিন্তু ছোট বাবি আর বড় বাবির মধ্যে ও কোনও পার্থক্যই খুঁজে পেত না। তখন কণিকাই এক দিন বলে দিয়েছিল, যার চুল বফ বফ করে কাটা, সে ছোট। কিন্তু ফোনে গলার স্বর শুনে ঋজু বুঝবে কী করে, বফ বফ চুল ধরেছে না লম্বা চুল! ও বলল, মা উঠেছে?

— কখন…

— মাকে দাও।

— মা তো নেই আঙ্কেল।

— কোথায় গেছে?

— বেলুড়ে।

— বেলুড়ে?

— হ্যাঁ। কাল রাতে দাদু ফোন করেছিল। দিদুনের শরীর খুব খারাপ। ফোন পেয়ে মা কাল রাতেই যেতে চেয়েছিল। কিন্তু অত রাতে তো গাড়িটারি কিছু পাবে না। তাই যায়নি। আজ সক্কালবেলায় উঠেই মা চলে গেছে।

— কখন আসবে কিছু বলেছে?

— কই, না তো।

ফোনটা কেটেই ফের টপাটপ বোতাম টিপল ওর মোবাইলের। আবার মেয়ের গলা— হ্যালো?

— মা মোবাইল নিয়ে যায়নি?

— না গো। এই তো ড্রেসিং টেবিলের ওপরে পড়ে আছে দেখছি। তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে গেছে তো, হয়তো নিয়ে যেতে ভুলে গেছে।

— একা গেছে?

— হ্যাঁ।

— একটু দরকার ছিল… দাদুর বাড়ির নম্বরটা দেবে?

— দাদুর বাড়ির নম্বর! একটুখানি কী যেন ভাবল মনে হয়, তার পরে বলল, দাদুর বাড়িতে তো ফোন নেই।

— দাদুর বাড়িতে ফোন নেই! খুব অবাক হল ঋজু। কই, কাল অত রাতে যখন কথা হল, তখনও তো ও কিছু বলল না! এমনিতে রবিবার রবিবার মহাদেববাবু বাড়ি থাকেন না। চলে যান ক্লাইভ হাউস। সেখানে ওঁর একটা ফ্ল্যাট আছে। ওঁর মানে, ওঁর কেনা নয়। ওঁর কোন এক ছাত্রের ফ্ল্যাট। ফাঁকা পড়ে ছিল। উনি সেটা নিয়েছিলেন। যে ক’মাস থাকবেন, সে ক’মাসের ভাড়াও দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু শোনা যায়, উনি নাকি কোনও দিন এক পয়সাও দেননি। বহু দিন হয়ে গেছে ফ্ল্যাটটা আটকে রেখে দিয়েছেন। যার ফ্ল্যাট সেই ছাত্রটা ফোন করলে, উনি এখন তার ফোনটাও ধরেন না। সেই ফ্ল্যাটে উনি মাঝে মাঝে থাকেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। যারা পি এইচ ডি বা ডক্টরেট করছে, তাদের গাইড করেন। তাই রবিবার হলেই কণিকার বাড়ি চলে যায় ঋজু। ওখানেই খাওয়াদাওয়া করে। সারা দিন থাকে। কণিকার লেখা কবিতাগুলি ঠিকঠাক করে দেয়। কী করলে গল্পটা আরও ভাল হবে, কী ধরনের বিষয় নিয়ে লিখলে লোকে নেবে, বুঝিয়ে দেয়। কখনও সখনও নিজেও লিখে দেয়। নিজে যেখানে যেখানে লেখা পাঠায়, তার সঙ্গে ওর লেখাও দিয়ে দেয়।

কিন্তু এগুলি সবই হয় বিকেলের পরে। তার আগে খাওয়াদাওয়া। ঘুম। দু’মেয়ে চলে যায় পাশের ঘরে। বড় ঘরে ওরা দু’জন। যাওয়ার সময় মেয়েরাই দরজা টেনে দিয়ে যায়। কচিৎ-কদাচিৎ যখন মহাদেববাবু বাড়ি থাকেন, ডাইনিং টেবিলে বইপত্র ছড়িয়ে এ ঘরের দিকে পিঠ দিয়ে লেখালিখি করেন, তখনও এ ঘরে ওদের মা আর ঋজু থাকলে, ওরা দু’বোন ও ঘরে পড়তে যাবার সময় ফালতু ফালতু কারেন্ট পুড়ছে বলে, এ ঘরের লাইট নিবিয়ে টান-টান করে পর্দা টেনে দিয়ে যায়।

বিকেল বা সন্ধের দিকে ঋজু কফি খেতে চাইলে অনেক সময় কণিকাই কোনও মেয়েকে ডেকে বলে, মহাদেববাবুকে বল তো একটু কফি বানাতে।

ঋজু এ ঘর থেকেই শুনতে পায়, ওরা তাদের বাবাকে বলছে, এই যে মহাদেববাবু, মা আপনাকে কফি করতে বলছে, শুনতে পেয়েছেন তো? পরে আবার বলবেন না, শুনতে পাইনি।

ও বহু ফ্যামিলি দেখেছে, কিন্তু এ রকম ফ্যামিলি এর আগে ও কখনও দেখেনি।

ওনার সঙ্গে তোমাদের এ রকম সম্পর্ক কেন? একদিন কথায় কথায় জানতে চেয়েছিল ও। তখন কণিকা অনেক কথা বলেছিল। তার মধ্যে যেমন ছিল, মহাদেববাবু কোনও পে রোলে নেই। উনি কোনও স্টাফ নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রোজেক্টে কাজ করেন মাত্র। সামান্য মাইনে পান। তাও ঠিক মতো নয়। মিথ্যে কথা বলে উনি ওকে বিয়ে করেছেন। এক বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার দায়ে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিলেন। এক সময় খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় ভাষা পরিষদের স্নেহলতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। যে দিন দুই মেয়ে জন্মাল, সে দিন হাসপাতাল থেকে ওষুধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ আনতে যাবার নাম করে বেরিয়ে, সেই যে উনি উধাও হন, টানা তিন বছর তাঁর আর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। এখনও বাজার করতে হলে তাঁর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন তিনি। এই যে তার অফিসের ফ্ল্যাট উনি ভোগ করছেন, লাইট জ্বালাচ্ছেন, ফ্যানের হাওয়া খাচ্ছেন, যখন তখন ফোন করছেন, তার জন্যও কোনও দিন একটা পয়সাও তিনি দেন না। তাই নাকি ও মেয়েদের স্ট্রিক্টলি বলে দিয়েছে, ওর অবর্তমানে, টিউশুনি নিতে যাবার সময় ওরা যদি দেখে, বাড়িতে উনি আছেন, তা হলে যেন ফোনটা লক করে দিয়ে যায়। মেয়েদের যাবতীয় খরচখরচা নাকি কণিকাই চালায়।

ছোটবেলা থেকে মায়ের প্রচুর কষ্ট দেখেছে ওরা। বাবার সঙ্গে তাদের মায়ের কী সম্পর্ক, ওরা তা জানে। তাই অন্য কারও সঙ্গে মাকে খুশিতে থাকতে দেখলে, ওরা তা হাসি মুখেই মেনে নেয়।

কিন্তু তা বলে এতটা! সে দিন যখন পিঠের নীচে দু’-তিনটে বালিশ দিয়ে খাটের ওপর আধ শোয়া অবস্থায় চায়ে চুমুক দিচ্ছিল ঋজু, তখন বড় বাবি কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে চোখ নাচিয়ে বলেছিল, আঙ্কেল আজ ক’বার হল?

ও কী বলতে চাইছে, বুঝতে পেরে হাসি হাসি মুখে আঙুল দেখিয়ে ও বলছিল, এক বার।

— উহু। মিথ্যে কথা। দু’বার। পাশের ঘর থেকে আমি শুনেছি।

— ধ্যাত। এ ছাড়া আর কোনও শব্দ ছিল না ঋজুর কাছে।

 

আলাপের কয়েক দিনের মধ্যে কণিকা বলে দিয়েছিল, আমাকে পেতে গেলে কিন্তু আগে আমার মেয়েদের মন জয় করতে হবে। ঋজু তাই-ই করেছিল। ফোন করলে আগে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলত। তার পরে কণিকার সঙ্গে। প্রথম যে দিন ওদের বাড়ি গিয়েছিল, সে দিন প্রচণ্ড গরম। ওদের জন্য ক্যাডবেরি আর দু’লিটারের একটা থামস আপ-এর বোতল নিয়ে গিয়েছিল ও। ছোট জন ওটা দেখে বলেছিল, অন্য কোনও রঙের পেলেন না!

