দেশের সংবাদ ফিচার্ড

আশানুরূপ পর্যটক নেই কমলগঞ্জে; হতাশ ব্যবসায়ীরা

আশানুরূপ পর্যটক নেই কমলগঞ্জে; হতাশ ব্যবসায়ীরা

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন স্পট গুলো এবার ঈদুল আযহার ছুটিতে খাঁ-খাঁ করছে। পর্যটকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটো ও বাস নিয়ে আসা পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠতো প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন।

সম্প্রতি সিলেট বিভাগে বন্যার প্রভাবে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, পর্যটকদের পদচারনা কম থাকায় কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে কিছুটা শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে বনের মধ্যে বন্য প্রাণীদের মধ্যে উদ্যাম দেখা দিয়েছে। প্রাণীরা তাদের বাঁচ্চাদের নিয়ে নির্বিঘেœ চলাচল করছে। তাই বন্য প্রাণীদের হাঁক-ডাক, হৈ-হুল্লোড়, চেঁচামেছি আর কলরবে মুখরিত হয়ে আছে।

জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২শ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামন্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। কিন্তু এবারের ঈদে সবুজ প্রকৃতির এই উপজেলায় পর্যটক শূণ্যতা বিরাজ করছে।

ঈদের টানা ছুটিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসতেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার পর্যটকরা। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। পর্যটকদের উপস্থিতি কম। শনিবার ঈদের দিন সহ ঈদের পরের দিন ও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ইতিমধ্যে ছুটির ৩দিন অতিবাহিত হলেও আশানুরুপ পর্যটকের দেখা মিলেনি। মঙ্গলবার বিকালে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে গিয়ে পর্যটকের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়ে নি। তবে কিছু পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেখা গেছে। অন্যান্য সময় সাধারণ বন্ধের (শুক্র ও শনি) দিনে যে পরিমাণ পর্যটক দেখা যায় তার চেয়েও অনেক কম পর্যটকের উপস্থিতি দেখা গেছে এবারের ঈদের ছুটিতে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, ১০ জুলাই টিকেটের হিসেবে রাজ্বস আয় হয়েছে ২৩হাজার ৫৫৩ টাকা। ১১ জুলাই টিকেটের হিসেবে রাজ্বস আয় হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৫৩ টাকা। ১২ জুলাই বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৪২হাজার টাকার মতো। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম। তুলনামূলকভাবে অর্ধেক পর্যটকও এবছর আসেস নি।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, মৌলভীবাজারের হোটেল ও রিসোর্টের অধিকাংশই শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। পর্যটন গন্তব্য হিসেবে এই জায়গা বেশ জনপ্রিয়। এখানে আছে প্রায় ১শটি হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রিসোর্ট ও কটেজ। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার মোকামবাজার এলাকায় অবস্থিত পাঁচতারকা মানের দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, শ্রীমঙ্গল উপজেলার গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, টি-বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, নভেম ইকো রিসোর্ট, টি হ্যাভেন রিসোর্ট, বালিশিরা রিসোর্ট, কমলগঞ্জ উপজেলার টিলাগাঁও ইকো রির্সোট, হীড বাংলাদেশের রেস্ট হাউজ সহ অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে পর্যটক নেই বললেই চলে। সিলেট বিভাগ তথা মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার প্রভাবে পর্যটকের এমন শূন্যতা দেখা দিয়েছে বলে তারা ধারনা করছেন। অনেকটাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

রাধানগরে অবস্থিত গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান বলেন, পর্যটক না থাকার কারনে রিসোর্ট খালি পড়ে আছে। একই মন্তব্য করেছেন লেমন গার্ডেনের পরিচালক সেলিম আহমদ। সবখানে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে।

ট্যুর গাইড শাহিন আহমদ জানান, এই সময়ে অনেক ট্যুর গাইডের প্রয়োজন পড়ে। আমরা পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়াই। এবার পর্যটকের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। খুবই কঠিন পরিস্থিতি আমাদের জন্য।

শ্রীমঙ্গল ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খালেদ আহমদ বলেন, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪৭ জন ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড আছেন। যাদের মধ্যে ২১ জন শুধু এই কাজই করেন। তাদেরও সময় কাটছে অলস অবস্থায়।

লাউয়াছড়া ইকো টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়াসহ উপজেলার সব পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। পর্যটক শূন্য বললেই চলে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ ঈদে অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম খুবই কম। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। এবারে বন্যার কারনে পর্যটকদের উপস্থিতি নাই বললেই চলে। তিনি আরোও বলেন, পর্যটকদের উপস্থিতি কম থাকলেও, আমাদের প্রস্তুতির কোন ঘাড়তি নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন