সজীব দেবরায়, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধে দেশের পর্যটন কেন্দ্রসমূহে সাময়িকভাবে পর্যটকের প্রবেশ বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের প্রবেশ সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন।
এদিকে করোনা ভাইরাস এর সংক্রমন প্রতিরোধের নিমিত্তে সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা জনসমাগম নিষিদ্ধ করায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রসমূহে পর্যটক আগমন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরুৎসাহীত করেছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার রাতে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ গত ১৭ মার্চ (মঙ্গলবার) লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশে সবার জন্য উন্মুক্ত করেছিল। এ সুযোগে ওইদিন বিনামূল্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নারী, পুরুষ, শিশু ও কিশোর মিলিয়ে হাজারও পর্যটকের সমাগম ঘটে। পর্যটকরা ঘুরে বেড়ান লাউয়াছড়া উদ্যানের বিভিন্ন পাহাড়ি ট্রেইল (সরু পথে) ও লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির আবাসিক এলাকায়। তাদের ব্যবহৃত যানবাহনেরও কোনো পার্কিং ফি দিতে হয়নি। ফলে এ সুযোগে ওইদিন সকাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এর একদিন পর বুধবার (১৮ মার্চ) রাতে কমলগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্র লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর চা-বাগান লেক, ধলই বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, হামহাম জলপ্রপাত, আদিবাসী খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি এলাকা ও চা-বাগান এলাকায় ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ফিলা পতমী জানান, এখন যেহেতু করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়, তাই পর্যটকদের ভ্রমণ কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। করোনাভাইরাস নিয়ে এমনিতেই খাসিয়া পরিবারগুলোর সদস্যরা আতঙ্কিত। তাই উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় তারা খুশী।
লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন শত শত পর্যটক ভ্রমণে আসতেন। এদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকও আছেন। তাদের কারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত তা বোঝার উপায় নেই।
উপজেলা প্রশাসন থেকে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করার প্রজ্ঞাপনের সত্যতা নিশ্চিত করে লাউয়াছড়া বনবিটের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এদিকে তাদের সতর্ক নজরদারি রয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান প্রায় পর্যটকশূন্য রয়েছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
কমলগঞ্জের ধলই চা-বাগান সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃৃতিসৌধে পর্যটকদের আগমন ঘটেনি। মাধবপুর চা-বাগান সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাধবপুর লেকেও পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল না। একই অবস্থা ছিল চাম্পারায় চা-বাগান সংলগ্ন হামহাম জলপ্রপাত, বিভিন্ন চা-বাগান, মণিপুরি ও খাসিয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতামূলক এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ইতোমধ্যেই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবরোধে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন জনসমাগমকে নিরুৎসাহিত করছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কমলগঞ্জে নারী চা শ্রমিকদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ
মরণব্যাধী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য সচেতনতায় নারী চা শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস সচেতন করতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আলীনগর চা বাগানের ২০০ নারী চা শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করে চা ছাত্র যুব পরিষদ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বাগানের ৩ নম্বর দফার এসব মাস্ক বিতরণ করা হয়। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চা প্লান্টেশন এলাকায় নারী চা শ্রমিকরা কাজ করে।
আলীনগর চা বাগানের চা ছাত্র যুব পরিষদের সভাপতি সজল কৈরী জানান, এমনিতেই নারী চা শ্রমিকরা স্বাস্থ্য অসচেতন। তারার নিজেদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও মুখ খুলে এ সমস্যার কথা কারো কাছে ব্যক্ত করে না। তারা সকাল ৮টায় চা প্লান্টেশন এলাকায় কাজে যায় আর সারাদিন পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ প্লান্টেশন এলাকায় কাজ করে বিকেলে ঘরে ফিরে। সম্প্রতি সারা বিশ্বে ছোঁয়াছে মরণব্যাধী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে দুই লক্ষাধিক মানুষ। এ অবস্থায় অণগ্রসর নারী চা শ্রমিকদের করোনাভাইরাস সচেতন করতে কাজের সময় তাদেরকে মাস্ক পরিধানের পরামর্শ দেওয়া হয়। চা ছাত্র যুব পরিষদের সদস্যরা নিজেরা চাঁদা তুলে ২০০ মাস্ক কিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে আলীনগর চা বাগানের ৩ নম্বর দফার ২০০ নারীর মাঝে মাস্ক বিতরণ করেছে। পর্যায়ক্রমে এ মাস্ক বিতরণ করা হবে বাকি নারী চা শ্রমিকদের মাঝেও।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আলীনগর চা বাগানের একটি প্লান্টেশন এলাকায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ২০০ নারী চা শ্রমিকের মাঝে মাস্ত বিতরণ করেন আলীনগর চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) এ জে এম রফিউর আলম। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আলনিগর চা বাগানের প্রধান করণিক নিয়ামুল হক, চা ছাত্র যুব পরিষদের সভাপতি সজল কৈরী, সদস্য রাহেল আহমেদ, মোহন বাগতি, রাজু গোস্বামী, ইকবার আহমেদ, অনিক আশিষ প্রমুখ। এসময় উপস্থিত নারী চা শ্রমিকদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে কি কি করনীয় সে সম্পর্কে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন ডেপুটি ম্যানেজার এ জে এম রফিউল আলম ও চা ছাত্র যুব পরিষদের সদস্যরা।
করোনা ভাইরাস কেন্দ্র করে কমলগঞ্জে আকস্মিকভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি \ নির্বাহী হাকিমের বাজার মনিটরিং
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের হাট-বাজারে মানুষজনের উপস্থিতি কমে গেছে। করোনা ভাইরাসকে অজুহাত করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকস্মিক কমলগঞ্জের শমশেরনগর, ভানুগাছসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে ক্রেতাদের পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার হিড়িক শুরু হয়। ক্রেতাদের হিড়িক দেখে বাজারে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৭০/৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ক্রেতারা ঈদের বাজারের মত পেঁয়াজ, চাল, রসুন, চিনি,ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছেন।
শমশেরনগরের ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে হঠাৎ করে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। ক্রেতারা সবাই পেঁয়াজ, রসুন, ডাল,তেল, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেন মোদী দোকানের বাহিরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। গত বুধবার রাত পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও ক্রেতাদের হিড়িক দেখে দোকানীরা ৭০/৮০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এ খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম নাসরিন চৌধুরী বাজার মনিটরিং শুরু করেন।
ভানুগাছ ও শমশেরনগর বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মোদী দোকানী এ প্রতিনিধিকে বলেন, বুধবার রাতে শ্রীমঙ্গলের আড়ৎ থেকে জেনেছেন পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আড়তে আগের দামে পেঁয়াজ পাওয়া যাবে না। আর এ খবর ক্রেতারা জেনে রাতেই অতিরিক্তহারে পেঁয়াজ কিনতে এসেছিলেন। তখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশী নেওয়া হয়েছে মাত্র। অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম সামান্য বেড়েছে। সকালে নির্বাহী হাকিমের বাজার মনিটরিং সম্পর্কে মোদী দোকানীরা বলেন, তিনি এসে দোকানীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা সকহারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম নাসরিন চৌধুরী বলেন, দাম বৃদ্ধির খবর পেয়ে তিনি শমশেরনগর, ভানুগাছ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করেছেন। তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল আড়তে কিছুটা দাম বাড়ায় কমলগঞ্জের হাট বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে বলে মোদী দোকানীরা জানিয়েছেন। তবে তিনি মোদী দোকানীদের কড়াভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন মূল্য তালিকা টানানোর জন্য। তিনি আরো বলেন, বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে ইচ্ছেকৃতভাবে দাম বাড়ালে দোকানীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।