দেশের সংবাদ ফিচার্ড

বাবুনগরীর জানাজা হাটহাজারী মাদ্রাসায়, দাফন গ্রামের বাড়িতে

বাবুনগরীর জানাজা হাটহাজারী মাদ্রাসায়, দাফন গ্রামের বাড়িতে

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর দুটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলার দারুণ উলুম মাদ্রাসায় তার প্রথম নামাজে জানাজা ও ফটিকছড়ির বাবুনগরের নিজ বাড়িতে রাত সাড়ে ৯টায় তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিষয়টি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক আ ন ম আহমদ উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, ‘হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে হুজুরের প্রথম জানাজা নামাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে। পরিবার ও স্থানীয় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে মৃত্যুবরণ করেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

বাবুনগরীর মৃত্যুর বিষয়ে মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও হুজুরের নিয়মিত চেক আপে সবকিছু ঠিক ছিল। তবে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপের কারণে তিনি অনেকটা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’

তাকে বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআর এ তাকে ভর্তি করা হয়। তিনি ডাক্তার ইব্রাহিমের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রথমে সাধারণ ওয়ার্ড ও পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ১২.৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় জানান মাওলানা মীর ইদরীস।

আরও পড়ুন: হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী মারা গেছেন

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশর আমির হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতিতে এক আলোচিত নাম। তিনি নাস্তিক ও ইসলামবিদ্বেষী অবস্থানের মাধ্যমে তার অনুসারীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। যার কারণে তাকে ২০১৩ সালে কারাবারণ করতে হয়েছিল।

তিনি একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ইসলামি বক্তা আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। বাবুনগরী ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হাসান ও মাতা ফাতেমা খাতুন। হারুন বাবুনগরী তার নানা। মায়ের দিক দিয়ে তার বংশধারা আবু বকর সিদ্দীকের সাথে মিলিত হয়। মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী তার মামা।

বাবুনগরী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব ও শায়খুল হাদিস, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক। এছাড়াও তিনি নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী, মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক, ইনসাফ২৪.কম ও কওমিভিশন.কমের প্রধান উপদেষ্টা সহ কয়েকটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় পদে রয়েছেন।

বাবুনগরী ৫ বছর বয়সে আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। এখানে তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কুরআনের হেফজ শেষ করার পর আজহারুল ইসলাম ধর্মপুরীর কাছে তিনি পুরো কুরআন মুখস্থ শুনিয়েছিলেন। এরপর তিনি ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল কাইয়ুম, আহমদুল হক (মুফতি), আবুল হাসান, আব্দুল আজিজ, শাহ আহমদ শফীসহ খ্যাতিমান ব্যক্তিবর্গ।

উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি পাকিস্তান যান। ১৯৭৬ সালে করাচিতে অবস্থিত জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। ২ বছর হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করে তিনি আরবি ভাষায় ‘সীরাতুল ইমামিদ দারিমী ওয়াত তারিখ বি শায়খিহী’ (ইমাম দারিমী ও তার শিক্ষকগণের জীবন বৃত্তান্ত) শীর্ষক অভিসন্দর্ভ জমা দেন। এই অভিসন্দর্ভ জমা দেওয়ার পর তিনি জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়া থেকে হাদিসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন। জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তার উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন: মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরী, ইদ্রিস মিরাঠী, আব্দুল্লাহ ইউসুফ নোমানী সহ প্রমুখ। পাশাপাশি তিনি ওয়ালী হাসান টুঙ্কির কাছে সুনান আত-তিরমিজী ও মুহাম্মদ ইউসুফ বিন্নুরীর কাছে সহীহ বুখারী দ্বিতীয় বারের মত অধ্যয়ন করেন।

কর্মজীবনে বাবুনগরী ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে দেশে এসে বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশের মাদ্রাসাসমূহের সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদ্রাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদ্রাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তার স্থলে মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে তার অনুসারীদের দাবি অনুযায়ী, ‘তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার, দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে থাকায় সরকারি চাপে তাকে সরানো হয়েছে।’ ২০১৯ সালের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকতা জীবনে এ পর্যন্ত (২০১৯) আমার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি।’

পরবর্তীতে ১৪ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে মাদ্রাসার দায়িত্ব মজলিসে শুরাকে দিয়ে দেন। ওইদিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে বাবুনগরীসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। তিনি মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

২০১০ সালে তাকে মহাসচিব করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির আমীর মৃত্যুবরণের পর ১৫ নভেম্বর সংগঠনের একটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি আমির নির্বাচিত হন। পরে কমিটি বিলুপ্তির পরও আহ্ববায়ক কমিটিতে তাকে আমির নির্বাচিত করা হয়।

শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে আধ্যাত্মিক দীক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ১৯৭৮ সালে তিনি আব্দুল কাদের রায়পুরীর উত্তরসূরী আব্দুল আজিজ রায়পুরীর নিকট বায়’আত গ্রহণ করেন। রমজান মাসে তিনি রায়পুরীর খানকায় অবস্থান করে কিছুকাল তার সান্নিধ্যে ছিলেন। বাংলাদেশে তিনি যাদের কাছে খেলাফত পেয়েছেন।

আরবি, উর্দু ও বাংলায় তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ৩০টি। দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামার আরবি পত্রিকা আল বাসুল ইসলামি, দারুল উলুম দেওবন্দের মাসিক পত্রিকা আদ দায়ী, দারুল উলুম হাটহাজারীর মাসিক আল মুঈনসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি ইনসাফ২৪.কম, কওমিভিশন.কমের প্রধান উপদেষ্টা ও মাসিক দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক। -বাংলাদেশ জার্নাল

 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন