জানা অজানা ফিচার্ড

চা : জেনে নিন চায়ের ইতিহাস, চা পাতার প্রকারভেদ ও চায়ের গুনাগুন

লাল চা

চা বলতে সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চাপাতা পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। চা গাছ থেকে চায়ের পাতা পাওয়া যায়। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস (Camellia Sinensis)। এটি চা_গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুল দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা একটি কৃষিজাত পণ্য।

পানির পরেই এটি বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। চা পানে একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ উপভোগ করে পানকারীরা। চায়ের ইংরেজি অনুবাদ হলো টি (tea)। গ্রিকদেবী থিয়ার নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’, পরে তা হয়ে যায় ‘চা’। পৃথীবিতে চীন সবথেকে বেশি চা রপ্তানি করে।

চায়ের প্রকারভেদ :
প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে এটি পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমনঃ কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা। এছাড়াও, সাদা, হলুদ, পুয়ের চা_সহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে। তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত হল সাদা, সবুজ, উলং এবং কালো। প্রায় সবরকম চা_ই ক্যামেলিয়া সিনেনসিস থেকে তৈরি করা হলেও বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করার কারণে এক এক ধরনের চা এক এক রকম স্বাদযুক্ত হয়।

গাছ ও চা পাতার প্রকারভেদ :
পৃথিবীতে আসাম এবং চীনজাতীয় এই দুই প্রকারের চায়ের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। চীনজাতীয় গাছের পাতা স্বাদ ও গন্ধে অনন্য। আবার আসামজাতীয় গাছের পাতা রঙের জন্য বিখ্যাত। এই দুই ধরনের পাতার উন্নত সংমিশ্রণের উপরই এর গুণাগুন নির্ভর করে। চাপাতা মিশ্রণ একটি নিপুণতা ও অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটি অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা সম্পাদনা করতে হয়।

চায়ের ইতিহাস :
এটি মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল। একপ্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়। চায়ের আদি জন্মভূমি হল চীন।

১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু করে। ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চাষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র বিশ্বে ৩৮,০০,০০০ টন চা-পাতা উৎপাদিত হয়েছে।

চায়ের গুনাগুন :
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বিশ্বের মানুষ প্রতিদিন ৩৭০ কোটি কাপ চা পান করেন। সুস্বাদু বলেই মানুষ এটি পান করে, ব্যাপারটি সে রকম নয়। এর পুষ্টিগুণ কম হলেও এতে রয়েছে অনেক উপকারী উপাদান।

চায়ে আছে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস ও ক্যাটেচিন। পলিফেনলস এবং ক্যাটেচিন ফ্রি রেডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয় এবং কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে থামায় যা ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা দেহের অভ্যন্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চায়ের উপাদানগুলোর মধ্যে ৭ শতাংশ আছে থিওফাইলিন ও থিওব্রোমিন যা শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির জন্য খুব উপকারী। এটি হৃৎপিণ্ড ও দেহের অন্যান্য পেশি সতেজ রাখতেও সহায়তা করে।

চায়ে আছে এপিগ্যালোক্যাটেচিন-গ্যালেট (ইজিসিজি) নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা খুব কার্যকর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি এর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ফলদায়ক। এ ছাড়া এই পানিয় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

ডায়াবেটিসের জন্যও অতন্ত্য উপকারী পানীয় এটি। এর লিকার দাঁতের ক্ষয়রোধ ও মাড়ি শক্ত করে। নিয়মিত চা_পানে রক্ত চলাচল ভালো হয়, পেট পরিষ্কার করে আর মস্তিষ্ক সচল রাখে৷

চায়ের মধ্যে লাল চা বেশি উপকারী। দুধ-চিনি মেশালে এর স্বাদ অবশ্য বেশি ভালো। তবে গবেষকরা হালকা লাল_চা পানের কথাই বেশি বলেন।

অনলাইন প্রতিবেদন

সংবাদটি শেয়ার করুন