দেশের সংবাদ

নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

নামছে সশস্ত্রবাহিনী

নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশনের মতো জরুরিসেবা ছাড়া আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে মোতায়েন করা হবে সশস্ত্রবাহিনী। নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচাল করবে ব্যাংকগুলো।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানা।

তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি আছে, পরের দুইদিন ২৭-২৮ সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এরসঙ্গে আরও ৫ দিন ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এবং ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটিগুলোও এর সঙ্গে যুক্ত হবে।’

“করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।সেই সঙ্গে জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে এই সময়ে তারা যেন কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে না আসে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, এই সময়ে সরকারি যেসব অফিস খোলা রাখার প্রয়োজন বলে মনে হবে, তা খোলা রাখতে পারবে।

আর মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ কবে সশস্ত্রবাহিনী৷ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব এবং সতর্কতা হিসেবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা কাজ করবে।

 

নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা

 

করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আগের সেই ভিড় নেই। দেখতে দেখতে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতাশূন্য। গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে। তার চেয়েও কম যাত্রী। এ চিত্র অজানা শঙ্কা জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মানুষের স্বস্তি প্রায় কেড়ে নিয়েছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, মানবিক মূল্যবোধসহ বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলোও এর প্রাদুর্ভাবের কাছে কেমন যেন অসহায়। অনেকের চোখের জল চোখেই শুকোচ্ছে। কান্না বারণ। বিষন্ন মন নিয়ে গৃহবন্দি মানুষ।

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে জনসমাগম এড়াতে সাধারণ মানুষকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া, হাত ধোয়া ও নিয়মিত পরিষ্কার থাকার পাশাপাশি বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন থেকে। তবে এরই মাঝে অব্যবস্থাপনার নানা চিত্র সামনে এসেছে। ফলে কিছুটা যেন ভীতসন্ত্রস্ত রাজধানীর বাসিন্দারা। বাস্তব অবস্থা প্রত্যক্ষ করে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গেছেন। সক্ষম এবং সচেতন মানুষ গৃহবন্দি হচ্ছেন স্বেচ্ছায়। সংক্রমণ ঠেকাতে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছেন তারা। এসব কারণে ক্রমে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকার রাস্তাঘাট।

রাজধানীর গুলশান, বনানী, গাবতলী, ফার্মগেট, হাতিরপুল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, মতিঝিল, যাত্রবাাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের তুলনায় মানুষ অনেক কম। অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ নেই। হুড়োহুড়ি অনুপস্থিত। রাস্তা জুড়ে নেই যানজট। ফাঁকা যাচ্ছে বাস। কোথাও কোথাও ড্রাইভাররা বাস থামিয়ে বসে আছেন। যাত্রী জন্য দীর্ঘক্ষণ হাঁকডাক করছেন হেলপাররা। যে কজন যাত্রী উঠছেন তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক।করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকায় ভিআইপি রোডেও রাজত্ব করেছে রিকশা। গণপরিবহনে জনসমাগম এড়াতে রিকশায় করে গন্তব্যস্থলে গিয়েছেন অনেকেই। তবে ভাড়াও গুণতে হয়েছে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। মহাখালীর মতো ব্যস্ত এলাকায় যানজটের দেখা নেই। গাড়ি কম। যাত্রীও। রবিউল হোসেন নামের এক তরুণ রেলক্রসিংয়ের পাশে অনেক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু বাসে বা অন্য কোন যানবাহনে উঠছিলেন না। বিষয়টা তাহলে কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি প্রাইভেট ফার্মের সেলস এক্সিকিউটিভ। গুলশানে অফিস। নাখালপাড়ার বাসা থেকে আগে বাসে চড়ে চলে যেতাম। করোনার সংক্রমণের ভয়ে বাসে আর উঠি না। এখন হেঁটে অফিস করছি। একটু টায়ার্ড লাগছে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

 

ফার্মগেটে কথা হয় আসাদ নামের এক বাস হেল্পারের সঙ্গে। যাত্রীদের ডাকাডাকির এক ফাঁকে তিনি বলেন, যাত্রী নাই। সব করোনায় নিয়া গেছে। তারা নিজেরাও বেশি যাত্রী ওঠাতে চান না জানিয়ে বলেন, কিন্তু খরচটা তো উঠতে হইবো। এই জন্য ডাকাডাকি করতেছি। উত্তরা থেকে বাড্ডা রোড হয়ে সদরঘাট রোডে চলাচলকারি ভিক্টর পরিবহনের একজন হেলপার জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উত্তরা-সদরঘাটে দুই বার ঘুরে বাসের সব সিট পুরো করতে পারেননি। অথচ অন্যান্য বৃহস্পতিবার হলে দাঁড়িয়েও জায়গা থাকে না বাসে। সিঁড়িতে পর্যন্ত যাত্রী ঝুলে যেতে থাকেন।

রাইদা পরিবহনের একজন চালক জানান, এভাবে যাত্রী না পেলে তারাও পরের টিপে বের হবেন না। কারণ সন্ধ্যায় মালিককে পুরো দিনের জমার টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বাসের যাত্রী কমে গেছে। অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন। তবে যাত্রী পাওয়ার ভিত্তিতে বাস চলছে।’

পরিবহন মালিক সমিতি থেকে তাদের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি টার্মিনালের বাসে স্প্রে এবং দূরপাল্লার রুটের বাসের যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে।’

রাজধানীতে বাস চলাচল বন্ধ হবে কি-না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে বাস চলাচল সীমিত হতে পারে। তবে বন্ধ হবে না।’ জাতীয় জাদুঘর, চিড়িয়াখানাসহ ঢাকার প্রায় সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাধারণ সময়ে দর্শনার্থীর দীর্ঘ লাইন দেখা যেত। এখন বন্ধ। জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার জানান, করোনাভাইরাস ইস্যুতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মকর্মতা-কর্মচারীরাও সতর্কতার সঙ্গে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন বলে জানান তিনি।

ঢাকার পার্কগুলোও আগের মতো উন্মুক্ত নয়। ক্রিসেন্ট লেকে সকালে ও বিকেলে প্রচুর মানুষ হাঁটতেন। বিকেলে অনেকে বেড়াতে যেতেন। সব আপাতত বন্ধ রয়েছে। রমনা পার্ক সময় বেঁধে দিয়েছে। আগে সারাদিন খোলা থাকলেও, বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিকেল ৪টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত ঢোকা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি নোটিস পার্কে ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কটিও খাঁখা করছে। এ পার্কে বিদেশী কূটনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিশিষ্টজনরা শরীরচর্চা করেন। বর্তমানে তাদের কেউ কেউ প্রাতঃভ্রমণ অব্যাহত রাখলেও, সামনের দিনগুলোতে তা আর সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত। আলী হোসেন মোহাইমেন নামের সাবেক এক সরকারী কর্মকর্তা বলছিলেন, ডাক্তারের নির্দেশে আমাকে প্রতিদিন হাঁটতে হয়। কিন্তু গত চারদিন ধরে আমি ঘর থেকে বের হইনি। এ কারণে শরীরে কিছু সমস্যা অনুভব করছিলাম। তাই হাঁটতে বের হয়েছি। দ্রুত হাঁটা শেষ করে বাসায় ফিরবেন বলে জানান তিনি।

গল্প-আড্ডার জনপ্রিয় স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকাও সুনসান। জনমানবহীন। সব গেট বন্ধ। ভেতরে কেউ নেই। চায়ের দোকান উঠে গেছে। গল্প- আড্ডার স্থলে জায়গা করে নিয়েছে বিষণ্ণতা।

ডাক্তার-নার্সরা রোগীদের কাছে আসছেন না বা রোগী আসা মাত্রই বেসরকারি মেডিকেলগুলো তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে সরকারি হাসপাতালে।

সূত্রঃ পূর্বপশ্চিম ও চ্যানেল আই

কাঅ/এসএস

 



 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × two =

দেশের সংবাদ

নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

নামছে সশস্ত্রবাহিনী

নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশনের মতো জরুরিসেবা ছাড়া আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে মোতায়েন করা হবে সশস্ত্রবাহিনী। নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

এই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচাল করবে ব্যাংকগুলো।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানা।

তিনি বলেন, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি আছে, পরের দুইদিন ২৭-২৮ সাপ্তাহিক ছুটি রয়েছে। এরসঙ্গে আরও ৫ দিন ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এবং ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটিগুলোও এর সঙ্গে যুক্ত হবে।’

“করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।সেই সঙ্গে জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে এই সময়ে তারা যেন কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে না আসে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, এই সময়ে সরকারি যেসব অফিস খোলা রাখার প্রয়োজন বলে মনে হবে, তা খোলা রাখতে পারবে।

আর মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে কাজ কবে সশস্ত্রবাহিনী৷ উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব এবং সতর্কতা হিসেবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা কাজ করবে।

 

নামছে সশস্ত্রবাহিনী, ৮ দিন বন্ধ সব অফিস ।। করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা

 

করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকা, স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি অনেকে

রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আগের সেই ভিড় নেই। দেখতে দেখতে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতাশূন্য। গণপরিবহনের সংখ্যা কমেছে। তার চেয়েও কম যাত্রী। এ চিত্র অজানা শঙ্কা জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মানুষের স্বস্তি প্রায় কেড়ে নিয়েছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, মানবিক মূল্যবোধসহ বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশগুলোও এর প্রাদুর্ভাবের কাছে কেমন যেন অসহায়। অনেকের চোখের জল চোখেই শুকোচ্ছে। কান্না বারণ। বিষন্ন মন নিয়ে গৃহবন্দি মানুষ।

দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। করোনা প্রতিরোধে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে জনসমাগম এড়াতে সাধারণ মানুষকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া, হাত ধোয়া ও নিয়মিত পরিষ্কার থাকার পাশাপাশি বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন থেকে। তবে এরই মাঝে অব্যবস্থাপনার নানা চিত্র সামনে এসেছে। ফলে কিছুটা যেন ভীতসন্ত্রস্ত রাজধানীর বাসিন্দারা। বাস্তব অবস্থা প্রত্যক্ষ করে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গেছেন। সক্ষম এবং সচেতন মানুষ গৃহবন্দি হচ্ছেন স্বেচ্ছায়। সংক্রমণ ঠেকাতে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছেন তারা। এসব কারণে ক্রমে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকার রাস্তাঘাট।

রাজধানীর গুলশান, বনানী, গাবতলী, ফার্মগেট, হাতিরপুল, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, মতিঝিল, যাত্রবাাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগের তুলনায় মানুষ অনেক কম। অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ নেই। হুড়োহুড়ি অনুপস্থিত। রাস্তা জুড়ে নেই যানজট। ফাঁকা যাচ্ছে বাস। কোথাও কোথাও ড্রাইভাররা বাস থামিয়ে বসে আছেন। যাত্রী জন্য দীর্ঘক্ষণ হাঁকডাক করছেন হেলপাররা। যে কজন যাত্রী উঠছেন তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক।করোনা আতঙ্কে ফাঁকা ঢাকায় ভিআইপি রোডেও রাজত্ব করেছে রিকশা। গণপরিবহনে জনসমাগম এড়াতে রিকশায় করে গন্তব্যস্থলে গিয়েছেন অনেকেই। তবে ভাড়াও গুণতে হয়েছে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। মহাখালীর মতো ব্যস্ত এলাকায় যানজটের দেখা নেই। গাড়ি কম। যাত্রীও। রবিউল হোসেন নামের এক তরুণ রেলক্রসিংয়ের পাশে অনেক্ষণ দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু বাসে বা অন্য কোন যানবাহনে উঠছিলেন না। বিষয়টা তাহলে কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি প্রাইভেট ফার্মের সেলস এক্সিকিউটিভ। গুলশানে অফিস। নাখালপাড়ার বাসা থেকে আগে বাসে চড়ে চলে যেতাম। করোনার সংক্রমণের ভয়ে বাসে আর উঠি না। এখন হেঁটে অফিস করছি। একটু টায়ার্ড লাগছে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

 

ফার্মগেটে কথা হয় আসাদ নামের এক বাস হেল্পারের সঙ্গে। যাত্রীদের ডাকাডাকির এক ফাঁকে তিনি বলেন, যাত্রী নাই। সব করোনায় নিয়া গেছে। তারা নিজেরাও বেশি যাত্রী ওঠাতে চান না জানিয়ে বলেন, কিন্তু খরচটা তো উঠতে হইবো। এই জন্য ডাকাডাকি করতেছি। উত্তরা থেকে বাড্ডা রোড হয়ে সদরঘাট রোডে চলাচলকারি ভিক্টর পরিবহনের একজন হেলপার জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উত্তরা-সদরঘাটে দুই বার ঘুরে বাসের সব সিট পুরো করতে পারেননি। অথচ অন্যান্য বৃহস্পতিবার হলে দাঁড়িয়েও জায়গা থাকে না বাসে। সিঁড়িতে পর্যন্ত যাত্রী ঝুলে যেতে থাকেন।

রাইদা পরিবহনের একজন চালক জানান, এভাবে যাত্রী না পেলে তারাও পরের টিপে বের হবেন না। কারণ সন্ধ্যায় মালিককে পুরো দিনের জমার টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বাসের যাত্রী কমে গেছে। অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন। তবে যাত্রী পাওয়ার ভিত্তিতে বাস চলছে।’

পরিবহন মালিক সমিতি থেকে তাদের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি টার্মিনালের বাসে স্প্রে এবং দূরপাল্লার রুটের বাসের যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে।’

রাজধানীতে বাস চলাচল বন্ধ হবে কি-না?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে বাস চলাচল সীমিত হতে পারে। তবে বন্ধ হবে না।’ জাতীয় জাদুঘর, চিড়িয়াখানাসহ ঢাকার প্রায় সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাধারণ সময়ে দর্শনার্থীর দীর্ঘ লাইন দেখা যেত। এখন বন্ধ। জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার জানান, করোনাভাইরাস ইস্যুতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জাতীয় জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মকর্মতা-কর্মচারীরাও সতর্কতার সঙ্গে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন বলে জানান তিনি।

ঢাকার পার্কগুলোও আগের মতো উন্মুক্ত নয়। ক্রিসেন্ট লেকে সকালে ও বিকেলে প্রচুর মানুষ হাঁটতেন। বিকেলে অনেকে বেড়াতে যেতেন। সব আপাতত বন্ধ রয়েছে। রমনা পার্ক সময় বেঁধে দিয়েছে। আগে সারাদিন খোলা থাকলেও, বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিকেল ৪টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত ঢোকা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি নোটিস পার্কে ঝুলিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কটিও খাঁখা করছে। এ পার্কে বিদেশী কূটনীতিক, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বিশিষ্টজনরা শরীরচর্চা করেন। বর্তমানে তাদের কেউ কেউ প্রাতঃভ্রমণ অব্যাহত রাখলেও, সামনের দিনগুলোতে তা আর সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত। আলী হোসেন মোহাইমেন নামের সাবেক এক সরকারী কর্মকর্তা বলছিলেন, ডাক্তারের নির্দেশে আমাকে প্রতিদিন হাঁটতে হয়। কিন্তু গত চারদিন ধরে আমি ঘর থেকে বের হইনি। এ কারণে শরীরে কিছু সমস্যা অনুভব করছিলাম। তাই হাঁটতে বের হয়েছি। দ্রুত হাঁটা শেষ করে বাসায় ফিরবেন বলে জানান তিনি।

গল্প-আড্ডার জনপ্রিয় স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকাও সুনসান। জনমানবহীন। সব গেট বন্ধ। ভেতরে কেউ নেই। চায়ের দোকান উঠে গেছে। গল্প- আড্ডার স্থলে জায়গা করে নিয়েছে বিষণ্ণতা।

ডাক্তার-নার্সরা রোগীদের কাছে আসছেন না বা রোগী আসা মাত্রই বেসরকারি মেডিকেলগুলো তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে সরকারি হাসপাতালে।

সূত্রঃ পূর্বপশ্চিম ও চ্যানেল আই

কাঅ/এসএস

 



 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 + 19 =