গুণী অভিনেতা, নির্মাতা ও নাট্যকার সালাহউদ্দিন লাভলু। ক্যামেরার কবি হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয় তাকে। তার হাস্যরসাত্মক অভিনয় ও নির্মাণ দর্শকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। অভিনয়ের বাইরে প্রায় ২৬ বছর ধরে নাটক পরিচালনা করছেন তিনি। তার সঙ্গে সাম্প্রতিক ব্যস্ততা ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আপনি। একজন সালাহউদ্দিন লাভলুকে কী পরিচয়ে মানুষ মনে রেখেছে?
আমি সবসময় নিজেকে একজন নাট্যকমী বা নাটকের মানুষ মনে করি। নাটক আর চলচ্চিত্রের বাইরে আর কিছু বুঝি না। এভাবেই জীবনযাপন করি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ প্রথমত আমাকে অভিনেতা হিসেবেই চিনে, তারপর পরিচালক হিসেবে। অভিনয়টা না করলে চেহারাটা চিনত না; তখন নামে চিনত।
মিডিয়ার পালাবদলকে কীভাবে দেখেন?
সময়ই তো পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রতিটা সেক্টরই ডেভেলপ হচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে। সব পরিবর্তনই যে খুব ভালো সেটা বলা যাবে না। কিছু কিছু পরিবর্তন ভালো, কিছু খারাপ। আমাদের কালচারাল দিকটার কথা যদি বলি তাহলে বলব, একসময় আমাদের গোল্ডেন সময় ছিল। সেটা ৮০, ৯০ এর দশকের দিক। সে সময় সংস্কৃতির সুস্থ বিকাশ ঘটেছিল। সে সময়ে আমাদের যৌবনকাল ছিল। সেটা পার করে এসেছি। দুদান্ত সব নাটক, ফিল্ম, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সংগীত সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো কিন্তু কালজয়ী, তবে ইদানীং সময় পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু টেকনোলজিক্যাল পরিবর্তন তো হচ্ছেই। আগে নাটকের কাহিনি ছিল অনেক বেশি ফ্যামিলিনির্ভর। এখন তো সেই বিষয়টি অনুপস্থিত। সবার হাতে হাতে, মোবাইলে চলে আসছে সব। এখন যে ধরনের কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে একা একা দেখা ছাড়া তো উপায় নেই। এগুলোর কাহিনি ও কনটেন্ট হয়ে গেছে ১৮ প্লাস। এটা কতটা ভালো বা খারাপ হয়েছে সেটা বলা মুশকিল। এটা সময়ই বলে দেবে।
ভাইরাল বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আমি মনে করি, শিল্পের একটা আলাদা চরিত্র থাকা দরকার। প্রথমত এটা শিল্প, তারপর বাণিজ্য। ভাইরাল বিষয়টি এসে আমাদের সমাজের অনেক কিছুই কিন্তু খারাপ হয়েছে। এখন সবাই দেখে কোনটার ভিউ বেশি, কোনটা ভাইরাল হবে। ভাইরাল হতে হবে! আরে ভালো কাজ দিয়ে ভাইরাল হও। কিন্তু ভালো কাজ বাদে উল্টাপাল্টা কাজ দিয়ে ভাইরাল হওয়া বা ব্যক্তিগত ইস্যু দিয়ে নিজেকে সবার সামনে আনা কি ঠিক? নেগেটিভ ইস্যুকে পুঁজি করে ভাইরাল হওয়ার ট্যান্ডেন্সি এখন। মজার বিষয় হচ্ছে, বাণিজ্যিকভাবে ভাইরাল হওয়াটাই আবার মানুষের চাহিদা। আমরা তো একটা আইডোলজি নিয়ে বেড়ে উঠেছি। এখন সেই আইডোলজির অভাবটা ভীষণভাবে ফিল করছি।
এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে ছিল আপনার হৃদ্যতা। আজ তার জন্মদিন। তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই…
টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে এ টি এম ভাইয়ের আগমন কিন্তু আমার নাটকের মাধ্যমে। আমার ‘রঙের মানুষ’ দিয়ে। এরপর থেকে উনি যতদিন বেঁচে ছিলেন এমন কোনো নাটক নেই যে এ টি এম ভাই সেখানে নেই। এ টি এম ভাই ছাড়া আমি কখনো ভাবতেই পারতাম না। উনি অসাধারণ গুণী একজন মানুষ ছিলেন। বটগাছের মতো মানুষ। ভালো একজন মানুষ। আমাকে যে কী পরিমাণ স্নেহ করতেন তা বলে বুঝানো যাবে না। উনাকে পর্দায় দেখে যেটা বোঝা যায় বা মানুষ যেভাবে চরিত্র দেখে তাকে ভাবে, বাস্তবে তিনি অন্যরকম। উনার সঙ্গে মিশে বুঝতে পেরেছি উনার জ্ঞানের পরিধি অন্য লেভেলের ছিল। উনার কারণেই কিন্তু আমার ফিল্ম বানানো।
‘রঙের মানুষ’-এর পর এ সময়ে আরেকটা কেন রেভ্যুলেশন সম্ভব হচ্ছে না?
রঙের মানুষ আমরা যে সময়ে তৈরি করেছিলাম সে সময়ে এর পেছনে ছিলেন ড. সেলিম আল দীন, মাসুম রেজাসহ অনেক শিল্পী। তখন আনিসুর রহমান মিলনের প্রথম নাটক। আহমেদ রুবেল, তানিয়া আহমেদ, চঞ্চল থেকে শুরু করে সবাইতো আমরা একটা দুর্দান্ত রকমের মৌলিক কাজ করেছিলাম। সেসময় টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে যেরকম নাটক হতো, আমরা সেরকম না করে গ্রাম ও গ্রামের প্রত্যেকটি চরিত্রকে ডিফারেন্টভাবে দেখিয়েছি। গ্রামের প্রতিটি মানুষ সুখী, অনেস্ট, কোনো দুঃখ নেই-সেটাই দেখিয়েছি। যে কারণে মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল। ওইটার আদলে এখনো কিছু গ্রামের নাটক করা হচ্ছে। তবে আরেকটি ‘রঙের মানুষ’ তো আর হচ্ছে না।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন