যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার সহকারী ভূমি কমিশনার সাইয়েমা হাসান যিনি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জারি করা অবরোধ পরিস্থিতি তদারকি করতে গিয়ে কয়েকজন প্রবীণ বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে শাস্তি দেন এবং সেই ছবি তোলেন, এর জেরে আজ তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
জেল প্রশাসক বলেন, “তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐ ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে এই বিষয়ে খোঁজখবর নেয় এবং তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।”
শফিউল আরিফ জানান যে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলার একটি বাজারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে এক নারীর সামনে দু’জন বয়স্ক পুরষের কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং ঐ নারী তাদের ছবি তুলছেন।
পরবর্তীতে ওই নারী মনিরামপুর উপজেলার সহকারী ভূমি কমিশনার, যিনি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জারি করা অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তদারকি করতে গিয়ে বাজারে থাকা কয়েকজন বৃদ্ধকে এমন শাস্তি দেন।
এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর ঐ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউসুফ হারুন জানান তিন’জন প্রবীণ নাগরিকের সাথে অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করার কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে।
“ঐ কর্মকর্তা তিনজন বয়স্ক নাগরিককে মাস্ক না পরে বের হওয়ার কারণে কান ধরে উঠবস করার শাস্তি দেন, যেটি আইনসঙ্গত আচরণ নয়।”
ইউসুফ হারুন বলেন, “আমরা জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল কর্মকর্তাকে বলেছি যেন তারা নাগরিকদের বুঝিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠান। কান ধরে উঠবস করার মত শাস্তি দেয়ার অধিকার কোনো কর্মকর্তার নেই এবং এটি সংবিধান সম্মতও নয়।”
এছাড়া মানুষজন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে তাদের সাথে এ ধরণের আচরণ করা যৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেন জনপ্রশাসন সচিব।
তবে বোঝানোর পরও যারা নিয়ম ভঙ্গ করছেন তাদের জন্য সীমিত আকারে মোবাইল কোর্টের শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান ইউসুফ হারুন।
“যাদের কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা কিন্তু থাকছেন না, বা যারা অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের শাস্তি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু তা কখনোই কান ধরে উঠবস করানো বা শারীরিক প্রহারের মত শাস্তি হতে পারে না।”
এছাড়া অবরোধ চলাকালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রাস্তায় বের হওয়া নাগরিকদের মারধোর করছেন, এমন খবর ও ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
যা নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয় মানুষের মধ্যে।
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত সাইয়েমা হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
বাঅ/এমএ