জাতিসংঘ

জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষাসহ স্বাস্থ্য সঙ্কট হ্রাসে ভূমিকা


জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষাসহ স্বাস্থ্য সঙ্কট হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে ‘ড্যাটা বিপ্লব’ -বাংলাদেশ আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় বক্তাগণ

নিউইয়র্ক, ১৩ জুলাই, ২০২০:
প্রমানভিত্তিক ড্যাটা শুধু কোভিড-১৯ জনিত স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলার জন্যই নয় এটি দরিদ্র্য ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের সামাজিক সুরক্ষা, নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থানীয় ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের জীবিকার সংস্থান নিশ্চিতের জন্যও প্রয়োজন- আজ (১৩ জুলাই ২০২০) জনগণের জীবন ও জীবিকার সুরক্ষাসহ স্বাস্থ্য সঙ্কট হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে “ড্যাটা বিপ্লবের মাধ্যমে কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিতকরণ” শীর্ষক এক র্ভাচুয়াল সাইড ইভেন্টের প্যানেল আলোচনায় এসকল কথা উল্লেখ করেন আলোচকগণ। কোভিড মোকাবিলা ও পুনরুদ্ধার কর্মসূচির কার্যকর ও সময়োপযোগী বাস্তবায়নে ড্যাটা বিপ্লবের উপর বিশেষ জোর দেন প্যানেলিস্টগণ। জীবন ও জীবিকার ভারসাম্যের জন্যে কীভাবে ড্যাটা ব্যবহার করা যেতে পারে সে সম্পর্কে কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরকারি, বিষয় বিশেষজ্ঞ, একাডেমিয়া এবং বেসরকারি খাত থেকে নির্বাচিত প্যানেলিস্টগণ নিয়ে জাতিসংঘের চলমান উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরাম উপলক্ষে উক্ত ভার্চুয়াল সাইড ইভেন্টের আয়োজন করে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এটুআই এই আয়োজনটির বাস্তবায়ন করে। সোমালিয়া, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ এবং ফিউচার অব ওয়ার্ক ল্যাব বাংলাদেশ ছিল ইভেন্টির সহযোগী। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “যেহেতু আমরা একটি মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করছি তাই বৈজ্ঞানিক প্রমানপত্র ও তথ্যাদির গুরুত্ব আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি, তাই ‘ড্যাটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ’ -এখন কী ঘটছে শুধু সে জন্যই নয়, বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রেও অত্যাবশ্যক”। কোভিড-১৯ এর ফলে সারাবিশ্ব যেসকল বহুমূখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে তা উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অভিবাসী কর্মী প্রেরণকারী অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও আজ কোভিড মহামারিজনিত কারণে অভিবাসী কর্মীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একারণে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের অর্থনীতি বড় হুমকির মুখে পড়েছে। তেলের দাম হ্রাস ও কোভিড মহামারির দ্বৈত প্রভাবে অনেক কর্মী বেকার হয়ে পড়েছে। তাই ড্যাটা সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও এর কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনকারী এসকল প্রবাসী কর্মীগণের পুন:কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করতে পারি; এবং তাদেরকে টেকসই উপায়ে পুনরায় কর্মে পুনর্বাসিত করতে সাহায্য করতে পারি”।

এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী ইভেন্টিতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কোভিড-১৯ সংক্রমনের হট জোন চিহ্নিতকরণ, টেলি-হেলথ সেবা প্রনয়ন, নগদ অর্থসহায়তা প্রেরণের জন্য পাঁচ লাখেরও বেশি জনগণের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা, কোভিড পরবর্তী দক্ষতা ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনা এবং কার্যকর নীতি ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের সমগ্র ড্যাটা একত্রীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে উপাত্ত ব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের উত্তম অনুশীলনসমূহ ইভেন্টটিতে তুলে ধরেন এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর। এই মাহামারি মোকাবিলা এবং এর থেকে পুনরুদ্ধারে দক্ষিণের উন্নয়নশীল দেশসমূহ গৃহীত প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওএসএসসি) যে ভূমিকা রাখছে তা উল্লেখ করেন ইউএনওএসএসসি এর এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রকিনিধি ড. ডেনিস নকালা।

কি-নোট বক্তব্যের পরেই অনুষ্ঠিত হয় সমৃদ্ধ প্যানেল আলোচনা। প্যানেলিস্টগণের মধ্যে সোমালিয়ার প্রতিনিধি আবদিরাহিম মুদে কোভিড পরবর্তী দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিতে ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণসহ তাঁর দেশের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কাউকেই পিছনে ফেলে রাখা চলবে না মর্মে মন্তব্য করেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসর আহমেদ মুশফিক মোবারক। ইভেন্টটির অন্যান্য প্যানেলিস্টগণ হলেন ইউএনডিপির রবার্ট অপ, ইউএন ডেসার ভিনসিনজো অ্যাকুয়ারো, ইউএন এসক্যাপ এর মিজ জেম্মা ভ্যান হ্যালডিরেন, আইএলও এর নিয়াল ও হিগিনস্ এবং দ্য কমন্স প্রজেক্ট এর পল মেয়ের, হার্ভার্ড পাবলিক হেলথ প্রফেসর মিজ্ ক্যরোলিন বুকি। তাঁরা ড্যাটা বিপ্লবের বিভিন্ন উপাদান এবং এর সময়োপযোগিতা, ফলাফলের মূল্যায়ন ও অগ্রগতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ড্যাটার ব্যবহার, অর্থবহ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষ করে কোভিড এর প্রেক্ষাপটে ড্যাটার ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম ইভেন্টিতে সমাপনী বক্তব্য দেন। ড্যাটা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে উপকারিতার উপর তিনি আলোকপাত করেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি ‘ড্যাটা বিনিময়ের সাধারণ প্লাটফর্ম’ প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেন। কোভিড পরবর্তী পুনরুদ্ধার এগিয়ে নেওয়া এবং এসডিজি অর্জনসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোভিড এর প্রভাব কতটা গভীর তা মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রয়োজনীয় ধারণাকে আরও গতিশীল করতে এই ইভেন্টটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মর্মে মন্তব্য করেন বক্তাগণ।
প্যানেল আলোচনা শেষে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রশ্নোত্তর পর্ব ও প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

 

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন