ফিচার্ড বিশ্ব

ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধে কোন দেশ কার পক্ষে আছে?

ফিলিস্তিন-ইসরাইল-যুদ্ধে-কোন-দেশ-কার-পক্ষে

ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধে কোন দেশ কার পক্ষে?

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতে দুই মেরুতে ভাগ হয়ে গেছে গোটা বিশ্ব। একদিকে ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কয়েকটি দেশ, অন্যদিকে সরাসরি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের পক্ষ নিচ্ছে কিছু দেশ। তবে নিরপেক্ষ অবস্থানেও দেখা যাচ্ছে কোন কোন দেশকে। চলুন জেনে নেই কোন দেশ কার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে।

ইসরাইলের পক্ষে যারা

ভারত

প্রতিবারের মতো ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বন্দ্বে ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে ভারত। অর্থাৎ বন্ধু রাষ্ট্র হলেও এ ইস্যুতে বাংলাদেশের বিপরীত অবস্থানে রয়েছে ভারত। শনিবার ভোরে ইসরাইলে হামাসের হামলার পরই টুইটারে (এক্স) একটি পোস্ট করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই টুইটে হামাসের হামলার নিন্দা এবং এমন কঠিন মুহূর্তে ইসরাইলের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।

ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ইসরাইলে সন্ত্রাসী হামলার খবরে বিস্মিত হয়েছি। নিরীহ নিহত মানুষ ও তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা এবং সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। এমন কঠিন মুহূর্তে আমরা ইসরাইলের পক্ষে আছি।

 

যুক্তরাষ্ট্র

ইসরাইলের পক্ষে সবসময়ই অবস্থান নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার শিকারও হতে হয় দেশটিকে। রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ বলেছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের এ দ্বন্দ্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী।

এ ইস্যুতে বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর। ফোনালাপে বাইডেন বলেন, ইসরাইলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।

ফোনালাপের ব্যাপারে একটি বিবৃতি দিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর। এতে বলা হয়েছে- বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে আছে এবং ইসরাইলের আত্মরক্ষার বিষয়টিকে সমর্থন জানান তারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরাইলের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন পাথর কঠিন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তা অটুট থাকবে।

 

ফ্রান্স

শনিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। তিনি এক্সে বলেন, আমি ভুক্তভোগী, তাদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের জন্য পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।

ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে হামাসের সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, নেদারল্যান্ডসের মার্ক রুট্টে। হামাসের এ ‘অভিযানকে’ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে অভিহিত করেছেন তারা। এমন দুঃসময়ে ইসরাইলের পাশে থাকার ঘোষণাও দিয়েছেন এসব নেতা।

এছাড়াও বেলজিয়াম, ইউরোপীয় কমিশন, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, চেক প্রজাতন্ত্র, ইউক্রেন ও পোল্যান্ড ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

 

ফিলিস্তিনের পক্ষে যারা

বাংলাদেশ

ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিবৃতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, আমরা ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়কেই সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি এবং উভয়পক্ষের নিরপরাধ প্রাণহানি এড়ানোর জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এ অঞ্চলে শান্তি বয়ে আনবে না বলেও মনে করে বাংলাদেশ।

 

চীন

বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটের কথা উঠে এসেছে। এ সময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অবিলম্বে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় এটাও বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এ চলমান সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার উপায়।

চীনের এ বক্তব্যে হতবাক ইসরাইল। তারা ভেবেছিল হামাসের হামলার কঠোর নিন্দা জানাবে চীনারা। বেইজিংয়ে ইসরাইলি দূতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইউভাল ওয়াকস বলেছেন, রাস্তায় মানুষকে জবাই করা হচ্ছে, এখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ডাক দেওয়া সময় নয়।

 

ইরান

ইসরাইলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিবাদন জানিয়েছে ইরান। ইরানের গণমাধ্যম আইএসএনএ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির এক উপদেষ্টা শনিবার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় হামলা করায় অভিবাদন জানান। রাহিম সাফাভি নামের ওই উপদেষ্টা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের স্বাগত জানাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা অর্জন হচ্ছে না, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকতে চাই।

সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও অর্জনকে স্বাগত জানিয়ে শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানের পাশাপাশি মাশহাদ, তাব্রিজ ও জাঞ্জান শহরের সড়কে নেমে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন।

 

সৌদি আরব

ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। এ সময় ফিলিস্তিনের বেসামরিক নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরাইল যেন কোনো হামলা না চালায় তার ওপর জোর দেন তিনি। গতকাল শনিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার ইসরাইলে হামাসের হামলার পরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং ইইউ পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনালাপ করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য এবং সহিংসতা এড়ানোর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ছাড়াও কাতার, মিসর ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

 

কাতার

সংঘাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার এক বিবৃতি দিয়ে ইসরাইলের কড়া সমালোচনা করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতার জন্য একমাত্র ইসরাইল দায়ী।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরাইল গাজার বেসামরিক বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত হিসেবে এ রকেট হামলাকে ব্যবহার করছে। এ থেকে ইসরাইলকে থামাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাতার।

এদিকে ইসরাইলকে দোষারোপের পাশাপাশি উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করা হয়।

 

লেবানন

গত কয়েক মাস ধরেই সীমান্তে লেবানন ও ইসরাইলের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি সেনাদের হামলার সময় লেবানন থেকে রকেট ছোড়া হলে এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এ সময় শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও সমর্থকরা ইসরাইলি সেনাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতিতে লেবাননের সেনাবাহিনী জানায়, ইসরাইলি সেনাদের বহর নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে এবং লেবানিজ সেনাদের ওপর স্মোক বোমা ছুড়ে মারে। এর আগে নির্ধারিত সীমানা বরাবর ইসরাইলি সেনাদের তৈরি এক মাটির দেয়াল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় লেবাননের সেনারা।

 

তুরস্ক

ইসরাইল-ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্বে সরাসরি ফিলিস্তিনিদের পক্ষ না নিলেও এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি দুই পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। শনিবার আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন একে পার্টির কংগ্রেসে এরদোয়ান বলেন, আমরা সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানাই। তাদের অবশ্যই আক্রমণাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

এরদোগানের এমন আহ্বানের পরই ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের এই উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ করেছে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করার কথা জানিয়েছে আঙ্কারা।

 

পাকিস্তান

ইসরাইল-ফিলিস্তিনি চলমান দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তান চলমান দ্বন্দ্বের সমাধান চায়। পাকিস্তান সবসময় দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ছিল। ১৯৬৭ সালের আগেকার সীমান্ত অনুযায়ী আল কুদস আল-শরীফকে রাজধানী করে সার্বভৌম স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে দেশটি।

 

আফগানিস্তান

এদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় চলমান ঘটনার প্রতি কড়া নজর রেখেছে ইসলামিক ইমিরট অব আফগানিস্তান। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় বিভিন্ন স্থাপনাকে অমর্যাদা করেছে, ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতি নিপীড়ন চালিয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর

অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)
সংবাদটি শেয়ার করুন