ড. শোয়েব সাঈদের “প্রাচ্য-প্রতীচ্যের পথে প্রান্তরে” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব
ড. শোয়েব সাঈদের “প্রাচ্য-প্রতীচ্যের পথে প্রান্তরে” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় গত ২৪শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কানাডার মন্ট্রিয়লে ক্যাফে রয়্যাল ভ্যাঙ্কুয়েট হলে। মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব) দিদার আতাউর হোসেনের সভাপতিত্বে মন্ট্রিয়লের শতাধিক গুনীজনের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক উপাচার্য মুক্তিযোদ্ধা ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি আলোচকরা ছিলেন ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. শুভ বসু, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক লেখক তাজুল মোহাম্মদ, জন এবোট সিজেপের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. রোকসানা নাজনীন, বিদ্যাপ্রকাশের কর্ণধার প্রকাশক মজিবুর রহমান খোকা।
মুখ্য আলোচক ছিলেন সিলেটের শাহজালাল এবং অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক শিক্ষক, কানাডা ফেডারেল গভর্নমেন্টের অর্থনীতিবিদ ড. নাসিম সাইদী।
কাব্যিক ধাচে তথ্যবহুল বাক্য বিন্যাস আর সময়ানুবর্তিতায় তিন ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানটি চমৎকারভাবে উপস্থাপনা করেন মন্ট্রিয়লের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. রুমানা নাহিদ সোবহান।
উপস্থিত বিপুল বোদ্ধা দর্শক শ্রোতাদের মাঝ থেকে বইটির উপর আলোচনায় ব্যতিক্রমী আয়োজন ছিল নারীদের প্রাধান্য। বক্তৃতা করেন আইনজীবী লেখক শাহীন আখতার মনির, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের তাঞ্জিল আখতার, ভুগোলের ফারিয়া ফারজানা, ফলিত রসায়নের নূর জাহান খান শিল্পী, স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী তসলিমা মাহবুব, ডাক্তার জিনাত ফারাহ নাজ, অর্থনীতি আর মানব সম্পদ উন্নয়নের শিমি চৌধুরী, জনপ্রিয় লেখিকা আলিফ আলম, কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মইনুল আহসান, কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশলের অধ্যাপক ওয়াইজ আহমেদ, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ড. সন্দীপ ব্যানারজি।
সাংস্কৃতিক পর্বে আবৃতি করেন বিশিষ্ট উপস্থাপক, সংগঠক শামসাদ রানা, কবি, লেখিকা, সুলতানা শিরীন শাজি, স্বনামধন্য আবৃতিকার আফাজুদ্দিন তোতন আহমেদ, বাচিক শিল্পী মুফতি ফারুক, বিশিষ্ট আবৃতিকার আবৃতিকার সঞ্জিব দাস উত্তম।
সাউন্ড সিস্টেমে ছিলেন ড. হারুনুর রশীদ রাজা। চিত্রগ্রহণে সাংবাদিক সদেরা সুজন, সাংবাদিক শরীফ ইকবাল চৌধুরী।
মূল আলোচক ড. নাসিম সাইদীর বইটি নিয়ে তথ্যবহুল পর্যালোচনা পিনপতন নীরবতায় আকৃষ্ট করে রাখে শ্রোতাদের। জাপান, উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন স্থান নিয়ে লেখকের ব্যাতিক্রমধর্মী গভীর দৃষ্টিভঙ্গি, লেখার মৌলিকত্ব, আর বইটির সাহিত্যমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন ড. নাসিম। জাপানের উষ্ণ প্রসবণ নিয়ে লেখকের লেখার উপর ড. নাসিমের আলোচনাটি শ্রোতাদের যথেষ্ট বিনোদন যুগিয়েছে।
ড. শুভ বসু বাংলা সাহিত্যের দুজন বিখ্যাত ভ্রমণ লেখকদের প্রসঙ্গ টেনে এই যুগের ভ্রমণ লেখক ড. শোয়েবের লেখার তথ্যবহুল ভিন্ন স্টাইলের পর্যালোচনা করে নান্দনিক ভাষায় ব্যাপক তথ্যের সমাহারের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।
কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বিদ্যাপ্রকাশের মজিবুর রহমান খোকা বই প্রকাশের খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলে। তিনি লেখকের এই বইটিতে বর্ণনার গভীরতা, পাঠককে ভ্রমণ কাহিনীর সাথে একাকার করে দেবার সক্ষমতার উপর আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ আর সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নারী বক্তাদের প্রাঞ্জল আর প্রাসঙ্গিক আলোচনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। বক্তাদের আলোচনায় বইটির বেশ কিছু অংশ উঠে আসে। নাগাসাকির আগ্নেয়গিরিতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে হঠাৎ খুঁজে পাবার ইতিহাসস্নাত আবেগময় ধারাবিবরণী, জাপানে উষ্ণ প্রসবণ, বুলেট ট্রেন, মাউন্ট ফুজি আরোহণ, বালু গোসল, তুষারপাত আর স্কি করার নান্দনিক অভিজ্ঞতাগুলোর পাশাপাশি জাপান থেকে কানাডায় অভিবাসনের নানা রঙ, যুক্তরাষ্ট্র ইমিগ্রেশন, দুই কোরিয়া সীমান্তে মানবতার আকুতি, মায়া সভ্যতা, হেলসিংকিতে ভাতের খোঁজ, ইতালিতে বাঙালি, রাউন্ড দা ওয়ার্ল্ড ভ্রমণে চীনের প্রাচীর সহ বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা, সেন্ট্রাল আমেরিকায় মাছি মারার বিলিয়ন ডলার কর্মযজ্ঞ, প্রকৃতির নন্দনকানন সুইজারল্যান্ড এবং নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কানাডার রকি পর্বতমালার ধারাবর্ণনা, উত্তর আমেরিকার মিঠা পানি লেকের ইতিবৃত্ত, বিমানে টার্বুল্যান্স ভীতি কি মনস্তাত্ত্বিক এরকম তথ্য বিশ্লেষণে আর মানবিক সমাজের বর্ণনায় কাহিনী মিশে গেছে ভ্রমণ সাহিত্যে।
উচ্চমানের উপস্থাপনা আর সুশৃঙ্খল আয়োজনের বই প্রকাশের এই অনুষ্ঠানে দীর্ঘ সময় ধরে বিপুল শ্রোতাদের উপস্থিতি মন্ট্রিয়লের বাঙালি সমাজে রুচি আর মান সম্পরন অনুষ্ঠানের একটি মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত হবে।