কোভিডের টিকা নেওয়ার পর প্রবাসী ‘নিজেকে বেশ নিরাপদ মনে হচ্ছে‘
নিজেকে বেশ নিরাপদ মনে হচ্ছে। মানসিক একটা শক্তি কাজ করছে। যুক্তরাজ্যে করোনার টিকা গ্রহণের এই অনুভূতি জানালেন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক এম মেজবাহ রহমান। তিনি ওয়েলসের সোয়ানসি বে সিটি বোর্ড মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির মরিসটন হাসপাতালে গ্যাস্ট্রো এনটারোলজির কনসালট্যান্ট।
গত বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তাঁর কথায়, ‘করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে পেরে খুবই ভালো অনুভূতি হচ্ছে। এখানে গত ৮ ডিসেম্বর প্রথম টিকা দেওয়া শুরু হয়। আমার হাসপাতালে যাদের নাম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত ছিল, তাদের মধ্যে আমার নাম ছিল। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত কাজের চাপে প্রথম দুই দিন টিকা দেওয়ার সুযোগ করতে পারিনি। তৃতীয় দিনে অর্থাৎ গত ১০ ডিসেম্বর প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছি, দ্বিতীয় ডোজ দেব ৩১ ডিসেম্বর। আমি প্রথম ডোজ দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কিছু দেখছি না।’
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘টিকা নিয়ে অনেক রকম গুজব ও সমা-লোচনা দেখছি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু সবার মনে রাখা উচিত, পশ্চিমা বিশ্ব তাদের নিজেদের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। গবেষণা করার জন্য কঠোর নিয়ম-কানুন তারা মেনে চলে।’
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতোই বাংলাদেশের সব মানুষ মুখিয়ে আছে করোনাভাইরাসের টিকার আশায়। দেশে টিকা কবে আসবে—এ নিয়ে কৌতূহলের যেমন শেষ নেই, তেমনি টিকা কর্মসূচির তালিকায় নাম ওঠাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকে। তবে এরই মধ্যে বিদেশে টিকা পেয়েছেন মেজবাহর মতো কয়েকজন বাংলাদেশি।
কানাডার ক্যুইবেক প্রদেশে প্রবাসীদের মধ্য প্রথম কোন বাংলাদেশি ক্যানেডিয়ান হিসেবে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন পাবার সৌভাগ্য হয়েছেন। তিনি হলেন দেবাশীষ ধর চৌধুরী। তিনি মন্ট্রিয়লের একটি ওল্ড কেয়ার সেন্টারে স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে কর্মরত। ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি ভ্যাকসিনটি নেন। তিনি নিজেকে নিরাপদ বোধ করছেন। অন্যান্য প্রবাসীরাও অপেক্ষমান। কানাডার ক্যুইবেকসহ বেশ কয়েকটি প্রভিন্সে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালগুলোতে স্থান দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা ফলে গত মার্চের মতো নতুন করে লকডাউন এবং বিভিন্ন হোটেলকে করোনার অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো হচ্ছে।
ডক্টর মেজবাহ বলেন, ফাইজার-বায়োএনটেক বা আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান চাইলে আরো আগেই টিকা দেওয়া শুরু করতে পারত, অনুমোদনও আরো আগে দিতে পারত; কিন্তু সেটা করা হয়নি। বরং সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত হওয়ার পরই অনুমোদন মিলেছে। তাই এই টিকার সুরক্ষা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো প্রশ্ন থাকা উচিত নয়। ভুল তথ্য ছড়ানো, বিশেষত মুসলমানদের টিকা গ্রহণ না করার মতো কিছু অপপ্রচারে কোনোমতেই কান দেওয়া উচিত হবে না। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। হয়তো বা কোনো চক্র বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে এসব অপপ্রচার চালাতে পারে।’ তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে থাকা আরো কয়েকজন বাংলাদেশি চিকিৎসক এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন। অন্যরাও তালিকায় আছেন।
প্রবাসী আরেক বাংলাদেশি—যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস হাসপাতালের মেডিক্যাল অনকোলজির বিশেষজ্ঞ ড. বিমলাংশু রঞ্জন দে জানিয়েছেন, তিনি অগ্রাধিকারমূলক তালিকায় আছেন। আজ-কালের মধ্যে টিকা গ্রহণ করবেন। ড. বিমলাংশু রঞ্জন দের কথায়, ‘এখানে খুবই সিস্টেমেটিক ব্যবস্থায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। সব কিছুই কন্ট্রোল করছে সরকার। কারা আগে পাবে কিংবা কারা দেবে, সেটা তারাই ঠিক করছে। ফাইজারের টিকা এখন দেওয়ার জন্য আমাদের হাসপাতালে এসেছে।’
আজ-কালের মধ্যে যদি মডার্নার অনুমোদন মিলে যায়, তখন কোনটাকে পছন্দ করবেন বা এটা কিভাবে ঠিক করা হবে, কে কোনটা দেবে—এমন প্রশ্নের মুখে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, দুটি টিকাই এক। তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ফলে যার ভাগে যেটা পড়বে, সেটাই দেবে। হয়তো কারো কারো পছন্দ বা অগ্রাধিকার থাকতেও পারে। সেটা এখনই কেউ প্রকাশ করবে বলে মনে হয় না। কেউ যদি কোনো টিকা না দিতে চায়, সেটা নিয়েও বাড়াবাড়ির কিছু নেই। তবে এটা ঠিক যে টিকা দেওয়া ভালোই হবে, মন্দ নয়।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন