জন্মশতবর্ষ শৃঙ্খল মুক্তির মহানায়কের প্রতি অনন্ত শ্রদ্ধা
‘ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয়/জ্যোৎস্নার সারস/ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো/দুলতে থাকে স্বাধীনতা/ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে/মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি’- চিরধন্য সেই শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ জন্মশতবার্ষিকী। আজ মঙ্গলবার নিয়ে এসেছে বহু প্রতীক্ষিত মুজিববর্ষের মঙ্গলবারতা, দেশজুড়ে বইছে আনন্দের ফল্কগ্দুধারা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির প্রত্যেকের কাছে এক নবজাগরণের বারতা নিয়ে নবঅভ্যুদয় ঘটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পুরো বর্ষজুড়েই উৎসবমুখর নানা আয়োজন ও কর্মসূচি থাকবে সারাদেশে। গোটা জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে তাদের আস্থার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও দিনটি গভীর শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় উদযাপিত হবে। ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপন অব্যাহত থাকবে।
ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল শতবর্ষ আগে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চে গোপালগঞ্জের অজপাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায়, সল্ফ্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে। শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত জাতির মুক্তি দিতে তার আবির্ভাব ঘটে ধূমকেতুর মতো। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের। সেই থেকে বাঙালির দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’
মুজিববর্ষ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছিল ব্যাপক আকারে। সে অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশাল কর্মযজ্ঞও চলছিল। কিন্তু বাদ সাধে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাস। জনস্বার্থে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে এই অনুষ্ঠান করা হবে।
তাই বলে এই দিনে বাঙালির আবেগ, চেতনা ও প্রাণের স্ম্ফুরণ কি থেমে থাকবে? কিছুতেই সেটি হওয়ার নয়। তাই সীমিত আকারে উৎসবের আমেজে আজ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হবে। গোটা জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর অবনত মস্তকে স্মরণ করবে তার জাতিসত্তাভিত্তিক পরিচয়ের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দিনটি উদযাপিত হবে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচির পাশাপাশি থাকবে সরকারি ছুটিও।
গত ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা। ওই দিন জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে চলছে এই ক্ষণগণনা- যার পরিসমাপ্তি ঘটবে আজ মঙ্গলবার। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো ডিজিটাল ঘড়ির মাধ্যমে এই ক্ষণগণনা কার্যক্রম চলেছে। মুজিব জন্মশতবর্ষের পুনর্বিন্যাসকৃত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজি উৎসবের মাধ্যমে মূল আয়োজন শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতির উদ্দেশে ভাষণের পর আতশবাজি কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। একই সময় সারাদেশেও আতশবাজি উৎসব হবে।
জনসমাগম ছাড়াই দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ যেন উদ্বোধনী আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পারেন, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি টিভি চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একযোগে সম্প্রচার করা হবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ছাড়াও রাজনৈতিক-সামাজিক দল ও সংগঠন আলাদাভাবে কর্মসূচির আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগ রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আতশবাজিসহ দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে পৃথক বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম :বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান। মা সায়েরা খাতুন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তৃতীয়। শতবর্ষ আগে পরাধীনতার নিকষ অন্ধকারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে মুক্তির প্রভাকররূপে জন্ম নেওয়া ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি শিক্ষা-দীক্ষা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, মহত্তম জীবনবোধ, সততা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের মহান স্থপতি।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকেই তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। গ্রামের হিন্দু-মুসলমানদের সম্মিলিত সম্প্রীতির সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার।
স্কুলজীবনেই শেখ মুজিব জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকার সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালে তিনি ছাত্রলীগ গঠন করেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক হন। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ১৯৫৩ সালে। ১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে। তিনি মাত্র ৫৫ বছরের জীবন পেয়েছেন। আর এ সময়েই তিনি রচনা করেছেন স্বাধীনতার মহাকাব্য। এ জন্য তাকে যৌবনের তিন হাজার ৫৩ দিন কারাগারের অন্তরালে কাটাতে হয়েছে। এমনকি তিনি ফাঁসির মঞ্চেও গেছেন। কিন্তু দাবি আদায়ে অনড়-অটল থেকেছেন। একমুহূর্তের জন্যও হননি লক্ষ্যচ্যুত। আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনও মাথা নত করেননি।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন তিনি। আর বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে ১৯৬৮ সালে তাদের কারাগারে পাঠান সামরিক জান্তা জেনারেল আইয়ুব খান।
ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট পায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী জয়কে মেনে নিতে পারেনি। তাই ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করতে থাকে। এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত করেন।
একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ভাষণের মধ্য দিয়েই সেদিন ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা দেন তিনি।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে বীর বাঙালি একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতির ইতিহাসের অন্ধকার যুগের অবসান ঘটে।
বাংলা বাঙালি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য। শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। মুক্তিকামী মানুষের স্লোগানের নাম শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির চেতনার ধমনিতে প্রবাহিত শুদ্ধতম নাম শেখ মুজিব। তিনি চিরন্তন-চিরঞ্জীব; বাঙালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে অবিনাশী চেতনার নাম শেখ মুজিব। তিনি বাঙালি জাতির কাছে স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের মহানায়ক; পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির মহান পথপ্রদর্শক। তিনি বাঙালির অসীম সাহসিকতার প্রতীক- সমগ্র জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। তিনি বাঙালি মানসে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির নির্মাতা। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোনো পরিসমাপ্তি নেই। বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু সাম্য, মৈত্রী, গণতন্ত্রসহ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত- স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক। বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, এই পৃথিবী যত দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে, তত দিন তিনি একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে- পথ দেখাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য সারাবিশ্বে সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জুলিও কুরি পদক পেয়েছিলেন। বিবিসির এক জরিপেও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।