তার পর থেকে ওদের জন্য ও আর কোনও দিনই ওই রঙের সফ্‌ট ড্রিংস নিয়ে যায়নি। মাঝে মাঝে এ ফল ও ফল নিয়ে গেলেও ভুল করেও কখনও কালোজাম বা কালো আঙুর নিয়ে যায়নি।

দ্বিতীয় দিন যখন ওদের বাড়ি গিয়েছিল, চা দিতে এসে ছোট বাবি ওর সামনেই দুম করে ওর মাকে বলেছিল, মা, আমি কিন্তু তোমার কাছে তিনশো টাকা পাই। মনে আছে? কাল কিন্তু দিয়ে দিও।

চায়ের প্লেট বিছানার পাশে রেখে সঙ্গে সঙ্গে পার্স থেকে তিনটে একশো টাকার নোট বার করে ছোট বাবির দিকে এগিয়ে দিয়েছিল ও। মেয়ে যখন কিছুতেই নিতে চাইছে না, ও তখন বলেছিল, এটা তোমার মায়েরই টাকা। আমার কাছে রাখা ছিল। নাও, নাও। যদি না নাও, তা হলে ভাবব, তোমরা আমাকে নিজের লোক মনে করো না।

কণিকাও বলেছিল, নে না। এত করে বলছে। একই তো। আঙ্কেল কি বাইরের লোক নাকি?

ধীরে ধীরে ঘরেরই লোক হয়ে উঠেছিল ও। যে সপ্তাহে রাত আটটা থেকে ডিউটি থাকত, ও কণিকাকে অফিস থেকে নিয়ে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিত। খানিকক্ষণ কাটাত। তার পর অফিসে যেত। যে দিন কণিকা বলত, আজকে একটু তেরো নম্বরে নামব। ঋজু বুঝে যেত, ও আজ বাজার করবে। মাছ মাংস সবজি যা কিনত, ঋজু দাম দিয়ে দিত। প্রথম প্রথম কণিকা মৃদু আপত্তি করত ঠিকই, পরের দিকে এটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। ওখানকার দোকানদাররা পর্যন্ত ঋজুকে চিনে গিয়েছিল।

সব ঠিকই আছে। কিন্তু ও হঠাত্‌ বেলুড়ে গেল কেন! আর গেলই যদি, ফোনটা নিয়ে গেল না কেন! কাল রাতে ও যখন অফিস থেকে বেরোয়, তখনও কণিকার সঙ্গে ওর কথা হয়েছে। ‘কাল দুপুরে যাচ্ছি’ বলাতে কণিকা ওকে বলেছিল, এটা কোরো না গো। কাল তো তোমার ছেলের পরীক্ষা। তুমি তো বাবা। তোমার থাকা দরকার। একদম পাগলামো কোরো না। আমি তো আছিই। কোত্থাও যাব না। দরকার হলে ফোন করে নিও।

শেষ কথাটার মধ্যে, ঋজু যে ওকে সন্দেহ করে, সেই সন্দেহটা দূর করার একটা প্রচ্ছন্ন প্রলেপ দেখতে পেয়েছিল ঋজু। তাই আর কথা বাড়ায়নি। কিন্তু এটা কী হল! কোনও ফোন নেই, কিচ্ছু নেই, দুম করে চলে গেল! ওর বাবা কি কাল রাতে সত্যিই ফোন করেছিল! কখন!

আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। দোলের দিন ওরা রিনাদের বাড়ি যাবে। সেই মতো সকাল সাতটার মধ্যে ভারতীয় বিদ্যাভবনের সামনে পৌঁছে গিয়েছিল ঋজু। কণিকা রেডিই ছিল। চার তলার জানালা দিয়ে ওকে দেখেই মিনিট কয়েকের মধ্যে নেমে এসেছিল। এমনি দিনেই অত দূরে সরাসরি কোনও অটো পাওয়া যায় না। তার ওপর সে দিন আবার দোল। অগত্যা একটা অটো রিজার্ভ করে ওরা রওনা হয়ে গেল সল্টলেক সেক্টর ফাইভ ছাড়িয়ে সোজা মহিষবাথানের দিকে। আগে নাকি গোয়ালারা ওখানে মহিষদের স্নান করাতে নিয়ে যেত। তার থেকেই এই নাম। ২৩৯/এ বাস স্ট্যান্ডের কাছে এসে অটোচালক বলল, ব্যাস। এ বার আপনাদের একটু হেঁটে যেতে হবে।

ওরা হাঁটা দিয়েছিল। এখানে পর পর অনেকগুলি ভেড়ি। টলটল করছে জল। হুহু করে হাওয়া বইছে। কণিকার শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়ছে। রিনাদের ‘আমরা এসে গেছি’ জানিয়ে দেবার জন্য ব্যাগ থেকে ফোন বার করেও ফোন না করে, ফোনটা টেপাটেপি করতে লাগল কণিকা।

ঋজু বলল, কী হল?

— বাইশখানা মিসড কল। আমরা কথার মধ্যে এত বিভোর হয়ে ছিলাম, শুনতেই পাইনি।

— একেই বলে প্রেম। কার নম্বর দেখো।

— কে জানে! চেনা নম্বর না। কয়েকটা নম্বর আবার বুথের। এত সকালে বুথ থেকে কে করল!

— কী করে বুঝলে বুথ থেকে?

— আট দেখে।

তখনই আবার ফোন। ঋজু বলল, ধরো। যে করেছিল, সে-ই হয়তো আবার করেছে।

ফোনটা অন করে কণিকা খুব নিচু স্বরে কথা বলতে লাগল। একদম পাশে পাশেই হাঁটছিল ঋজু। কিন্তু ও যে কী বলছে, কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না সে। ফোন ছাড়তেই ও জিজ্ঞেস করল, কে?

কণিকা বলল, ছোটকু।

— ছোটকুটা আবার কে?

— লোপার।

— লোফার?

— আরে বাবা, লোফার না। লোপার, লোপার। আমাদের অফিসে লোপা আছে না, ওর সঙ্গে ওর।

— ও-ও প্রেম করে?

— না। তুমি শুধু একাই করো। এই জানো কী হয়েছে, সে দিন ওর শাশুড়িকে অফিস যাচ্ছি বলে বেরিয়ে ছোটকুর সঙ্গে ও গড়চুমুক গিয়েছিল। ওহ্‌, তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি, ওর কথা বলতে গিয়েই মনে পড়ে গেল। এর মধ্যে একটা কাণ্ড হয়েছে। লোপা তো ওর বরের সঙ্গে রোজ মর্নিং ওয়াক করতে যায়। এই ক’দিন আগে ও রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল, হঠাত্‌ কোত্থেকে একটা ছেলে দৌড়ে এসে ওর দুদু টিপে দে ছুট।

— সে কী? ওর বর ছিল না সঙ্গে?

— না। ওর বর একটু এগিয়ে গিয়েছিল।

— কথা বলতে বলতে রিনাদের বাড়ির সামনে এসে গিয়েছিল ওরা। আবার ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ঋজু বলল, তোমার ফোন বাজছে।

কণিকা বলল, বাজুক, ধরলেই বকবক করতে হবে।

 

ঋজু আবিরের একটা প্যাকেট নিয়ে গিয়েছিল। ওটা খোলাই হল না। খোলা হল মদের বোতল। চিপসের প্যাকেট। রিনা আর আশিসের সঙ্গে পরামর্শ করে কণিকা নাকি গত কালই এগুলি কিনে রেখেছিল। ঋজুকে চমকে দেওয়ার জন্য।

গ্লাসে ঢালামাত্র ঢগঢগ করে খেয়ে নিল আশিস। রিনাও তাই। ওদের দেখাদেখি কণিকাও এক চুমুকে শেষ করে দিল গ্লাস।

ঋজুর মনে পড়ে গেল রাধানাথ মন্ডলের কথা। ওর একটা প্রকাশনা সংস্থা ছিল— সংবাদ। ও লোককে বলত, এটা একটা শিক্ষিত প্রকাশন সংস্থা। যেন বাকি প্রকাশকেরা সব মুখ্যু। পরে সেটা সমর নাগ কিনে নেন। এখন তো তাঁর বিশাল ব্যাপার। বেঙ্গল শেল্টার নামে একটা প্রতিষ্ঠানই তৈরি করে ফেলেছেন। কলেজ স্ট্রিট মার্কেট ভেঙে নতুন ভাবে বানাচ্ছেন।

সেই সংবাদ থেকে গল্পপত্র নামে একটি পত্রিকা বের হত। অনেক তরুণ লেখকেরা সেখানে আসতেন। আসতেন নবকুমার বসু, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, অমর মিত্র। কে নয়? আড্ডা হত। মাঝে মাঝেই মদের আসর বসত। সেই সংবাদে কাজের জন্য একটি মেয়েকে পাঠিয়েছিলেন অর্ধেন্দু চক্রবর্তী। রাধানাথ তাকে চাকরি দেয়নি। কিন্তু একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেবে বলে তাকে নিয়ে প্রায়ই এ দিকে ও দিকে কাটাত।

রাধানাথ চাকরি করত। ফলে সংবাদে সময় দিতে পারত না। একটা ছেলে রেখেছিল। সে-ই দোকান খুলত। দেখাশোনা করত। হিসেবপত্র রাখত। একদিন সেই মেয়েটির সামনেই রাধানাথ তাকে বলল, আমি থাকি না-থাকি, ও যখন আসবে, যা টাকা-পয়সা চাইবে, ক্যাশ থেকে দিয়ে দিবি, কেমন?

ছেলেটি অবাক। তার মাইনেটা পর্যন্ত যে ঠিক সময়ে দেয় না, চাইলে, আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি করে সারা মাস ধরে কিছু কিছু করে দেয়, সে বলছে এই কথা! না। বেশিক্ষণ ধন্ধে থাকতে হয়নি তাকে। খানিকক্ষণ পরেই, ওই মেয়েটিকে বাসে তুলে দিয়ে এসে রাধানাথ বলল— ওর সামনে তোকে যে কথাটা বললাম, সেটাকে আবার সত্যি ভেবে নিস না।

ছেলেটি বলল, তা হলে? উনি যদি বলেন, তোমার সামনেই তো উনি সে দিন বলে গেছেন, তখন?

— বলে দিবি, আজ খুব খারাপ অবস্থা। কোনও বিক্রিবাট্টা হয়নি। ক্যাশে টাকা নেই, ব্যাস।

সেই মেয়েটি আবার একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম করত। দু’-এক বার তাকে নিয়েও সংবাদে এসেছিল সে। এক বার এমন দিনে এল, সে দিন ও রকমই এক মদের আসর বসেছিল। গ্লাসে গ্লাসে মদ ঢালার সময় রাধানাথ ওই ছেলেটিকে বলেছিল, চলবে নাকি?

ছেলেটি মাথা কাত করেছিল। তাকে গ্লাস দিতেই, সে এক চুমুকে গ্লাস ফাঁকা করে দিয়েছিল। তখন ওই মেয়েটি বলেছিল, দেখলেন তো, একেবারে চোস্ত্‌।

রাধানাথ বলেছিল, ও কোনও দিন মদ খায়নি।

— কী করে বুঝলেন? মেয়েটি জিজ্ঞেস করেছিল।

রাধানাথ বলেছিল, যারা মদ খায়, তারা কখনও এ ভাবে খায় না। তারিয়ে তারিয়ে, রেলিশ করে খায়। চোখ দিয়ে ছেলেটিকে দেখিয়ে বলেছিল, গ্লাসে ওর চুমুক দেওয়া দেখেই বুঝতে পেরেছি, এ ব্যাপারে ও একেবারেই নবীশ।

এখন আশিস, রিনা আর কণিকার মদ খাওয়া দেখে ঋজুরও মনে হল, এর আগে এরা কখনও মদ খায়নি। এই প্রথম খাচ্ছে। যখন মদ খাওয়া চলছে, আবার ফোন বেজে উঠল কণিকার। তার পর আবার। আবার। দু’মিনিট ছাড়া ছাড়া ফোন। অথচ প্রতি বারই স্কিনে নম্বর দেখেই ও আর ফোনটা ধরছে না। একটু নেশা-নেশা মতো হয়ে গিয়েছিল সবারই। ঋজু হঠাত্‌ জানতে চাইল, কার ফোন? ধরছ না কেন? দেখি নম্বরটা? ফোনটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছিল ঋজু। কিন্তু তার আগেই ঝট করে ফোনটা তুলে নিল কণিকা। ঋজুও ছাড়বার পাত্র নয়। ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। তার পরে ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি। সেই নিয়ে কথা কাটাকাটি। জোর জবরদস্তি। শেষে কণিকা বলল, দিতে পারি, কিন্তু তার আগে কথা দাও, ফোনটা তুমি ধরবে না।

