ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

বিসর্জন ।।।। পুলক বড়ুয়া

বিসর্জন ।।।। পুলক বড়ুয়া

 

তোমার বঙ্কিম অনার্য ভঙ্গিমা আপাদমস্তক
উচ্চাঙ্গসংগীত ।
 
 
না-বাজানো রেকর্ডের মতো তুমি এখন আমার মেঘদূত।
তুমি এখন আমার মহাশূন্যে মহাকাশে সাদাকালো মেঘময় বিজলী ও বজ্র ।
তুমি এখন আমার নীলাঞ্জনা নীলাকাশে নীলশূন্যে সাদা কালো মেঘমল্লারে মুষলধারা।
 
 
আমি চৌচির জমিনে
ওপরের দিকে চেয়ে থাকা
মাঠের কৃষক ।
পায়ের তলায় শিলার ফাটলে দ্যাখ
আমার শোকের চিহ্ন ।
আমার তৃষ্ণার চিহ্ন ।
অই নিদাগ-নারীর বহ্নি !
অই তার দাগ ।
শুকনো শুকিয়ে যাওয়া
ক্রুর ছাপ ।
যেমন সেঁধিয়ে গেছে, তেমনি আটকে আছে ।
অপঠিত একটি পুঁথির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছ,
নতুন গন্ধের মতো আনকোরা তুমি ।
 
 
অস্বীকার করব না,
আমার নজর-আমি
গভীর অভিনিবেশ সহকারে
পাঠ করছি তোমাকে ।
পা থেকে করোটি ।
নখ থেকে চুল ।
যতই দ্যাখছি, অবাক বিস্ময়ে 
পূর্ণ মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি ।
পূণ্যার্থীর মতো 
এসেছি তোমার তীর্থে ।
দেবী, তোমাকে প্রণাম !
 
প্রতিদিন পৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছে,
প্রতিদিন পৃষ্ঠা পাল্টে যাচ্ছে ।
ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমী ।
ঘুরে ঘুরে ফের—পরবাসে—নির্বাসনে !
ঘুরে ঘুরে ফিরে—পরবাসে—বিসর্জনে !
দেব না আমার—অতলের তলদেশে—আত্মবিসর্জন ।
দেব না আমার—পাতালের তলানির—আত্মনির্বাচন ।
একমনে তোমাকে পড়ছি আমি ।
চলতে ফিরতে, শুয়ে বসে, 
টেবিলে চেয়ারে, দাঁড়িয়ে, শয্যায়, ঘুমে ও জাগরণে,
স্বপ্নে, কল্পনায়, অনিদ্রায় ।
তুমি এখন আমার প্রিয় পঠনপাঠন,
মনোযোগের বিষয় ।
বইয়ের এপিঠ ওপিঠ,
বহুবর্ণিল  প্রচ্ছদপট ।
তুমি এখন আমার নবাগতা ইনসমনিয়া !
হে নবীনা, আমি তোমার নবীন ছাত্র ।
আমার একটি গহন গহীন প্রিয়-অধ্যয়নশাস্ত্র তুমি ।
আমার একান্ত 
গবেষণার নতুন আকর্ষণীয় বিষয়বস্তু তুমি ।
তুমি আমার আপন অবলোকন, দ্রষ্টব্য ।
 
আমি কী কিঞ্চিত কিছু আবিস্কার 
অই যে অভূতপূর্ব অভিনব কিছু উদ্ভাবন করতে পারব ?
 
না না, আমার নোবেল পুরস্কার লাগবে না !
 
এবছর তো সময় নেই । 
কোনো বছরই কখনোই নয় । 
( ইতোমধ্যে, আজ, কিন্তু, একজন পেয়ে গেছে ।
তার বাবাও কিন্তু তার মালিক ছিলেন । ) 
আমি বৈজ্ঞানিক নই ।
বিশেষজ্ঞ নই ।
কবি নই ।
আমি জনৈক চরম শান্তিপ্রিয় শান্তিবাদী 
তথা সৃজনকলার উপাসক ।
আমি প্রতিদিন পান করি সৃজনশীলতা ।
স্রেফ সেবন করি না,
আমি নিবেদিত প্রাণ একজন ভক্ত ও সেবক তার ।
মনের মন্দিরে আপন নির্জনে 
সাফ দিলে উপাসনা করি ।
অপব্যয়ে-অবক্ষয়ে-অপচয়ে-অপবাদে-তিরস্কারে জাহান্নামে যাক, রসাতলে যাক
সেই অপাঙ্ক্তেয় পুরস্কার ।
এহেন মুগ্ধতা নিয়ে 
এ নিয়ে থাক না উল্টোপাল্টা প্রচুর কিসসা ।
উপরি চাহিদা যার আছে বা না থাক,
সেদিকে না হয় নাই বা গেলাম আমি ।
জানি, প্রণয়ের জন্য অন্য কোনো পুরস্কার নেই। 
 
তুমিই আমার একক একমাত্র পুরস্কার ।
আমি তোমার সামান্য প্রেমিক । পূজারী ।
তোমাকে বন্দনা করি !
তোমার সাধনা করি ।
শারদ-সৌন্দর্য তুমি ।
 
 
প্রিয়া, প্রিয়তমা, প্রিয় পার্বতী, 
তুমি আমার বিজয়া দশমী !
তুমি আমার কাঙ্ক্ষিতা । 
তুমি আমার পরম—
 
 
তোমাকে পেয়েছি আমি সবচেয়ে সুন্দর অনঙ্গঅঙ্গ : 
তোমাকে দিয়েছি আমি পরবাসী-বিসর্জন !
সংবাদটি শেয়ার করুন