প্রবাসের সংবাদ

করোনায় যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারিসহ ১৮৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু

যুক্তরাষ্ট্রে আরও ৮ জনসহ ১৮৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু । ৬০ দিনের জন্য ইমিগ্রেশন বন্ধ ঘোষণা ট্রাম্পের

করোনায় যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারিসহ ১৮৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু।। ২২ এপ্রিল, নিউইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড হাসপাতালে ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় পরলোকগমন করেছেন। ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু দাস এ সংবাদ জানান। দীর্ঘ ২৩ দিন তিনি ঐ হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে গেলেন ।  প্রবাসীদের কাছে অত্যন্ত নম্র, বিনয়ী, সদা হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুবৎসল এবং পরোপকারী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। কমিউনিটির যেকোন বিপদ-আপদে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতেন। তাকে সহ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭ বাংলাদেশীর মৃত্যুর নিশ্চিত সংবাদ পাওয়া গেল। তাঁর মৃত্যুতে দেশে-বিদেশের শোকের ছায়া নেমে আসে বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায় পরিচিতজন এবং আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সোশ্যাল মিডিয়ায়  তাঁর অকাল প্রয়াণে শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এছাড়াও  তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

 

যুক্তরাষ্ট্রে আরও ৮ জনসহ ১৮৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু

৬০ দিনের জন্য ইমিগ্রেশন বন্ধ ঘোষণা ট্রাম্পের

প্রাণাঘাতী করোনাভাইরাসে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎ দাস ২৮ দিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেছেন। একই দিনে নিউইয়র্কে একই পরিবারের দুই ভাই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন। বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের বাসিন্দা সায়ফুর হায়দার খান চলতি মাসের ৪ তারিখে করোনার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তারই বড় ভাই শফি হায়দার খান গত ২১ এপ্রিল চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে দুই ভাই’র চলে যাওয়ায় পুরো কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসের প্রকোপ এবং মৃত্যু কমলেও বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। গত ২৪ ঘন্টায় নিউইয়র্কে আরও ৮ জন বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে করোনায় প্রবাসী ১৮৭ জন বাংলাদেশী মারা গিয়েছে। এ দিকে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৮ লাখ ২৫ হাজার এবং প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে নিউইয়র্কেই করোনায় আক্রান্ত ২ লাখ ৫২ হাজার এবং মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ।

এদিকে নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমো গত ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নিউইয়র্কের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। তিনি নিউইয়র্কে আরও টেস্টিংয়ের কথা বলেছেন এবং অর্থ সাহায্যের কথা বলেছেন। গভর্নর কুমো বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সাথে তার বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৬০ দিনে জন্য আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট আসা বন্ধ ঘোষণা করেছেন। মার্কিন নাগরিকদের ‘রোজগার বাঁচানোর’ জন্যই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। ২১ এপ্রিল ট্যুইটারে এই কথা ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্যুইটারে তিনি লেখেন, ‘অদৃশ্য এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছি আমরা। এই অবস্থায় প্রিয় মার্কিন নাগরিকদের রোজগার সুনিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে ইমিগ্রেশন বন্ধ করার এক্সেকিউটিভ অর্ডারে সই করছি।’

বাবুল ইসলাম

এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় নিউইয়র্কে যেসব বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন- নিউইয়র্কের কুইন্সের লংআইল্যান্ডে বসবাসকারী বাবুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৯ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং ২ কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। জানা গেছে, জনাব বাবুল প্রায় ১৫ দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গত ২১ এপ্রিল সকালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, তার দেশের বাড়ি ঢাকার মগবাজারের মিরবাগ। তিনি নিউইয়র্কে ট্যাক্সি চালাতেন। তার মৃত্যুতে গাজিপুর জেলা সমিতির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ সারেং)

নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে বসবাসকারী কোম্পানীগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রবীণ সদস্য সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ সারেং) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। তিনি নিউইয়র্কের কিংস কাউন্ট্রি হাসপাতালে ২১ এপ্রিল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। এ বিষয়ে গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন।
উল্লেখ্য, তার দেশের বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়।

আব্দুস সালাম খান

নিউইয়র্কের ব্রুকলীন নিবাসী আব্দুল খালেক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২১ এপ্রিল সকালে ব্রুকলীনের ব্রুকডেল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। জানা গেছে, আব্দুল খালেক প্রায় দেড় বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন। তার মেয়ে তার জন্য আবেদন করেছিলেন।

জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি এবং কম্যুনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারের শ্বশুর আব্দুস সালাম খান গত ২১ এপ্রিল স্থানীয় সময় দুপুর ৩ টায় লংআইল্যান্ডের নর্থ সোর হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।(ইন্না লিল্লাহে… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৭০ বছর। তার দেশের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের আংগারজোর।

শফি হায়দার খান

টাঙ্গাইল জেলা সমিতির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ খান রাজেসের বড় ভাই শফি হায়দার খান গত ২১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি.. রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। জানা গেছে, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ মার্চ ম্যানহাটানের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল তার ছোট ভাই সায়ফুর হায়দার খান করোনায় আক্রান্ত হয়ে জ্যামাইকা হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন।

গোলাপগঞ্জ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুহীন চৌধুরীর বাবা আতাউর রহমান চৌধুরী আলতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। তিনি তার ছেলের সাথে এস্টোরিয়ার ডিটমার্স এলাকায় থাকতেন।
বাফেলো নিবাসী ডা. আবদুজ জাহের করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাফেলোর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর।

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বিদ্যুৎ দাস আর নেই। তিনি গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ঐক্য পরিষদের নেতা এবং কলামিস্ট শিতাংশু গুহ জানান, তিনি প্রায় ২৮ দিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে পুরো বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। কারণ তিনি ছিলেন সবার প্রিয়, মিষ্টিভাষী এবং পুরোপোকারী একজন মানুষ।

-ঠিকানা থেকে সংযোজন

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন