জীবন ও স্বাস্থ্য

দুঃসময়ের বন্ধু

দুঃসময়ের বন্ধু

সত্যিকারের  দুঃসময়ের বন্ধু বলে কথা! কথায় আছে বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। এই আপ্ত বাক্যটি সত্যে পরিণত করেছেন সৌদি আরবের একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি হাসান মোহাম্মদ মাজরাবি (৪৮)। দক্ষিণাঞ্চলীয় জাযানের সামাত্তিতে আল রোকোবাহ ইলেমেন্টারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। বন্ধুর অসুস্থ সন্তানকে নিজের কিডনির একটি দান করে নিজেকে একজন প্রকৃত বন্ধু হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন। মোহাম্মদ মাজরাবি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়তাম তখন থেকেই আমি আর আলি বন্ধু। সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্ব অটুট। আমি জানতে পারি আলি ও তার দুই সন্তান কিডনির সমস্যায় ভুগছে।

তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তার ১৩ বছর বয়সী ছেলেটির অবস্থা শেষ পর্যায়ে। তার রেনাল সিস্টেম কোনো কাজ করছে না। অবিলম্বে তার কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন।

এ খবর দিয়ে অনলাইন আরব নিউজ লিখেছে, এমন খবর জানতে পেয়ে কালবিলম্ব করেননি মোহাম্মদ মাজরাবি। তিনি ছুটে গেছেন বন্ধুর কাছে। তার পরিবারের দুর্ভোগের কথা শুনেছেন। এরপর কথা বলেছেন চিকিৎসকদের সঙ্গে। এ নিয়ে মোহাম্মদ মাজরাবি বলেন, আমার বন্ধু আলির ছেলেটির নাম আহমেদ। বন্ধুকে বললাম তাকে আমি একটি কিডনি দেবো। আমার কথা শুনে আলি বললো, আবার ভাবো, বিষয়টা এত সহজ নয়। তারপরও বার বার আমার মনোবাসনার কথা জানালাম তাকে। তাকে নিশ্চিত করলাম যে, আল্লাহর ইচ্ছায় আমি এ কাজ করতে যাচ্ছি। আমি আরেকটা জীবন বাঁচাতে একাজ করছি। আমার এমন কথা শুনে বন্ধু আলি তার সন্তানের জন্য আমার কিডনি নিতে রাজি হলো। শুরু হলো কিছু মেডিকেল পরীক্ষা। টিস্যু মেলে কিনা, ক্রস চেকিং করা হলো প্রিন্স সুলতান মেডিকেল মিলিটারি সিটিতে। সব পরীক্ষায় এমন তথ্য মিললো যে, কিডনিদাতা হিসেবে আমার স্বাস্থ্যগত অবস্থা ঠিকঠাক আছে। আমি কিডনি দেয়ার যে প্রক্রিয়া তার মধ্য দিয়ে যেতে পারবো। তাই আমার বাকি কাজগুলো এগিয়ে চললো।
মোহাম্মদ মাজরাবি নিজের কিডনি দান করা সম্পর্কে বলেন- পুরোটাই মানবিক। আল্লাহ তো আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একে অন্যকে সাহায্য করার জন্য। সব মুসলিমকে একটি দেহের মতো হিসেবে দেখার কথা বলেছে ইসলাম। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) বলেছেন, বিশ্বাসীরা একটি দেহের মতো, যেখানে একটি অংশের সঙ্গে অন্য অংশ সন্নিবেশিত। আমি তো এ সেবা করে আল্লাহর কাছে পুরষ্কৃত হতে চাই।
চিকিৎসকের সঙ্গে সব নিয়ে কথা বলেন মোহাম্মদ মাজরাবি। তাকে বলা হয়, একজন মানুষ একটি কিডনি নিয়েও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারেন। চিকিৎসকের এ কথা শুনে তিনি কিডনি দানে সিদ্ধান্ত পাকা করেন। এ বিষয়টি তিনি শুধু তার মা, স্ত্রী ও নিজের তিন ভাইয়ের সঙ্গে শেয়ার করেন। এরপরই আলির চাচা যোগ দেন তার সঙ্গে। আলির পিতার পক্ষে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। ব্যাস অপারেশনের টেবিলে শুয়ে পড়েন মোহাম্মদ মাজরাবি। তার দেহ থেকে কিডনি বিচ্ছিন্ন করে তা লাগিয়ে দেয়া হয় আলির ছেলে আহমেদের দেহে। মোহাম্মদ মাজরাবি বলেন, অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে যখন জানতে পারি কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে তখন আনন্দে বুক ফেটে কান্না আসছিল। জানতে পারলাম আহমেদের রেনাল সিস্টেম সফলভাবে কাজ করছে। তার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল রয়েছে।

 

 

সর্বশেষ সংবাদ     
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 − two =