ভ্রমণ

ডায়েরির  পাতা থেকে, দেশে দেশে, পথে পথে । পর্ব ১৫

ডায়েরির পাতা থেকে

পূর্ব প্রকাশের পর…

ডায়েরির  পাতা থেকে, দেশে দেশে, পথে পথে । পর্ব ১৫

২৫. ১ ২০১৯

গতকাল সন্ধ্যায় দেশে নিজের জন্মস্থানে এসেছি। সেকি আনন্দ! অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা মেরে ঘুমুতে গেলেও অনেকদিন পর শান্তিতে ঘুমালাম বাসাতে। কর্মহীন, চিন্তাহীন রাত! ঘুম থেকে উঠেই শৈশবের স্মৃতিঘেরা বাড়িতে যাই বাবা-মা পিতামহকে শ্রদ্ধা জানাতে।  দেশে দেশে, পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে  আমি বাংলাদেশে এসেছি খবর পেয়েই আমার ক্লাসমেট  বন্ধু নির্মল সিংহ এসেছে দেখা করার জন্য সিলেট থেকে। বাড়ীতে গিয়ে অবাক হলাম! ছোট ভাই বাগান বাড়িটি সাজিয়েছে রকমারি গাছ আর ফল ফুলের সমাহারে! বাড়ির চারদিকে কত রকমারি ফল, ফুল আর সবজির দিগন্তজুড়ে বিশাল বাগান আর সারি সারি গাছের সমাহারে সবুজে সবুজ। বাড়ির সামনে আর পিছনে বড় বড় পুকুরে মৎস্যখামার। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে মুগ্ধ হয়েছি। গাছ-গাছালি রূপন থেকে সব কিছুতেই নান্দনিক পরিকল্পনা দৃশ্যমান। বাড়ির সামনে গাঙপাড়েও সারি সারি গাছ! বাড়িটি যারাই দেখেছে তারাই মুগ্ধ হয়েছে।

বাড়ি থেকে বাসাতে ফিরেই দেখি অনেক বন্ধু-বান্ধবরা বাসাতে অপেক্ষা করছে।  অন্যান্যরা চলে যাবার পর স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলনের সহযোদ্ধা ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ধীরেন্দ্রদা বন্ধু কৃষ্ণ গোপাল সিংহ কে নিয়ে বের হয়ে যাই আমার তীর্থভূমি কমলগঞ্জ ঘুরতে। নির্মল ড্রাইভারকে ভানুগাছ বাজারে রেখে নিজেই ড্রাইভ করছে। আঁকাবাঁকা রাস্তা। মাধবপুর জোড়ামন্ডপে মনিপুরি শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে গিয়ে সুতপা’র সঙ্গে দেখা করি। সুতপা বন্ধু নির্মলের শ্যালিকা আর আমার  বন্ধু রঞ্জনের কাকাতো বোন। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক।  সেখান থেকে মাধবপুর ডেম্পে যাই। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে সুতপা’র বাড়িতে যাই। খুব সুন্দর আলিসান বাড়ি বানিয়ে সাজিয়েছে নান্দনিক সাজে। সুতপা আর তার স্বামী দুজনেই চাকুরি করে বাড়িটি গড়েছে। তাদের একমাত্র ছেলে  খুবই সজ্জন খুব সহজেই আপন করে নেয় ঠিক বাবা মা’র মতো।

সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই আবারো চলে যাই তিলকপুরে।একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে পরিচিত।  এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হলেও এখন শিক্ষাদীক্ষা, খেলাধুলা সংস্কৃতিতে মডেল গ্রাম হিসেবে পরিচিত। সে গ্রামের সন্তান কাদামাখা মাটি আর ধুলোবালি শরীরে মেখে বড় হতে হতে বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ রাস্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান বিচারপতি হতে পেরেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, নিজের ভুল কিংবা অদূরদর্শী সিদ্ধান্তহীনতার কারণে নিজের সঠিক পথ থেকে চোখের পলকে হারিয়ে গেলেন সূর্যের আভা ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই কালো মেঘের আচ্ছাদনে।  সেই এসকে সিনহার নতুন আলিসান বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে নিজের অজান্তেই ভাবছিলাম ভাগ্যের কি ভয়ানক পরিহাস!  এত বিশাল বাড়ি জনমানবশূন্য। রাস্তায় যেতে যেতে দেখলাম বিচারপতি থাকাবস্থায় তাঁর সহযোগিতায় গড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান! কিন্তু এখন তাঁর ভুলের কারনে অনেকেই রকমারি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন! সকাল বেলা রাজা আর বিকাল বেলা ফকির যা এ যুগে দেখলাম জলন্ত প্রমান বিচারপতি এসকে সিনহাকে। না, আমি অর্থনৈতিক দিক থেকে বলছি না, বলছি তাঁর জীবনের অচিন্তনীয়-অকল্পনীয় অবিশ্বাস্যভাবে  রাস্ট্রীয় উচ্চ পদ-সম্মান পাওয়ার কথা আর ঠিক একইভাবে নিজের অদূরদর্শিতার কারণে অতিরিক্ত দাম্ভিকতায় সংযোজিত হলেন ইতিহাসের বিশ্বাসঘাতকদের তালিকায়! না, সেটা আমার কথা নয় সারা দেশে-বিদেশে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

আরও পড়ুনঃ প্রেমের টানে চট্টগ্রামে ব্রিটিশ তরুণ

 

তরুন সিংহের আয়োজনে তাঁর বাড়িতে ছিলো পার্টি। তিলকপুর গ্রামের ভিতরে চারতলা অত্যাধুনিক ব্যবস্থায় আলিসান বাড়ি। দেখার মতো।  রাতে তিলকপুর গ্রামটি দেখার জন্য বের হয়। খুবই চেনা গ্রাম। অগনিত বন্ধু-বান্ধবঘেরা। সেই কবে কত ঘুরছি, থেকেছি সেই গ্রামে। আমার প্রিয় বন্ধু অরুন কুমার সিংহ নেই। বড্ড অসময়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। তার বাড়িতে রাতের পর রাত থেকিছি, খেয়েছি আনন্দ করেছি ছাত্র জীবনে। সেই ফেলা আসা স্মৃতি বার বার মনে হচ্ছিল। এই সেই তিলকপুর গ্রামে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, উকিল সব পেশার মানুষ আর সুশিক্ষায় স্বশিক্ষায় ভরপুর। বাংলাদেশে এই প্রথম কোন গ্রাম নিজ উদ্যোগে গ্রামের ভিতরে স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলছে। গ্রামটি দেখতে দেখতে অনেক রাত! বার বার ফোন কোথায় তোমরা! অগত্যা নিজের অজান্তের বাসাতে ফিরতে হলো। বন্ধু আমাকে নামিয়ে সিলেটের পথে যাত্রা করলো….।

২৬.১.২০১৯

স্বনামধন্য প্রাবন্ধিক, চারণ লেখক আহমেদ সিরাজ ভাই এসেছিলেন দেখা করার জন্য। তাঁর এ আগমন বেশ ভালো লেগেছিলো কিছুটা বিভ্রতবোধ করছিলাম এজন্যে যে আমার নিজের উচিৎ ছিলো তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করার। আমার ছাত্র জীবন থেকে তিনি আমার খুব প্রিয় এবং গুণি ব্যক্তিত্ব। যার বিশালতা মাটি ও মানুষের সঙ্গে স্পর্শ।  তাঁর সদ্য প্রকাশিত  ‘ভাবনার প্রজাপতি’ গ্রন্থটি উপহার দিতে এসেছিলেন। গত বছর যখন দেশে গিয়েছিলাম তখনো তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো উপহার দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে থাকাবস্থায় সেই কবে আশির দশকে সাংবাদিকতা-লেখালেখি-গণ মানুষের আন্দোলন, সাংস্কৃতিক সভা সেমিনার এবং স্বৈরাচারি আন্দোলনে আমরা তাঁর সহযাত্রি হয়ে কাজ করেছি। পৃথিবীটা অনেক বদলে গেলেও সিরাজ ভাই ঠিক আগের মতোনই আছেন খুবই স্বাভাবিক অহমিকাহীন একজন খেঁটেখাওয়া  প্রকৃত মানুষ।

প্রবাসীদেরে রকমারি অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখতে হলে 

দুপুরে মৌলভীবাজারে সমন্ধিক লেখক, কবি, ব্যায়াম বিশেষজ্ঞ এডভোকেট ভূষনজিৎ চৌধুরীর বাসায় যাই, বিশাল আয়োজন আমাদেরকে ঘিরে!  সেখানে সন্ধ্যায়  দেশবন্ধু সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ মৌলভীবাজার  আয়োজিত ১ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মৌলভীবাজার কোর্টের এপিপি  এডভোকেট ভূষণজিৎ চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংবাদিক বকসি ইকবাল, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিখা তালকুদার, আমাকেও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি করা হয়েছিলো। পারিবারিকভাবে আয়োজন করলেও আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বেশ প্রাণবন্ত ছিলো। সাংবাদিক ইকবাল ভাই’র সঙ্গে অনেক বছর পর দেখা।  বেশ আনন্দেই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা যাপন করলাম।  বাংলাদেশে এসে সবকিছুই ভালো থাকলেও অসহ্য এবং অসহনীয় লেগেছে অপ্রতিরোধ্য  ধূলাবালি আর দিনরাত মাইকের বীভৎস শব্দদূষণ। মাইকের বীভৎস গর্জনে প্রানান্ত ছিলাম। এখন বাংলাদেশে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এক গ্রামে হলে মাইকের লাইন কয়েক কিলোমিটারব্যাপি লাগানো হয় যা অন্য কোন দেশে তা সম্ভব নয় শুধুই বাংলাদেশে। এর পূর্বে  অনেকবার দেশে গিয়েছি তবে এমন দৃশ্য দেখিনি।  কোন সভ্যজগতে তা অচিন্তনীয়! বলতে গেলে সারারাত মাইকের ভয়ানক গর্জনে বিনিদ্র রজনী যাপন করে সকালে উঠেই বাসা ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে যাই। সেখানেও একই অবস্থা…। চলবে….

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × four =