ফিচার্ড মত-মতান্তর

বাংলাদেশে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ শুরু জিয়ার আমলে ১৯৭৯-তে 

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

বাংলাদেশে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ শুরু জিয়ার আমলে ১৯৭৯-তে  
।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র মৃত্যু’র পর ১৯৭৯ সালে ২য় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জিয়াউর রহমান তখন ক্ষমতাসীন। সেই নির্বাচনে জাতি প্রথম দেখলো ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারি’। আরো দেখলো নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু নির্যাতন। এই নির্বাচনে ভোটের কোন গুরুত্ব ছিলোনা, কারণ ফলাফল আগেভাগে ঠিক ছিলো। প্রহসনের নির্বাচনের সেই শুরু? আজো তা চলছে। কেউ জানেনা কবে এর শেষ হবে? জিয়া হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তার বিজয়ী হন। এই ছিলো একটি প্রহসন, লোক দেখানো এবং সময় ক্ষেপন। নির্বাচনটি হয় ১৫ নভেম্বর ১৯৮১, এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন ২৪শে মার্চ ১৯৮২।

এ প্রসঙ্গে প্রায়ত: সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের একটি চমৎকার উক্তি আছে। বায়তুল মোকাররমে এক ভাষণে তিনি বলেন, দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলো, প্রতিদ্বন্ধিতা করলেন ডঃ কামাল হোসেন ও বিচারপতি আবদুস সাত্তার; জনগণ ভোট দিলো ড: কামাল-কে, জিতলেন সাত্তার সাহেব এবং ক্ষমতায় বসলেন হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ’। সুরঞ্জিতদার এই বক্তব্য থেকে তখনকার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বোঝা যায়! এটি আমি নিজ-কানে শুনেছি। বাংলাদেশে আরো দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়, সেটা ১৯৭৮ ও ১৯৮৬। ঐসব নির্বাচনে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিলো না, বরং তা ছিলো অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার প্রক্রিয়া?

১৯৮৬ সালে জাতীয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়, বিএনপি নেয়না। প্রচার আছে যে, আওয়ামী লীগ তখন সরকারের সাথে আপোষ করেছিলো। আসলে তা নয়, বিএনপি চালাকি করে আওয়ামী লীগকে বোকা বানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে পড়ে। ঘটনাটি ছিলো এরকম: নির্বাচনে যাবে কি যাবেনা প্রশ্নে তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় জোটের মধ্যে অনেকগুলো বৈঠক হয়। চূড়ান্ত বৈঠকে গভীর রাতে যৌথ সিদ্ধান্ত হয় যে, উভয় জোট নির্বাচনে অংশ নেবে এবং পরদিন তারা পৃথক পৃথকভাবে তা সাংবাদিকদের জানাবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আওয়ামী পরদিন সকালে জানিয়ে দেয় যে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি বিশ্বাসভঙ্গ করে। তারা প্রচার করে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে হাত মিলিয়েছে।

এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকার গঠন করে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে বসে। শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হিসাবে এই প্রথম ক্ষমতার স্বাদ পান। ধারণা করি, ঐসময় তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন যে, দলকে ক্ষমতায় নিতেই হবে। সেই সুযোগ এসেছিলো ১৯৯১ সালে। অতিরিক্ত কনফিডেন্সের কারণে তখন আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা বিরোধী নেত্রী হন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। এরশাদ জেলে যান। শেখ হাসিনা তখন সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন। যদিও তখন সেটি কেউ আমলে নেয়নি, প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগকে তখন জোর করে হারানো হয়েছিলো। এখানে জামাতের ভূমিকা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেলাম।

১৯৮৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বস্তুত: এরশাদ একাই প্রার্থী ছিলেন, সাথে ক’জন নাম না জানা প্রার্থী ছাড়া। ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনের কথা কিছুটা বলা দরকার। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট বা বিএনপি জোট অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি খালি মাঠে বিজয়ী হয়। আসম রব তখন ‘গৃহপালিত’ বিরোধী নেতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন, তিনি মতিঝিলে জুতাপেটা হন। জোটের আন্দোলন তখন প্রতিদিন জোরদার হতে থাকে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামাত পৃথক পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করে স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে। ১৯৭৫-এর পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মূলত: অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি চালু ছিলো। নির্বাচনের লক্ষ্যও ছিলো তাই? ঐসময় জেনারেলদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে ধর্মভিত্তিক দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি (জাপা)’র জন্ম হয়, ক্যান্টনমেন্টে। জিয়ার আমলে ১৯৭৭ সালে এবং এরশাদের আমলে ১৯৮৫-তে রেফারেন্ডাম বা ‘হ্যাঁ-না’ ভোট হয়েছিলো দুই সমর-নায়কের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্যে। # [email protected];

সংবাদটি শেয়ার করুন