সেই তালেবান এই তালেবান
তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আফগানিস্তানের সম্ভাব্য শাসনব্যবস্থা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রশ্ন উঠছে, তালেবান কি দুই দশক আগের নিষ্ঠুরতায় ফিরবে? ঘরবন্দি হয়ে পড়বে মেয়েরা? চাবুক মারা, পাথর ছোড়া দিনের দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হাজারো মানুষ। ‘অন্ধকার’ ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম মনঃকষ্টে নারীরা। যদিও তালেবান বলছে, এবারের সরকার হবে আধুনিক। ইসলামী আইন মেনে মেয়েরা পড়ালেখা-চাকরি করতে পারবে। আইন অমান্যকারীদের সাজার ধরন নির্ধারণ করবেন আদালত। পরিবর্তিত নিয়ম-কানুনে সম্মত না হলে বিদেশিরা দেশ ছাড়তে পারবে।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবানদের এসব প্রতিশ্রুতি আদৌ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে খোদ আফগানদেরই। আতঙ্কের ছাপ দেখা গেল সরদার-ই-কাবুলি গার্লস হাই স্কুলের অধ্যক্ষ নাসরিন সুলতানির চোখে-মুখে। অশ্রুসজল চোখে তিনি বলছিলেন, ‘মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুবই হতাশ। আমি ছাত্রীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তালেবানের পক্ষ থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চলা তালেবানি শাসনামলে মেয়েদের শিক্ষালয়ে যাওয়া বারণ ছিল। বাইরে যেতে চাইলে নারীদের যেমন হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ছিল, তেমনই পুরুষ অভিভাবককে সঙ্গে নিতে হতো। এর ব্যত্যয় হলে প্রকাশ্যে চাবুক মারা হতো, কার্যকর করা হতো মৃত্যু। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে দাঁড়ি কামানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্দেহভাজনদের ধরে হাতে তুলে দিতে তালেবানকে চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। তবে তালেবান তা মানতে অস্বীকার করায় আমেরিকা ও ব্রিটিশ সৈন্যদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় নর্দার্ন অ্যালায়েন্স নামের তালেবানবিরোধী একটি আফগান মিলিশিয়া গোষ্ঠী অভিযান চালিয়ে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
২০ বছর ধরে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া বিদেশি সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করার অল্প সময়ের মধ্যেই ফের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভূ-রাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে নাটকীয়ভাবে। কিন্তু আফগানদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে? তালেবান নেতারা পরিবর্তনের কথা বললেও সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় তা প্রতিফলিত হয়নি।
গত জুলাইয়ের শুরুতে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে আজিজি ব্যাংকে প্রবেশ করেন তালেবান যোদ্ধারা। তাঁরা ফরমান দেন, ব্যাংকে কর্মরত ৯ নারী আর চাকরি করতে পারবেন না। এই বলে ওই নারীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৪৩ বছর বয়সী নারী নূর খাতেরার কথায়, ‘এটা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার যে শুধু নারী হওয়ার কারণে চাকরি করতে পারব না।’ ব্যাংকের হিসাব শাখার এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমি ইংরেজি জানি, কম্পিউটার চালানোতে দক্ষ; কিন্তু আমি কোথা থেকে কাজ করব।’
আফগানিস্তানের নারী অধিকারকর্মী ফৌজিয়া কুফি বলেন, আফগানিস্তানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে নারীরা। তালেবানরা ‘অপরাধীদের’ জেল থেকে মুক্তি দিয়ে এখন হুমকি দিচ্ছে। ২০ বছরে নারীর ক্ষমতায়নে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা এখন ভূলুণ্ঠিত হতে বসেছে। মনে হচ্ছে আফগান নারীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
এর মধ্যেই তালেবান নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে নারীদের ঘরবন্দি করে ফেলা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। পুরুষদের দাড়ি রাখতে বলার পাশাপাশি পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়েও ফরমান জারি হয়েছে কোথাও। তবে তালেবানের এক মুখপাত্র সুহেইল শাহিন দাবি করেছেন, ‘আমরা নারী অধিকারে সম্মান করি। আমাদের নীতি হচ্ছে, হিজাব পরে নারীরা পড়াশোনা ও কর্মক্ষেত্রে যেতে পারবে। গণমাধ্যমও সমালোচনা করতে পারবে; কিন্তু চরিত্র হনন করতে পারবে না।’
আবারও কী নিষ্ঠুর শাস্তির ব্যবস্থা চালু হবে কি না, তার সদুত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। শাহিনের কথায়, আইন অমান্যকারীর সাজার ধরন আদালত নির্ধারণ করবেন। তিনি এও বলেছেন, ‘কোনো বিদেশি চাইলে আফগান ত্যাগ করতে পারেন; কিন্তু এখানে থাকতে হলে তালেবানি শাসন মেনে চলতে হবে।’
তালেবান বলছে, প্রকৃত ইসলাম সমর্থন করে এমন আফগানি ঐতিহ্য তারা ধারণ করতে চান। কিন্তু আগের শাসনের সঙ্গে ‘প্রকৃত ইসলামি ব্যবস্থার’ কী পার্থক্য হবে—তা এখনো পরিষ্কার নয়। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এনবিসি।
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান