ফিচার্ড লেখালেখি

বনস্পতির ছায়া দিলেন সারা জীবন…

বাবা দিবসকে সামনে রেখেই। ছবি: সংগৃহীত

বনস্পতির ছায়া দিলেন সারা জীবন…

আসিফুর রহমান সাগর । ‘তিনি বৃদ্ধ হলেন…বৃদ্ধ হলেন…/ বনস্পতির ছায়া দিলেন সারা জীবন!/ এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়/ সবুজ কিন্তু আজও মাতায় সুঠাম ডালে…।’ কণ্ঠশিল্পী কবীর সুমন বাবাকে নিয়ে লিখেছিলেন এই জনপ্রিয় গানটি। প্রবাদ রয়েছে :‘পৃথিবীতে কীভাবে বাঁচতে হয় বাবা তা বলেন না, তিনি সারা জীবন পরিবার, সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকেন। আর সন্তানদের দেখার সুযোগ করে দেন—কীভাবে বাঁচতে হয়।’ পৃথিবীতে চোখ মেলে মাকে আঁকড়ে ধরেই বেড়ে ওঠে একটি শিশু। মায়ের স্নেহছায়ায় বড় হয় সন্তান। বাবা যেন দূরবর্তী দ্বীপের মতো। এ অঞ্চলের প্রচলিত আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকেন পরিবারের ঘেরাটোপের বাইরে। তার সান্নিধ্য খুব কমই পায় সন্তানরা। বাবার অস্তিত্ব সন্তানের উপলব্ধিতে আসে ধীরে ধীরে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তখন বোঝা যায়, বাবার কাঁধে ভর করেই বেড়ে উঠছে সন্তানেরা। বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছেন, ‘নিজের অস্তিত্বে বাবার অবয়ব ফুটে উঠতে থাকে বলেই মানুষ ক্রমশ বড় হতে থাকে।’বাবা দিবস আজ

আমাদের উপমহাদেশীয় সমাজব্যবস্থায় বাবা খানিকটা দূরের মানুষ। সারা দিন কাজে ব্যস্ত থাকা মানুষটি পরিবারকে সেভাবে সময় দিতে পারেন না। সন্তানরা মাকে ঘিরে বেড়ে ওঠে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাবার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে থাকে। বুঝতে পারে—একজন মানুষ নিজেকে পুড়িয়ে সংসারকে আগলে রেখে চলেছেন, যিনি কখনোই তার সন্তানকে বলেন না যে তিনি তাদের ভালোবাসেন। বরং দেখিয়ে দেন যে তিনি তাদের ভালোবাসেন। আবার এমনও বলা হয়ে থাকে, মা জন্ম দিয়েই মা। কিন্তু বাবা হয়ে উঠতে হয়। বাবা তার জীবন দিয়ে, কর্ম দিয়ে সন্তানদের মনে ঠাঁই করে নেন।

কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাবা দিবস উপলক্ষ্যে লিখেছিলেন ‘বাবা’ শিরোনামে কবিতা। সেখানে তিনি লেখেন :‘আমি/ যতদিন বাবার ছেলে ছিলাম/ তার চেয়ে বেশি দিন নিজেই বাবা/ আমার বুকের সব রোম পাকা,/ সকালবেলা কাশতে কাশতে/ লক্ষ্য করি, রক্ত পড়ছে কি না/ বাবা ছবি হয়ে থেমে আছেন/ নিজের থেকে কম বয়সি কারুকে কি বাবা বলে ডাকা যায়?/ তবু দেখতে পাই মাঝে মাঝে/ আমিই চেয়ে থাকি স্নেহের দৃষ্টিতে/ তাঁর ঘামে ভেজা মুখ,/ পরিক্রমা ক্লান্ত পা/ কিছু দিতে ইচ্ছে হয়, যা যা পাননি/ আমার ছেলের কাছ থেকে কিছু নেবার আগের মুহূর্তে/ একবার আমার হাত কাঁপে!’ বাবা অনুচ্চারিত প্রতিজ্ঞায় সন্তানদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেন। বাবাকে ভালোবাসা জানাতে, তার প্রতি সম্মান জানাতে, সংসারের জন্য তার জীবন উত্সর্গ করার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১০০ বছরেরও বেশি বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়ে আসছে বাবা দিবস। আগামীকাল সেই দিবস। প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, ভারতসহ প্রায় ১১১টি দেশে এ দিনেই বাবা দিবস উদ্যাপন করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সেপ্টেম্বরের প্রথম রবিবার বাবা দিবস পালন করে থাকে।

বাবা দিবস: আনুষ্ঠানিকতায় হারিয়ে না যাক আন্তরিকতা

বাবা দিবসের শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ঠিক কবে থেকে এ দিবসটির প্রচলন হলো তা নিয়ে দ্বিধা আছে। কেউ কেউ বলেন, ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চার্চের মাধ্যমে দিনটির প্রচলন। অন্যরা বলেন, ওয়াশিংটনের ভ্যাঙ্কুবারে প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। তবে সাধারণ মত, বাবা দিবসের প্রবক্তা সোনার স্মার্ট ডোড। ১৮৮২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি জন্ম নেন। তার পিতা উইলিয়াম জেকসন স্মার্ট (১৮৪২-১৯১৯) ছিলেন কৃষক। মার্কিন গৃহযুদ্ধের সময় তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালীন ডোডের মা অ্যালেন ভিক্টোরিয়া চেক স্মার্টসহ পুরো পরিবার চলে যান ওয়াশিংটনের স্পোকেনে। সেখানেই জন্ম হয় সোনার স্মার্ট ডোডের। যখন তার বয়স ১৬, তখন তার মা ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। পরিবারে সোনারই ছিলেন একমাত্র কন্যা। পূর্ব ওয়াশিংটনের এক গ্রামের ফার্মে এরপর থেকে তিনি নবজাতকসহ পাঁচটি সন্তান মানুষ করার দায়িত্ব তুলে নেন। সোনার বড় হওয়ার পর অনুভব করলেন ছয়টি সন্তান একা একা মানুষ করতে কী ভীষণ পরিশ্রমই না তার বাবাকে করতে হয়েছে। উইলিয়াম তার মেয়ের চোখে ছিলেন সাহসী, নিঃস্বার্থ একজন ভালো বাবা—যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ, আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন। সোনার স্মার্ট বিয়ে করেন জন ব্রোস ডোডকে। তাদের সন্তান জ্যাক ডোড জন্মের কিছুকাল পরে সোনারের স্বামীও মারা যান। এ অবস্থায় বাবা আর মেয়েতে মিলে পুরো জীবন পার করে দেন।

সন্তানকে নিয়ে একজন বাবা

বাবার প্রতি সম্মান জানাতে ‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯০৯ সালে। ‘মা দিবস’-এর অনুষ্ঠানে সে বছর চার্চে যান সোনার ডোড। অনুষ্ঠানে এসেই তার মনে হয় মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন। যেখানে মায়েদের মতো বাবাদেরও সম্মান জানানো হবে। প্রকাশ করা হবে ভালোবাসা। যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার কাছে তিনি তার পিতার জন্মদিন ৫ জুনকে বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব পাঠান। তার প্রস্তাবের প্রশংসা করলেও মন্ত্রিসভা ৫ জুনকে বাবা দিবস ঘোষণা করতে রাজি হননি। তারা জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানিরা বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে রাখেন।নকল বাবা-মেয়ের আসল গল্প

১৯ জুন ১৯১০ প্রথম বাবা দিবস উদ্যাপিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পোকেনস শহরে। শহরের তরুণ-তরুণীরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যান চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতাদের শুভেচ্ছার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতাদের আত্মার তুষ্টির জন্য। বিষয়টি পুরো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সবাই মিলে এই ভাবনার প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রে তা শুরু হয়। কিন্তু তার পরেও এটাকে জাতীয়ভাবে পালনে কংগ্রেসের নানা দ্বিধা ছিল। কেননা তারা ভাবছিলেন এতে বাবা দিবস একটি বাণিজ্যে পরিণত হতে পারে। ১৯১৬ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিষয়টি অনুমোদন করেন। ১৯২৪ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কোলিজ এটিকে জাতীয় দিবসে রূপ দেন। ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন রাষ্ট্রীয়ভাবে জুনের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস উদ্যাপনের ঘোষণা দেন। অবশেষে ১৯৬৬ সালে ছাপ্পান্ন বছর পর বাবা দিবসকে জাতীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। সোনার ডোড মারা যান ১৯৭৮ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৯৬ বছর।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কয়েক বছর ধরে বাবা দিবস পালন শুরু হয়েছে। সন্তানরা শ্রদ্ধার সঙ্গে বাবাকে সম্মান জানান বিভিন্ন উপহার দিয়ে। ভালোবাসার উষ্ণ আবেগে ভাসিয়ে তাকে বলেন, ‘বাবা, আমরা তোমার সন্তানেরা তোমাকে ভালোবাসি।’ -ইত্তেফাক


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন