ওল কচু রপ্তানি : হাজার কোটি টাকার স্বপ্ন
দেশের মানুষ ‘গলা ধরা’র ভয়ে যে খাদ্য রান্নার পরও মুখে নিতে ভয় পায়, সেই ওল কচুর গুঁড়া আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে জাপান। দেশটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ওল কচুর গুঁড়া আমদানির অর্ডার দিয়েছে, আনুমানিক যার মূল্য প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন ওল কচুর গুঁড়া আমদানি করে জাপান, স্থানীয় মুদ্রায় যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা (১ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার)। বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা এর ১ শতাংশ চাহিদা পূরণ করতে পারলেও বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ওল কচুর গুঁড়া রপ্তানি করতে পারবে।
জানা গেছে, ওল কচুর পাউডার মূলত চীন ও জাপানে প্রচলিত ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এটি একটি উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাদ্য যা স্বাস্থ্যকর এবং শরীরের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, মুখের ক্ষত, রক্তশ্রাব, কুষ্ঠকাঠিন্য এবং মেদ কমানোর ওষুধ ও খাদ্য তৈরিতে ওল পাউডারের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। চীন ও জাপানে এটি নুডলস এবং জেলি তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এ অবস্থায় দেশের সম্ভাবনাময় এই কৃষিজাত পণ্যটির রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে এর উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের সহায়তা চেয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি দেশের অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে ওল কচুর পাউডার কৃষিপণ্য হিসেবে সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য হতে পারে বলে মনে করেন বাণিজ্য সচিব। অর্গানিক প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মু. আবদুস ছালাম জানান, সম্প্রতি তারা জাপানের খাদ্যমেলায় অংশগ্রহণ করে প্রায় ৬০ হাজার টন ওল পাউডার রপ্তানির অর্ডার পেয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, সিলেট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, বগুড়া, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ওল কচু উৎপাদন শুরু হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে যশোরে গ্রিন জাপান লি., পঞ্চগড়ে শামস এন্টারপ্রাইজ এবং কুড়িগ্রামে নর্দান অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস লি. ওল কচু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চালাতে কাঁচামাল হিসেবে দৈনিক প্রায় ১০০ টন বা বছরে ৩০ হাজার টন ওল কচুর প্রয়োজন পড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলো ওল প্রক্রিয়াজাত করে পরিশোধিত পাউডার উৎপাদন করবে, যার শতভাগ জাপানে রপ্তানি হবে। আবদুস ছালাম জানান, ৩০ হাজার টন ওল কচু উৎপাদনের জন্য ২ হাজার একর জমির প্রয়োজন। প্রতি একরের জন্য সাড়ে ৪ টন ওলবীজ দরকার পড়ে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। উৎপাদনের পর প্রতি টন ওলের বিক্রি মূল্য পড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আর প্রক্রিয়াজাতকরণের পর রপ্তানি ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ওল কচুর পাউডারের দাম পড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। এ অবস্থায় সরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট জেলার কৃষকদের মধ্যে ওলবীজ সরবরাহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বাণিজ্য সচিব বলেন, এ ধরনের ছোট ছোট পণ্য রপ্তানি করে বছর শেষে বড় ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সে লক্ষ্যে অপ্রচলিত কৃষিপণ্যে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন