বিশ্ব

আক্রান্ত তালিকায় ৮৫ দেশ-অঞ্চল

নতুন করোনাভাইরাসে (কভিড-১৮) আক্রান্ত তালিকায় ৮৫ দেশ-অঞ্চল দৈনিক আক্রান্তের আনুপাতিক হিসাব ধরলে সপ্তাহ দুয়েক আগেই চীনকে পেছনে ফেলেছে দক্ষিণ কোরিয়া। আর মোট মৃতের হিসাবে চীনের পরেই যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে আছে ইতালি ও ইরান। উভয় দেশে ১০৭ জন করে মারা গেছে। এর মধ্যে ইতালিতে বুধবার রাত ১২টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। প্রথম একজনের মৃত্যু হয়েছে সুইজারল্যান্ডে। আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

ভাইরাসটির সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল চীনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৩৯ জন, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ জন বেশি। নতুন করে মারা গেছে ৩১ জন।

আক্রান্তের দেশের তালিকায় গতকাল যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, স্লোভেনিয়া ও বসনিয়ার নাম। এ নিয়ে ৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে ‘পা রাখল’ ভাইরাসটি। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৭৮১ জনে। এর মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭১। আর মোট মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩০৫।

এদিকে ইউনেসকো জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে ১৩টি দেশ। অর্থাৎ বিশ্বের ২৯ কোটি শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।

ইতালিতে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু

ইতালিতে বুধবার নতুন করে কেউ সংক্রমিত হয়নি। তবে এদিন দেশটিতে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এক দিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে সেখানে ১০৭ জনের মৃত্যু হলো। মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। ইতালির ২২টি অঞ্চলের মধ্যে ২১টি অঞ্চলে ভাইরাসটির সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলার অংশ হিসেবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইতালির সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা হয়েছে ১১টি শহরের ৫০ হাজার বাসিন্দাকে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্তে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখনো যে পর্যায়ে আছে, তা আমরা মোকাবেলা করতে পারব। কিন্তু এর চেয়ে অবনতি ঘটলে তা যেকোনো দেশের পক্ষেই সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

চীনে আক্রান্ত কিছুটা বেড়েছে

করোনাভাইরাসে চীনে গত বুধবার আরো ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিন আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৯, যা আগের দিনের চেয়ে ২০ জন বেশি। আক্রান্তদের ১৩৪ জনই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। সব মিলিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ১২ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৪০৯ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে আরো দুজনের মৃত্যু

দেশটিতে বুধবার আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের ১২টির বেশি অঙ্গরাজ্যে সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩০ জনে। এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন স্থানীয় গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম। এ ছাড়া সেখানকার উপকূলে একটি প্রমোদতরি ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাসে ‘গ্র্যান্ড প্রিন্সেস’ নামের ওই প্রমোদতরির এক যাত্রীর মৃত্যু হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাপানের উপকূলে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখা ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’ ও ‘গ্র্যান্ড প্রিন্সেস’ একই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন। ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্র্যান্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরির ১১ যাত্রী এবং ১০ নাবিক সম্ভবত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে সেখানে মোট আরোহী আছে ৬২ জন। এদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত বেড়েছে

দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে ৪৬৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে ছয় হাজার ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হলো। এদিন দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫ থেকে বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি গতকাল সমবেদনা জানিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন।

ইরানে আরো ১৫ জনের মৃত্যু

করোনাভাইরাসে ইরানে আরো ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে ১০৭ জনের মৃত্যু হলো। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫১৩ জনে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ২০ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

আরো তিন দেশে সংক্রমণ

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তালিকায় গতকাল যোগ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, স্লোভেনিয়া ও বসনিয়ার নাম। দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েলি এমকিজে এক বিবৃতিতে বলেন, আক্রান্ত ওই ব্যক্তি (৩৮) সম্প্রতি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ইতালি ভ্রমণে গিয়েছিলেন। স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী মারজান সারেস জানান, আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি মরক্কো থেকে ইতালি হয়ে দেশে ফিরেছেন। বসনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি ইতালিতে চাকরি করেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরেন। এর মধ্যে গতকাল তিনি এবং তাঁর এক সন্তানের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়।

করোনা ঠেকাতে প্রতিবন্ধক গুজবও

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কারণে করোনাভাইরাস ছড়ানো ঠেকানো যাচ্ছে না, গুজবও সেগুলোর একটি। আর এই গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি ছড়ানো হচ্ছে মূল ধারার গণমাধ্যমেও। গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি পোস্ট পাওয়া গেছে, যেগুলোর মাধ্যমে কভিড-১৯ সম্পর্কে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এমন গুজবও পাওয়া গেছে যে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে এই ভাইরাস ছড়ানো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশের ২৭ জন বিজ্ঞানী গুজব ছড়ানোর সমালোচনা করে বলেছেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সমন্বিত লড়াই করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টিকা বানাচ্ছে জাপান

কভিড-১৯-এর টিকা বানানোর জন্য জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে কাজ করবে দেশটির অন্যতম ওষুধ কম্পানি ‘অ্যানজেস’। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই টিকা প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলেও প্রতিষ্ঠানটি আশাবাদী। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরা।

আরও পড়ুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ     
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + three =