লেখালেখি

আমাদের শৈশবের টিকাবেলা!

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

আমাদের শৈশবের টিকাবেলা! |||| আতাউর রহমান কাবুল

সময়টার কথা ঠিক মনে নেই। প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। তখনকার দিনে টিকা দিতে বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আসতেন। আর তাদের দেখামাত্র আমরা দিতাম ভোঁ-দৌড়।

তো একদিন টিকাদান কর্মীরা আমাদের গ্রামে এলেন। আমাদের বাড়ির সামনেই দাদার বাড়িতে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। খবরটা জানার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পালাবো কোথায়?

অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম, ধান রাখার ডুলির ভেতর আশ্রয় নেবো। তখন গোলা ঘরে বিশাল বিশাল সাইজের ডুলিতে মাড়াই করা শুকনো ধান সংরক্ষণ করা হতো। এসব ডেলির কোনটা ভরা থাকতো কোনটা হয়তো কিছুটা খালি থাকতো।

এই ডুলির আরো কাহিনী আছে। বিড়াল খুব আরামে সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করতো আর ধান দিয়ে ঢেকে রাখতো। সেই বিষ্টা শুকিয়ে গেলে কিছু ধান সমেত ফেলে দেওয়া হতো।

মাকে দেখতাম সেই ধানের কিছু গভীরে হাত ঢুকিয়ে গোপনে টাকা গুঁজে রাখতেন। এসব টাকার বেশিরভাগই ছিল আব্বার আলমারি থেকে নেওয়া। আর আমি অতি সতর্কতার সাথে বিড়ালের শুকনো বিষ্ঠা মাড়িয়ে সেখান থেকে প্রায়ই টাকা চুরি করতাম। অগুনতি টাকা থাকতো বলে মা ও টের পেত না।

তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন গুনে দেখি, অনেক টাকা জমে গেছে আমার। স্কুল ছুটির পর বাড়ি না ফিরে সাইকেলে শালবাহান হাটে গিয়ে চকচকে কাপড় দেখে নতুন শার্ট বানিয়ে ফেললাম। নতুন শার্ট পরিধান করে আতাউর-মতি স্যারের বাসায় কোচিং করতে গিয়ে জানলাম, মেয়েদের কাপড় দিয়ে শার্ট বানিয়ে ফেলেছি! বন্ধু-বান্ধবীদের সামনে তখন সে কি লজ্জা! বড় শখের ওই শার্ট পরে আর কোথাও যেতাম না।

যাক সে কথা। টিকা দেওয়ার ভয়ে বিশাল সাইজের এক ডুলির ভেতর লুকিয়ে ফেললাম নিজেকে। এদিকে আমার ব্যাপক খোঁজাখুঁজি চলছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। সম্ভবত কালাম কাকুকে দেখলাম সেই ডুলির আশপাশেও খোঁজ করতে। আব্বা-মা তো হন্যে হয়ে খুঁজছেই।

বলতে হবে ভাগ্য ভালো (!) যে আমাকে কেউ খুঁজে পেলেন না। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অস্থির হয়ে ডুলির ভেতর দীর্ঘক্ষণ থেকেও মনে হলো অনেক ভালো আছি। অন্তত সুঁচ ফুটিয়ে টিকা দেওয়ার মতো ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা থেকে বেঁচে গেছি।

এক পর্যায় টিকাদান কর্মীরা চলে গেলেন। বিজয়ের হাসি নিয়ে গোপন আস্তানা থেকে বের হলাম। সে কী আনন্দ আমার! মনে হলো মহা বিজয় করে ফেলেছি।

এখন করোনার টিকাদান কর্মসূচি দেখে ছেলেবেলার সেসব কথা মনে পড়ছে। কিছুটা আফসোস ও হচ্ছে বৈকি! ইস্! তখন যদি ফেসবুক থাকতো, সেলফি তোলার সুযোগ থাকতো তাহলে কী এভাবে পালাতাম? নিশ্চয়ই না। বরং আগের রাতেই চিন্তা করতাম কখন টিকা দিতে যাবো, কখন সকাল হবে। ক্লিন সেভ করে নতুন একটা শার্ট পরে সবার আগে টিকা নিতে যেতাম। শার্টের নিচে ধবধবে সাদা নতুন গেঞ্জিও পড়ে নিতাম। মুখে থাকতো স্টাইলিশ একটা মাস্ক। অনেক টিভি ক্যামেরায় আমার ছবি তোলা হতো। এই সুযোগে তরুণীদের কাছে বডি প্রদর্শনটাও হয়ে যেতো। অনলাইন, পত্রপত্রিকায় আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হতো। প্রথম টিকা গ্রহণকারী, অমুক তমুক…আমিও ফেসবুকে বিজয়ের ‘ভি’ চিহ্নিত ছবি দিতাম আর বিভিন্ন সাংবাদিককে ফোন করে বলতাম, ভাই, আমি কিন্তু টিকা নিয়েছি। এই দেখুন ছবি। আমাকে নিয়ে লেখেন প্লিজ…জ…জ…

লেখক : সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন