জীবন ও স্বাস্থ্য ফিচার্ড

ব্যথার ওষুধ ব্যথা নিরাময় করে না, ব্যথার ওষুধ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

ব্যথার-ওষুধ-ব্যথা-নিরাময়-করে-না

অনেকেই ব্যথার ওষুধ মুড়ির মতো খান। ব্যথা অনুভব করলে নিজেই চিকিৎসক বনে যান, অর্থাৎ চিকিৎসক থেকে পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজনীয়তাই মনে করেন না। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়াতে যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া আবশ্যক।

ব্যথার ওষুধ ব্যথা নিরাময় করে না

এনওয়াইইউ ল্যানগোন’স সেন্টার ফর দ্যা স্টাডি অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট অব পেইন থেকে পেইন ম্যানেজমেন্টে বিশেষজ্ঞতা অর্জনকারী এম. ফাহাদ খান বলেন, ‘অনেকে আশা করেন যে ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করলে ব্যথা সম্পূর্ণরূপে দূর হবে, কিন্তু এই ওষুধের লক্ষ্য এটা নয়।’ তিনি আরো জানান, ‘ব্যথানাশক ওষুধের লক্ষ্য হচ্ছে- কিছু ব্যথা কমিয়ে জীবনযাপন সহজ করা, যেন বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদনে সক্ষম হওয়া যায়।

 

ব্যাথার ওষুধের প্রতি নির্ভরশীলতা হতে পারে
ব্যথানাশক ব্যবহারের একটি অসুবিধা হলো- শরীর এই ওষুধের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে, এমনকি প্রেসক্রিপশনের নির্দেশনা অনুসারে সেবন করলেও। ওষুধের প্রতি নির্ভরশীলতা বলতে পূর্বে কোনো লক্ষ্যপূরণে যে মাত্রার ওষুধ প্রয়োজন হতো তার চেয়ে বেশি ওষুধ প্রয়োজন হওয়া। আবার ওষুধ বন্ধ করে দেয়ার পর শারীরিক বা মানসিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাও এক ধরনের নির্ভরশীলতা।

 

ব্যথানাশক ওষুধের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হতে পারে
আপনার অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থাকলে অথবা মাদকাসক্তির পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অথবা উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা একাকীত্ব ভুগলে তা চিকিৎসককে জানানো উচিত। কারণ এসবকিছু ব্যথানাশক ওষুধের প্রতি আসক্তির ঝুঁকি বাড়ায়।

 

ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত ব্যথানাশক ওষুধের অন্যতম বহুল প্রচলিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। এজন্য ডা. ফাহাদ ব্যথার ওষুধ সেবনের সময় বেশি করে আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে ও প্রচুর পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যান্য অপ্রীতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো- বমিভাব, চুলকানি ও লাল ফুসকুড়ি। এছাড়া মানসিক অবসাদও দেখা দিতে পারে।

 

ঘুমের ওষুধ ও মদের সঙ্গে ব্যথার ওষুধ খেলে বিপদ হতে পারে
চিকিৎসক আপনাকে ব্যথানাশক ওষুধ দিলে বিয়ার বা ওয়াইন এবং ঘুমের ওষুধের সঙ্গে সেবন করবেন না। ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যালকোহল ও বেনজোডায়াজেপাইনসের মতো ঘুমের/মানসিক সমস্যার ওষুধ সবগুলোই কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। এগুলো শরীরে সমন্বিত হলে বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমনকি শ্বাসক্রিয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে তথা মৃত্যুও হতে পারে।

 

পুরোনো প্রেসক্রিপশনের ওষুধ ব্যবহারে ঝুঁকি রয়েছে
অনেকের মধ্যে প্রচলিত একটি প্রবণতা হলো- কখনো ব্যথার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে পরবর্তীতে আবারও ব্যথা সংশ্লিষ্ট সমস্যায় ভুগলে আগের প্রেসক্রিপশনের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা। কিন্তু কিছু ব্যথানাশক ওষুধ বারবার ব্যবহারে আসক্তি সৃষ্টি হতে পারে। আবার প্রেসক্রিপশনের ওষুধ চলাকালে কোথাও ব্যথা পেলে অথবা শরীরের অন্য কোথাও ব্যথা অনুভব করার কারণে নির্দেশনার বাইরে সেবন করলে ওই ওষুধের ওভারডোজ হবে, যার ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

 

ব্যথানাশক ওষুধ সঠিকভাবে সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে
কিছু দেশে ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার মহামারির মতো হয়ে গেছে। পরিবারের বয়স্ক লোকেরা ব্যথার জন্য কোন ওষুধ খাচ্ছেন তা কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীদের দৃষ্টিগোচরে আসে। তাই তাদের অনেকেই শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভব করলে ওই ওষুধ খাওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু ব্যথার ওষুধ সেবনের আগে প্রকৃত কারণ নিরূপণ করা জরুরি, অন্যথায় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই পরিবারের জ্যেষ্ঠদের প্রেসক্রিপশনে ব্যথানাশক ওষুধ দেয়া হলে এর অপব্যবহার এড়াতে সঠিক স্থানে সংরক্ষণকে দায়িত্ব মনে করতে হবে। ওষুধ রাখার জন্য লক বক্স কিনতে পারেন এবং অব্যবহৃত ওষুধ নষ্ট করে ফেলুন।

 

ওটিসি ব্যথার ওষুধ সম্পর্কেও সচেতনতার প্রয়োজন আছে
আমাদের বেশিরভাগই ওটিসি/নন-প্রেসক্রিপশন ড্রাগ প্যারাসিটামলকে ক্ষতিকারক ওষুধ মনে করি না। কিন্তু গবেষকরা জানান যে উচ্চ ডোজে (প্রতিদিন ৩,০০০ মিলিগ্রামের বেশি) প্যারাসিটামল সেবনে লিভার অত্যন্ত বিষক্রিয়ায় ভুগতে পারে। প্রেসক্রিপশনের কিছু ব্যথার ওষুধে প্যারাসিটামলও থাকতে পারে। তাই প্রেসক্রিপশনের ব্যথার ওষুধ ও ওটিসি ব্যথার ওষুধ একসঙ্গে খেলে ওভারডোজ হয়ে লিভারে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। লিভার ফেইলিউর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ইতিহাস ঘেটে জানা যায় যে অনেকেই উচ্চ মাত্রায় প্যারাসিটামল সেবন করেন।

 

দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে হরমোন সমস্যা হতে পারে
ব্যথা কমানোর বিকল্প পদ্ধতি থাকলেও বেশিরভাগ রোগীই ওষুধের ওপর সবচেয়ে বেশি আস্থাশীল। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে ব্যথানাশক ওষুধের প্রতি রোগীদের আসক্তি বা নির্ভরশীলতাও তৈরি হতে পারে। কিন্তু গল্পের শেষ এখানেই নয়। কিছু প্রাথমিক গবেষণা বলছে, ব্যথানাশক ওষুধের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে হরমোনাল ব্যালেন্স ব্যাহত হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের স্থায়ী সমাপ্তি (মেনোপজ) বা মাসিক চক্র প্রভাবিত হতে পারে। অন্যদিকে পুরুষেরা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারাতে পারে।

সূত্রঃ যুগান্তর

এফএইচ/বিডি


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন