ঢাকা -টরন্টো – ঢাকা বিমান রুট ও তা নিয়ে রাজনীতি |||| অমলেন্দু ধর
বিমান-বাংলাদেশ এয়ার লাইনস ঢাকা – টরন্টো – ঢাকা – ফ্লাইট চালু করতে যাচ্ছে। বেশীর ভাগ কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী এবং যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাংশে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এতে প্রবাসীদের সময় অনেক বাঁচবে, পথিমধ্যে বিমান বদলের ঝুকি ও ঐ সংশ্লিষ্ট নানা ঝামেলার অবসান হবে।
আজ বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এক সমাবেশে বলেছেন এই ফ্লাইট নাকি বাংলাদেশ সরকার চালু করছে নিজ দলীয় লুটেরাদের টাকা পাচারের সুবিধার জন্যে। ঊনার এই মন্তব্য শুনে আমি বেশ হতাশই হয়েছি। বিরোধীতার এমন নমুনার কারণেই বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হচ্ছে। সে প্রসঙ্গে বলার আগে এই রুটের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বলে নেয়াই উত্তম মনে করি। উত্তর আমেরিকার কোন দেশেই বিমানের কোন ফ্লাইট চালু নেই অথচ এই অঞ্চলে প্রায় ৮ লক্ষ প্রবাসীর বসবাস। বছরে এই অঞ্চলের লক্ষাধিক বাংলাদেশী দেশে যাতায়াত করতে বিদেশী এয়ার লাইনস ব্যবহার করেন। এতে প্রতি বছর কয়েক শ’ কোটি ডলার বিদেশে চলে যায়, যাত্রীরাও যথেষ্ট ঝামেলা পোহান। ঢাকা – টরন্টো -ঢাকা রুট এই শত শত কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে, যাত্রীদের হয়রানির অবসান না হলেও অনেকটা কমে আসবে। এখন বিমানের দায়িত্ব হলো যতদূর সম্ভব যাত্রীসেবার মান বজায় রাখা, ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং সিডিউল ঠিক রাখা। এগুলো মোটামুটি ঠিক না রাখতে পারলে যাত্রীরা উতসাহ হারাবেন। বিরোধীদের জানা থাকা উচিত বিমানে কেউ বস্তা ভরে টাকা নিয়ে আসে না, টাকা পাচার হয় হুন্ডিতে, অনেক সময় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ও ব্যবসায়িক প্রতারণার মাধ্যমে।
বলছিলাম বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের বিপর্যয়ের কথা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা থাকতেই হবে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে যা ইচ্ছে তাই বলার স্বাধীনতা। নাগরিককে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতা দেয়া হয় না, নিজের অধিকারের সমান অধিকার অন্য নাগরিকেরও রয়েছে তা মাথায় রাখা, অন্যের বিরুদ্ধে অপমানজনক ভাষা প্রয়োগ না করা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন দেশে বিরোধী দল বা গোষ্ঠি ও সংগঠনগুলো নানা অজুহাতে আইন লঙ্ঘন, রাস্তাঘাট রুদ্ধ বা ধ্বংস করা ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত হয়ে সরকারকে অগণতান্ত্রিক আচরণে বাধ্য করে। সম্প্রতি কানাডার টাক ড্রাইভারেরা করোনা প্রতিরোধে ভেকসিন দিবে না, করোনার সমস্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের দাবীতে ফ্রেডম কনভয় নামে এক ট্রাকযাত্রা শুরু করে কানাডার রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে চুড়ান্ত বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। পার্লামেন্ট চলছিল না, অফিস আদালত, দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে জায়। ২১ দিন ব্যাপী সরকার তাদের নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত জরুরী আইন প্রয়োগ করে তাদের গ্রেফতার করে এবং বিভিন্ন মামলায় শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ভারত ইত্যাদি দেশেও নাগরিকদের গণতান্ত্রিক শিক্ষার অভাবে গণতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারসমুহ মানুষের দাবী আর দাবী মেটাতে গিয়ে প্রতিরক্ষা খাতকে উপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে একনায়কতান্ত্রিক রাশিয়ার আক্রমণের সামনে তারা অসহায়। সুতরাং যে কোন দেশের একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে হটাতে হলে এমন উক্তি বা কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যাতে সরকার শক্তি প্রয়োগের সুযোগ না পায়, মানুষ সরকারের বদলে বিরোধী দলকেই সমালোচনা করার সুযোগ না পায়।
লেখক: প্রাক্তন আইনজীবী
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান