কুকি বিদ্রোহ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারত একসাথে কাজ করবে
।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।
(১)
সশস্র কুকি বিদ্রোহ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারত একসাথে কাজ করবে। সম্প্রতি ভারতের মিজোরাম ও বাংলাদেশ সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেএনএ (কুকি চীন ন্যাশনাল আর্মি)-র তৎপরতায় ঢাকা ও দিল্লি নড়েচড়ে বসছে। বন্ধুবর সেলিম সামাদ-র এ সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ ভারতের ১লা আগষ্ট ২০২৩ ‘ইন্ডিয়া ন্যারেটিভ’-এ ছাপা হয়েছে, উৎসাহীরা তা পড়ে নিতে পারবেন, কিন্তু আমি ভাবছি, নুতন করে কুকিদের তৎপরতার সাথে নির্বাচন জড়িত না-তো? ‘ইউ নেভার নো’! ২০২৪-এ বাংলাদেশ ও ভারতে সাধারণ নির্বাচন। বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব, শেখ হাসিনা-মোদী চমৎকার সম্পর্কের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আইএসআই বা তাদের বন্ধুরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারছে না। আপাতত: নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই অঞ্চলকে ‘অস্থিতিশীল’ করার একটি প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। মোদির আমেরিকা সফরকালে টের পাওয়া যায় যে, একটি শক্তিশালী লবি মোদিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। একই লবি শেখ হাসিনাকেও হটাতে সচেষ্ট। দু’জনকে না সরাতে পারলেও অন্তত: একজনকে ঘায়েল করতে পারলে তারা কিছুটা সফল হবে। শেখ হাসিনা-মোদী বা বাংলাদেশ-ভারত এটি জানেন, তাই তারা এতদাঞ্চলে ‘সন্ত্রাসবাদ’ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তৎজন্যে একসাথে কাজ করতে আগ্রহী, এবং এটি দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট।
(২)
মাত্র সেদিন ১৪জন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে এক চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বহিস্কার করা এবং সামনের নির্বাচনটি যাতে জাতিসংঘের তত্বাবধানে হয় সেজন্যে উদ্যোগী হবার আহবান জানিয়েছেন। মিডিয়ায় এটি ফলাও করে এসেছে। জাতিসংঘে কর্মরত একজনের সাথে এনিয়ে কথা তুলতে তিনি বললেন, ‘দিজ ইজ নট দি ওয়ে’। বললেন, জাতিসংঘ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান, এর নিয়ম মত এটি চলে। তবে তিনি বলেন, যাঁরা এসব লবিং করছে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী, এবং তাদের অর্থবিত্ত আছে। ইতিপূর্বে ঢাকায় এক ডজন রাষ্ট্রদূত ‘হিরো আলম’কে নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এসব চিঠিপত্র কেন, এমত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট জানালেন, ‘উনি তোমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকলে, তোমরা আরো চিঠিপত্র পাবে’। বাংলাদেশে কূটনীতিকরা কিন্তু ভেতরে ভেতরে একই কথা বলছেন। এদিকে এমিনিস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর শক্তি প্রয়োগের সমালোচনা করেছে।
(৩)
নির্বাচন আসছে, আমাদের বাম নেতারা আবার গা-ঝাড়া দিয়ে উঠছেন, কারণ মনোনয়ন লাগবে, ‘নৌকা’ প্রতীক না পেলে জেতা যাবেনা। রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ও দিলীপ বড়ুয়াসহ ১২জন বাম নেতা ৭দিন চীন ঘুরে এসে ফরমান দিয়েছেন, মার্কিন চাপ মোকাবেলায় চীনকে পাশে রাখা দরকার। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে বামদের সমস্যা হলো, এঁরা দেশে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, এবং চীনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তবে এদের প্রায় সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে। নেতাদের বয়স হয়েছে, বর্ষীয়ান এসব নেতারা আমেরিকায় এসে বিনে পয়সায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে যান, কিছুটা সময় অবসর কাটিয়ে যান। আমার জানতে ইচ্ছে করে, তাঁদের এ সফরের খরচটা কারা দিয়েছেন? যাহোক, চীনের বিশেষ দূত ‘নীরবে’ ঢাকা সফর করে গেছেন। বামরা ও ইসলামী মৌলবাদীরা সব কাজ ‘নীরবে’ বা তলে তলে করতে পছন্দ করেন।
(৪)
বিএনপি’র সাম্প্রতিক কর্মসূচি পালনকালে জাতি ‘গয়েশ্বর’ নাটক দেখলো। ভিডিওতে দেখা গেলো ধাওয়া খেয়ে তিনি পড়ে যাচ্ছেন, পুলিশ তাঁকে উঠিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তী দৃশ্যে দেখা যায়, তিনি ডিবি প্রধান হারুনের অফিসে ‘লাঞ্চ’ করছেন, হারুন যথেষ্ট যত্নআত্মি করছেন। এই ভিডিও দেখে গয়েশ্বর বললেন, আমি শুধু হালকা সবজি ও রুই মাছ খেয়েছি। তিনি অভিমানের সুরে বলেছেন, আমাকে খাইয়ে ভিডিও প্রকাশ ‘নিন্মরূচির’ পরিচায়ক। এত খাতির দেখে নিন্দুকেরা হয়তো অন্যকথা বলছেন, তাই তিনি আবার বললেন, ‘গয়েশ্বরকে কিনতে পারে, এতটাকা সরকারের কাছে নেই’! পরে অবশ্য, সাংবাদিকদের ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটক নয় বরং হামলা থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। জাতি আশা করবে, ডিবি হারুন, ভবিষ্যতে অন্য নেতাদের এমনি সমাদর করে লাঞ্চ খাওয়াবেন।
পাদটীকা: মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘ডেঙ্গু বাংলাদেশ থেকে আসছে’। দিদিকে বলা যায়, আমাদের ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান আপনি নিয়েছেন, এবার ডেঙ্গু নেন!