‘কানাডা কিছুই করতে পারবে না’ – শুল্ক আরোপের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, প্রত্যাশিত কঠোর শুল্ক আরোপ ঠেকাতে কানাডার “কিছুই করার নেই”। শুক্রবার বিকেলে ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কানাডা, চীন বা মেক্সিকো কি কোনো উপায়ে এই শুল্ক এড়াতে পারে? জবাবে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “না, কিছুই না। এখনই না। না।”
এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি কোনো “ছাড়” বা শর্ত চান? ট্রাম্প বলেন, তিনি কিছুই চান না। “দেখা যাক, কী ঘটে।”
শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে ফেন্টানাইল পাচার ট্রাম্পের এই মন্তব্যের আগে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট শুল্ক আরোপের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন,
“কানাডা থেকে ব্যাপক পরিমাণে ফেন্টানাইল যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট আগামীকাল মেক্সিকো এবং কানাডার ওপর ২৫% এবং চীনের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন, কারণ এই দেশগুলো অবৈধ ফেন্টানাইলের উৎস এবং তারা এই মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে, যা আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ আমেরিকানকে হত্যা করেছে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, যা আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। আমরা কেন কানাডাকে ভর্তুকি দেব?”
তবে, ২০২৪ সালে কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত বাণিজ্য ঘাটতি আনুমানিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার, যা ট্রাম্পের দাবি করা ২০০ বিলিয়ন ডলার থেকে চার থেকে পাঁচ গুণ কম, বলে জানিয়েছে টিডি ইকোনমিকস।
কানাডিয়ান তেলের ওপর ১০% শুল্ক
ট্রাম্প তার সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কানাডার তেলের ওপর ১০% শুল্ক আরোপ করা হবে।
তিনি বলেন, “আমরা হয়তো তেলের শুল্ক কিছুটা কমিয়ে ১০% করব। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে কানাডার ওপর ২৫% শুল্ক থাকবে।”
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রই কানাডার প্রধান তেল আমদানিকারক দেশ, যা প্রতিদিন ৪.৩ মিলিয়ন ব্যারেল রপ্তানি হয়। এ বিষয়ে আলবার্টার প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল স্মিথ বলেন,
“এই শুল্ক কেবল কানাডা নয়, আমেরিকান ভোক্তা, শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
ট্রুডোর পাল্টা হুঁশিয়ারি
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, “আমি মিষ্টি কথা বলব না। আমাদের দেশ সামনে কঠিন সময়ের সম্মুখীন হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “কানাডা শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না এগুলো প্রত্যাহার করা হয়। আমাদের সরকারের শক্ত প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত রয়েছে।”
ট্রুডোর এই মন্তব্যের জবাবে ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি লেভিট বলেন,
“আমি মনে করি, জাস্টিন ট্রুডোর উচিত হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা, অযথা মিডিয়ায় বড় বড় কথা বলা নয়।”
কানাডার পাল্টা ব্যবস্থা
কানাডার ফেডারেল সরকার তিন দফার প্রতিশোধমূলক শুল্ক পরিকল্পনা করেছে—
১. কেন্টাকি বোরবন ও ফ্লোরিডার কমলা লেবুর রসের মতো কিছু মার্কিন পণ্যের ওপর প্রথম দফায় শুল্ক আরোপ।
২. এরপর ৩৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো।
৩. শেষ ধাপে ১১০ বিলিয়ন ডলারের আরও মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে।
সীমান্ত ও অভিবাসন ইস্যু
যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্ত নিয়ে আলোচনায় কানাডা সম্প্রতি ১.৩ বিলিয়ন ডলারের সীমান্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার সীমান্ত নিরাপত্তা উদ্যোগকে এখনও যথেষ্ট বলে মানছে না।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (CBP) অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে ২৪,০০০ অভিবাসী ধরা পড়েছে, যা মেক্সিকো সীমান্তে ধরা পড়া ১.৫ মিলিয়নের তুলনায় নগণ্য।
ফেন্টানাইল সম্পর্কেও CBP জানিয়েছে, গত এক বছরে কানাডা সীমান্ত থেকে মাত্র ৪৩ পাউন্ড ফেন্টানাইল জব্দ করা হয়েছে, যেখানে মেক্সিকো সীমান্ত থেকে জব্দ হয়েছে ২১,১৪৮ পাউন্ড।
শুল্কের প্রভাব
কানাডার চেম্বার অব কমার্সের মতে,
• ২৫% শুল্কের ফলে কানাডার জিডিপি ২.৬% হ্রাস পেতে পারে, এবং
• প্রতি কানাডিয়ান পরিবার প্রতি বছর গড়ে ১,৯০০ ডলার অতিরিক্ত খরচ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও—
• ১.৬% জিডিপি হ্রাস পাবে, এবং
• মার্কিন পরিবারগুলোর বার্ষিক গড় ব্যয় ১,৩০০ ডলার বাড়বে।
এ কারণে কানাডার ফেডারেল সরকার একটি “মহামারি-পর্যায়ের” প্রণোদনা প্যাকেজ বিবেচনা করছে, যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করবে।
কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিদিন ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বাণিজ্য হয়, এবং ৩৪টি মার্কিন রাজ্যের প্রধান রপ্তানি বাজার হলো কানাডা।
এই শুল্ক যুদ্ধ উভয় দেশের অর্থনীতির ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।
-সূত্র: সিটিভি