ফিচার্ড মত-মতান্তর

খেলাতে দৃষ্টিকটু বৈষম্য?

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

খেলাতে দৃষ্টিকটু বৈষম্য?

শিতাংশু গুহ, ২৬শে ডিসেম্বর ২০২১, নিউইয়র্ক।। ক্রিকেট খেলা দেখা ছেড়ে দিয়েছি বহুদিন, তখনো ‘ওয়ান ডে’ ম্যাচ ছিলোনা, শুধুই টেষ্ট ম্যাচ। আমার ধারণা ‘ওয়ান ডে’ ম্যাচ না থাকলে এই ব্যস্ত জগতে এতদিন ক্রিকেট খেলার সমাপ্তি ঘটতো? ফুটবল বা ‘সকার’ গতির খেলা, ছিলো, আছে, থাকবে, দেখার সময় কৈ? এবার আমাদের মেয়েরা অনূর্ধ্ব-১৯ সার্ফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে, এজন্যে তাদের অভিনন্দন। মনে পড়লো, ভেবে খারাপ লাগলো, আফগান মেয়েরা খেলাধুলায় ভালো করছিলো, এখন ওঁরা জীবন ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

আমাদের জাতীয় খেলা ‘কাবাডি’, যাঁরা খেলেন বা যাদের এ খেলা সম্পর্কে ধারণা আছে, তাঁরা জানেন, এই খেলার ‘মজা’ হচ্ছে, একজন যখন লাইন ক্রস করতে এগিয়ে যায়, সবাই মিলে তাঁকে জাপ্টে ধরে যাতে এগুতে না পারে। এই খেলার সাথে বাঙ্গালীর জাতীয় চরিত্রের একটি অপূর্ব মিল আছে, আমরা কেউ কাউকে এগিয়ে যেতে দিতে চাইনা? বাঙ্গালী মেয়েরা খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা কি আসলে ওদের এগিয়ে দিতে চাই? পুরুষ ও মহিলা টীমের মধ্যে এত এত বৈষম্য কি তা বলে?

নারী ও পুরুষ খেলোয়াড়দের বেতন বৈষম্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখলাম, তাতে বলা হচ্ছে, ক্লাব ফুটবলে একজন শীর্ষ পুরুষ প্লেয়ারের রোজগার ৫০/৬০ লক্ষ টাকা, পক্ষান্তরে মেয়েদের আয় ৩/৪ লক্ষ। ফুটবলে ‘এ’ শ্রেণীর মেয়েরা পান ১০হাজার, ‘বি’-৮হাজার এবং ‘সি’-৬হাজার। ক্রিকেটের অবস্থাও খারাপ, ‘এ’ বিভাগে, নারী-৫০হাজার, পুরুষ ৪লক্ষ। ‘বি’ বিভাগ, নারী ৪০হাজার, পুরুষ ৩লক্ষ। ‘সি’ বিভাগ, নারী ৩০হাজার, পুরুষ ২লক্ষ। ওয়ান ডে ম্যাচে নারী পান ৯হাজার, পুরুষ ৩লক্ষ।

এটিকে নারী-পুরুষ সমান অধিকার বলা উচিত? এবারকার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটি দেন্ আনাই মোগিনি। প্রানঢালা অভিনন্দন দলনেতা মারিয়া মান্দা ও তাঁর দলকে। অথচ কত দু:খের কাহিনী মারিয়া মান্দার। কেউ যেন বললেন, ‘গৃহ পরিচালিকা থেকে জাতীয় দলের লিডার’। সাফ অনুর্ধ ১৯ নারী অপরাজিত চ্যাম্পিয়ান বাংলাদেশ। ২০১৮-তে চ্যাম্পিয়ান ছিলো বাংলাদেশ, এরপরও নারী প্লেয়ারদের এতটা দুর্দশা’র কারণ কি, ‘অবহেলা’?

বাস্কেটবলে নারীদের নিয়ে নাকি একটি মজার গল্প আছে? ২০১৫-তে পাকিস্তানকে হারানোর পর তাঁদের প্রত্যেককে ৫শ’ টাকা করে বোনাস দেয়া হয়েছিলো, ৫শ’ টাকা ৫শ’ ডলার নয়? জানা যায়, অনুর্ধ-১৬ আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতে ফেরার পথে বাফুফে তাঁদের জন্যে নিজস্ব বাসের ব্যবস্থা করেনি। ওঁরা অনেকেই জার্সি পড়ে পাবলিক বাসে বাড়ী যায়। রাস্তায় ওদের কেউ কেউ ‘ধর্মভীরু’ কারো কারো রোষানলে পরে? ওদের কাউকে কাউকে বাদাড়ে, চ্যাংচুং, চায়নিজ, বার্মিজ বলে খ্যাপানো তো আছেই?

ছোট্ট ঋতুপর্ণা নব্বই মিনিট পুরোদমে দৌঁড়েছে। মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, রিতুপর্ণা চাকমা, রিপনা চাকমা, আনুচিং আর আনাইং মগিনীরা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতে কোন খেলায় এদের কেউ একজন খারাপ খেললে কি ওদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে? প্রশ্ন উঠবে জাতি, ধর্ম নিয়ে? ওঠা কি খুবই অস্বাভাবিক? অতীত কি তাই বলে? এজন্যে বলছি যে, পুরো দল খারাপ খেললেও দায় কিন্তু নিতে হয়, লিটন ও সৌম্যকে, তাই না?

বাঙ্গালী নারী, এবার আমাদের প্লেয়ার মেয়েরা আবারো দেখালো, তাঁরা ঘর সামলানো, বাচ্চা দেখা, অর্থনীতি, দেশ, সমাজ, সংসদ, ক্রিকেট, ফুটবল সবই সামলাতে পারে। দুর্গা’র সাথে এদের তাই তুলনা, একাই দশ হাতে দশদিক সামলাচ্ছে। ফাইনাল খেলা দেখে একজন জানালেন, দলে অন্যূন চল্লিশ শতাংশ সংখ্যালঘু, পুরো দেশে এমনটা হলে দেশটা ‘সোনার বাংলা’ হয়ে যেতো। এটাও সত্যি যে, দেশে সংখ্যালঘু না থাকলে মেয়েদের খেলাধুলা, নাচ-গান, সংস্কৃতি কিছুই থাকবে না! ধন্যবাদ, রব্বানীর টীমকে। # [email protected];

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন