গত ২৯শে অক্টোবর সন্ধ্যায় কানাডার মন্ট্রিয়ল ক্যাফে রয়েল ব্যাংকয়েট হলে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সত্তর দশকের প্রতিভাবান লেখক মেহের আফরোজ পান্নার পরিণত বয়সের আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস “অচেনা গন্তব্যে”র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
ব্যাতিক্রমী এ অনুষ্ঠানটিকে সাজানো হয়েছে একান্ত ঘরোয়া আঙ্গিকে, তাই ছিলনা কোনো সভাপতি বা প্রধান অতিথির আড়ম্বর। জনাব লুৎফুর রহমানের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। মূল আলোচক ছিলেন এরিকসন রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর সার্ভিস অপারেশন্স ম্যানেজার ও ডিজিটাল প্রোডাক্ট Owner প্রকৌশলী নাজুল ইসলাম আবদুল্লাহ। আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন খাউলা চোধুরী, তিনি বইয়ের কিছু অংশ পাঠ করে শোনান।
উপন্যাসের মূল চরিত্র লেখক নিজেই, আর গল্পের নায়ক প্রয়াত খন্দকার জাহেদ মান্জুরুল ইসলাম; তাই যেন সকলের আলোচনায় সহজাতভাবেই চলে আসে প্রয়াত খন্দকার জাহেদ মান্জুরুল ইসলাম-এর স্মৃতি। একে একে স্মৃতিচারণ করেন বিশিষ্ট সংগঠক বাংলাদেশ সোসাইটি অফ মন্ট্রিয়ল এর সভাপতি এজাজ আখতার তৌফিক, বিশিষ্ট সংগঠক কাজী রমজান রতন, দোহা চোধুরী, ক্যাফে রয়েলের স্বত্বাধিকারী মাসুদ সিদ্দিকী এবং আরো অনেকে। প্রয়াত খন্দকার জাহেদ মান্জুরুল ইসলাম স্মরণে সফিউল ইসলামের গান “তুমি নেই ” এবং “আজ হয়নি সময় তুমি চলে গেলে” উপস্থিত সবাইকে অশ্রুসজল করে তোলে। স্মৃতিচারণ চলে গানে গানে আতিয়া দোহা চৌধুরী ও জাসিন্তা কুইয়ার কণ্ঠে। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আশি ও নব্বই দশকের দর্শক নন্দিত প্রায় হারিয়ে যাওয়া দুজন সঙ্গীত শিল্পী মিসেস তারা আলম ও লায়লা এরশাদ উল্লাহ।
মূল আলোচনায় উঠে আসে মেহের আফরোজ পান্নার বৈচিত্রময়তায় ভরা জীবনের গল্প তথা মন্ট্রিয়ল এর বাংলাদেশী ডায়াস্পোরা কম্যুনিটির গল্প। অচেনা গন্তব্য সত্য ঘটনার আলোকে লেখা। আমরা যারা এখানে আছি সবাই যেন এই উপন্যাসের কোথাও না কোথাও নিজেদের কাহন খুঁজে পাই। আলোচনায় সকলেই লেখকের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেছেন এবংআশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে লেখক সামনের দিন গুলিতে আরও বই উপহার দিবেন। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবনে থাকা মেহের আফরোজ পান্না বইটির বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেন “সাহিত্যের জগৎ থেকে, শৈশব-কৈশোরের বন্ধুদের থেকে, জন্মভূমি থেকে, বাবার ভিটাবাড়ি থেকে, আপন শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এতগুলি বছর আমি কোথায়, কিভাবে ছিলাম সেই গল্পের কাহিনী এই বইতে বলার ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র”।
দীর্ঘ পাঁচ ঘন্টার এই অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন নাজুল ইসলাম এবং জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, উপস্থাপিকা সাফিনা করিম।
সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃত্তি করেন বাচিক শিল্পী, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও কবি মুফতি ফারুক , স্বনামধন্য আবৃত্তিকার আফাজউদ্দিন তোতন এবং বিশিষ্ট আবৃত্তিকার তৌফিকুর রহমান রাঙা। এরপর সঙ্গীত পরিবেশন করেন মন্ট্রিয়লের অত্যন্ত জনপ্রিয় দুজন কণ্ঠশিল্পী মিলি ইসলাম এবং সাফিনা করিম। স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী তাসলিমা মাহবুবের পরিবেশনা ছিল অনবদ্য।
এরপর একে একে সঙ্গীত পরিবেশন করেন মন্ট্রিয়লের সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তিন স্টলওয়ার্ট – সংগীতশিল্পী মাহবুবুর রহমান, সংগীতশিল্পী নিরোজ বড়ূয়া এবং সংগীতশিল্পী শফিউল ইসলাম, যারা মন্ট্রিয়ল তথা উত্তর আমেরিকার অগনিত দর্শকের অন্তরে চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর একমঞ্চে জনপ্রিয় এই তিন শিল্পীর গান প্রানভরে সকলে উপভোগ করেন মন্ত্রমুগ্ধের মত।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ছবির অ্যালবাম
সমগ্র অনুষ্ঠানটির কারিগরি ও সাউন্ড সিস্টেমে ছিলেন আরিফ সিদ্দিকী সেতু। মিডিয়া পার্টনার ছিলেন সদেরা সুজন ও সিবিএনএ।
সঙ্গীত, কবিতা, আড্ডা, বইয়ের আলোচনা আর স্মৃতিকথায় কখন যে সময় মধ্যরাত্রী পেরিয়েছে , টেরই পাওয়া যায়নি। স্বল্প সময়ের অনুষ্ঠান হলেও এর ভালোলাগার রেশটুকু রয়ে যাবে অনেকদিন, থেকে যাবে স্মৃতিতে অমলিন অনন্য সুন্দর স্বপ্নিল একটি সন্ধ্যা।