ফোনটা নিয়ে ঋজু দেখল, একটা নম্বর থেকেই বারবার ফোন আসছে। যখন দেখছে, ঠিক তখনই আবার বেজে উঠল সেটা। অথচ কণিকাকে কথা দিয়েছে দেখে ও ফোনটা ধরল না। কণিকার কাছে দিয়ে দিল।

কিছুক্ষণ পরে নেশাটা একটু চড়তেই ও বলেছিল, যে ফোন করছে, তাকে তুমি নিশ্চয়ই চেনো। কে করছে বলো? তোমার সঙ্গে তার কী সম্পর্ক?

বারবার জেরায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল কণিকা। কোনও রকমে উঠে, ঋজুর হাত ধরে টানতে টানতে ঝুল বারান্দায় নিয়ে গিয়ে বলেছিল, ও আর তুমি একই সঙ্গে আমার জীবনে এসেছ।

— তার মানে?

— ও আমাদের অফিসেই কাজ করে।

— কী নাম?

— এ কে পাল, অরুণকুমার পাল।

— কোথায় থাকে?

— কাঁচরাপাড়ায়।

— তুমি তো আমাকে এ সব কথা কখনও বলোনি।

— বহু বার চেষ্টা করেছি। বলতে পারিনি।

— ঠিক আছে। এখন তো বলেছ। এ বার আমি বলি? তুমি আমাদের মধ্যে থেকে যে কোনও একজনকে বেছে নাও। একসঙ্গে দু’জনকে নিয়ে খেলা কোরো না।

কণিকা বলেছিল, আমাকে একটু ভাববার সময় দাও। কথাটা শুনে এক ঝটকায় নেশাটা কেটে গিয়েছিল ঋজুর। তখনই ও বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল। কিন্তু আশিস আর রিনা ওকে আটকায়। কণিকাও এমন ভাবে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় যে, পুরো পরিবেশটাই পাল্টে যায়।

সে দিন রাতে আর বাড়ি ফিরতে পারেনি ঋজু। কী বলতে কী বলে ফেলবে, কিংবা কথা বলতে বলতে যদি কথা জড়িয়ে যায়, সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড হবে, কারণ ও তো মদ-টদ খায় না। ওর বউ আবার কী ভাববে, হয়তো ভাববে এই বয়সে আবার কার পাল্লায় পড়ল! তাই আশিসই ফোন করে ভারতীকে জানিয়ে দিয়েছিল, আজকে একটু উল্টোপাল্টা খাওয়া হয়েছে তো,,, ও দু’-তিন বার বমিটমি করেছে। একটু কাহিল হয়ে পড়েছে। এখন ঘুমোচ্ছে, না-হলে কথা বলিয়ে দিতাম। আজ তো দোলের জন্য গাড়িটারিও কম। এত রাতে ওকে একলা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছি না। আজকের রাতটা এখানে থাক। আমার মনে হয়, একটু ঘুমোলেই ঠিক হয়ে যাবে। কাল সকালে ওকে পাঠিয়ে দেব। আপনি আবার চিন্তা করবেন, তাই ফোন করলাম।

কণিকাও ফোন করল বাড়িতে। মেয়েকে বলে দিল, মহাদেববাবু যদি জিজ্ঞেস করে আমি কোথায়, তা হলে বলবি, আমি রিনাদের বাড়িতে আছি। রাতে এখানেই থাকব। কাল সকালে ফিরব। আর আঙ্কেল ফোন করলে বলবি, দাদু ফোন করেছিল। দিদুনের শরীর খুব খারাপ। মা বেলুড়ে গেছে। মোবাইলটা নিয়ে যেতে ভুলে গেছে।

ঝট করে শক খেল ঋজু। ভুলে গেল, ছেলে এখন পরীক্ষা দিচ্ছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। ভুলে গেল, বউকে একটা গাছের তলায় বসিয়ে, ও বলে এসেছে ‘তুমি এখানে থাকো, আমি একটু আসছি’। একটু মানে কতক্ষণ? ওর মাথা আর কাজ করছে না। ওর মনে হল, ও যা শুনল, সেটা আসলে সে দিনের সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি। তার মানে, কণিকা যা শিখিয়ে দেয়, ওর মেয়েরা তাই বলে। তা হলে কি ও আজ অন্য কারও সঙ্গে আছে! কিন্তু কার সঙ্গে! সে দিন যে নম্বর থেকে ঘনঘন ফোন আসছিল, তাঁর সঙ্গে কি? সেই নম্বরটা ওর মাথার মধ্যে গেঁথে আছে। ও চটপট সেই নম্বরে ফোন করল— কণিকা আছে?

— এটা তো কণিকার নম্বর নয়। কে বলছেন? ও প্রান্ত থেকে এক গুরুগম্ভীর পুরুষ-কণ্ঠ।

ও বলল, আমি, আমি ঋজু। কণিকার বন্ধু।

— এই নম্বরটা পেলেন কোত্থেকে?

— না, আসলে দোলের দিন এই নম্বর থেকে ওর মোবাইলে বারবার ফোন আসছিল তো, তাই এই নম্বরে করলাম।

— দোলের দিন? আপনি জানলেন কী করে?

— আমি ওর সঙ্গে ছিলাম।

— ও, আপনি সে দিন ওর সঙ্গে বেলুড়ে গিয়েছিলেন?

— বেলুড়ে নয়। অন্য জায়গায়। ও আমার বিশেষ বন্ধু।

— বিশেষ বন্ধু মানে? একদম বাজে কথা বলবেন না। ও সে দিন বেলুড়ে গিয়েছিল। ওর মা ভীষণ অসুস্থ। ও এত টেনশনে ছিল যে মোবাইলটা পর্যন্ত নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল। টিনা-মিনা আমাকে বলেছে।

— টিনা-মিনা! ঋজু ওর ভাই-বোন, তাদের ছেলেমেয়ে, এমনকী ওর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন অনেকেরই নামধাম জানে। কিন্তু ওর মুখে কোনও দিন এই নাম তো ও শোনেনি! ও বলল, কে টিনা-মিনা?

— সে কী, আপনি বলছেন ওর বন্ধু, বিশেষ বন্ধু, আর ওর মেয়েদের নামটাও জানেন না? রাখুন। যত্তোসব। বলে ফোনটা কেটে দিল। ঋজু স্তম্ভিত। ওর মেয়েদের নাম টিনা-মিনা! ওদের নাম তো বড় বাবি, ছোট বাবি! আমি কি কোথাও ভুল করছি! আচ্ছা, লোকটা কেমন যেন কেটে কেটে কথা বলছিলেন, না! তা হলে কি কণিকা ওঁর সঙ্গেই আছে! লোকটা ওর ইশারা অনুযায়ী কথা বলছিলেন! হতে পারে! খানিক পরে আবার ফোন করল ওই নম্বরে।

ফোনটা ধরেই লোকটা বললেন, কী হল?

— বিশ্বাস করুন, সে দিন ও আর আমি রিনাদের বাড়িতে ছিলাম। সারা রাত আমরা দু’জন একসঙ্গে এক ঘরে কাটিয়েছি।

— একদম বাজে কথা বলবেন না। ও যখন চাইছে না, কেন ওকে বিরক্ত করছেন? জানেন, ওর সঙ্গে আমার চার বছরের সম্পর্ক। কোনও ছাত্র যে কোনও শিক্ষকের বউকে এই ভাবে বিরক্ত করতে পারে, তা আপনাকেই প্রথম দেখলাম।

ছাত্র! আমি তো কখনও মহাদেববাবুর ছাত্র ছিলাম না! তা হলে কি ও ওর মতো করে ওনাকে সাত-পাঁচ বুঝিয়েছে! ও বলল, বিশ্বাস করুন, আমি এতটুকুও মিথ্যে বলছি না। দরকার হলে আপনি রিনাদের বাড়িতে ফোন করে জেনে নিতে পারেন।

— ওদের নম্বর কত?

কাঁধের ঝোলা হাতড়ে ছোট্ট ডায়েরিটা বার করে রিনাদের বাড়ির ফোন নম্বরটা ও দিয়ে দিল। নম্বরটা নিয়েই ফোনটা কেটে দিলেন তিনি।

রিনাদের নম্বরটা বার করাই ছিল। দোলের দিন তারা যে ওদের বাড়িতে ছিল, কেউ ফোন করে জানতে চাইলে, তাকে যাতে রিনারা সত্যি কথাটা বলে দেয়, সেটা বলার জন্যই ও ফোন করল ওদের। কিন্তু যত বারই ফোন করল, শুধু এনগেজড আর এনগেজড।

উনি যত বারই ফোন করুন না কেন, এখন তো এনগেজড, পাবেন না। পরে যেন করেন। বলার জন্য লোকটাকে ফোন করতেই তিনি ধমকে উঠল,কী ব্যাপার? এত জ্বালাচ্ছেন কেন বলুন তো? কী চাই?

— না, বলছিলাম কি, রিনাদের ফোনটা এনগেজড, এখন হয়তো পাবেন না। পরে করলে নিশ্চয়ই পাবেন। সেটা বলার জন্যই…

— ওদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওরা তো ডিনাই করল।

— ডিনাই করেছে!

কথা শেষ হবার আগেই লোকটা লাইন কেটে দিলেন। তা হলে কি এতক্ষণ ওদের সঙ্গেই উনি কথা বলছিলেন! তা হলে তো ওদের নম্বরটা এখন ফাঁকা। ও ফের রিনাদের নম্বরে ডায়াল করল। রিনাই ধরল।

ঋজু বলল, আপনাদের কেউ ফোন করেছিল নাকি?

রিনা বলল, হ্যাঁ।

— দোলের দিন আমরা যে আপনাদের বাড়িতে ছিলাম, আপনি কি সেটা অস্বীকার করেছেন?

ঢোক গিলে রিনা বলল, আসলে, আমাদের বাড়িতে আপনারা রাত কাটিয়েছেন, এটা জানাজানি হলে আমাদের সম্পর্কে লোকে কী ভাববে বলুন তো… তা ছাড়া কণিকারও মান-সম্মানের ব্যাপার আছে। যতই হোক, মেয়ে তো, ওর কথা ভেবেই…

— ও।

আর একটা কথাও বলেনি ঋজু। হাঁটতে হাঁটতে যখন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ঢুকল, বুঝতে পারল, অনেকক্ষণ আগেই পরীক্ষার পাট চুকে গেছে। এ দিকে ও দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুটিকতক মাত্র লোক। বাঁ দিকের বিল্ডিংয়ের চাতালে ওর বউ আর ছেলে বসে আছে। কী ভাবে যে ও বাড়ি ফিরেছে, ও-ই জানে। সারা দিন শুধু ছটফট করেছে। সন্ধের দিকে ল্যান্ড ফোনে ফোন করতেই কণিকার গলা— হ্যালো?

— কোথায় গিয়েছিলে?

এক মুহূর্ত চুপ। তার পরেই ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল— কে বলছ? হঠাত্‌ গলার স্বর পাল্টে গেল। মহাদেববাবুর গলা ও চেনে। এটা তার গলা। তবে কি ওর গলা শুনেই রিসিভারটা মহাদেববাবুর হাতে দিয়ে দিল কণিকা!— একটু কণিকাকে দিন না।

— কণিকা! এ কী! তুমি বউদির নাম ধরে কথা বলছ কেন?

— না মানে, দিন না ওকে…

— ও সেই সক্কালবেলায় বেলুড়ে গিয়েছিল তো, ওর মায়ের কাছে। ওর মা খুব অসুস্থ। সারা দিন খুব ধকল গেছে। এখন একটু শুয়েছে। কাল কোরো। ভাল আছ?

আর ভাল! ও আর কোনও কথা বলতে পারল না। শুধু মনে মনে বলল, বুঝেছি, সারা দিন কোন ধকল গেছে।

চলবে…


ধারাবাহিক একটি রিয়্যালিটি উপন্যাস || দশচক্র || সিদ্ধার্থ সিংহ ।। পর্ব ৫  ঃ লেখক, গল্পকার, ভারত


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন