ফিচার্ড বিশ্ব

মস্কো হামলার পর পুতিন কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন

ক্রোকাস সিটি হলে হামলায় নিহতদের জন্য শোক পালন করছে রাশিয়া।

মস্কো হামলার পর পুতিন কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন

রাশিয়ার মস্কোর নিউ আরবাট অ্যাভিনিউয়ে দেশটির সবচেয়ে বড় ভিডিও স্ক্রিনগুলোর কয়েকটি সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে। এর সবগুলোতেই আজকে বড় একটি জ্বলন্ত মোমবাতির ছবি দেখানো হচ্ছে। সঙ্গে একটি রুশ শব্দ দেখা যাচ্ছে, যার অর্থ ‘আমরা শোকাহত’। ক্রোকাস সিটি হলে শুক্রবারের হামলায় নিহতদের জন্য শোক পালন করছে রাশিয়া।

এখন পর্যন্ত এ হামলায় ১৩৭ জন নিহত হয়েছে। সারা দেশেই রাশিয়ার পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিনোদন ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানগুলো বাতিল করা হয়েছে এবং টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপকরা কালো পোশাক পরেছেন।মস্কোর ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত না হলেও সঙ্গীত পরিবেশনার ক্ষেত্রে ক্রোকাস সিটি হলটি ছিল রাশিয়ার সুপরিচিত একটি স্থান।কিন্তু শুক্রবারের রক্তাক্ত হামলার ঘটনাটি এই কনসার্ট হলকে মুহূর্তেই নরকে পরিণত করেছে। হামলাকারীরা কেবল গুলি করেই হত্যা করেনি, আগুনে পুড়িয়েও মানুষ মেরেছে। তারা ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সেটাকে রীতিমত একটি নরক বানিয়ে ফেলে। রাশিয়ার তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভবনের ছাদ ধ্বসে পড়ছে। এমনকি ধাতব কড়িকাঠ গুলোও একইভাবে ধ্বসে পড়েছে।

ভবনের বাইরে এখনো পুলিশ সারিবদ্ধভাবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিবিসির রাশিয়া বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ জানান, তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখান থেকে বিনোদন কমপ্লেক্সটির পুড়ে যাওয়া একটি অংশ দেখতে পাচ্ছেন। বাইরের যে অবস্থা হয়েছে, সেটি দেখেই ভবনের ভেতরের ধ্বংসস্তূপের ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নৃশংস হামলার ঘটনায় নিহতদের আত্মার প্রতি মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

সেই ফুলের স্তূপ ক্রমশ বড় হচ্ছে। গোলাপ ও কার্নেশন ফুলের পাশাপাশি তারা পুতুল ও অন্যান্য খেলনাও রেখে যাচ্ছেন। কারণ নিহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।

এ ছাড়াও একটি বার্তাও ছেড়ে যাচ্ছে অনেকে। যেমন : আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে একজন বলেছেন, ‘তোমরা ইতর। আমরা তোমাদের কখনো ক্ষমা করব না।’

মানুষের এই ভিড়ের মধ্যে বিষাদ ও ক্ষোভ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছু ফুল নিয়ে আসা তাতিয়ানা বলেন, ‘দেশ মাতৃকার হৃদয়ে ব্যথা করছে। আমার আত্মা কাঁদছে। রাশিয়া কাঁদছে। এত অল্প বয়সী যুবকদের হত্যা করা হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন আমার নিজের সন্তান মারা গেছে।’

রোমান নামের আরেকজন বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা ছিলো। আমি পাশেই একটি ভবনে থাকি। ফলে সেদিন ঠিক কী ঘটেছে, সেটি আমি আমার জানালা দিয়ে দেখেছি। ঘটনাটি রীতিমত ভয়ঙ্কর এবং খুবই দুঃখজনক।’

ইয়েভজেনি নামে একজন বলেন, ‘যারা এটি করেছে, তারা মানুষ নয়। তারা আমাদের শত্রু। আমি মনে করি মৃত্যুদণ্ডের ওপর থেকে আমাদের স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া উচিত। অন্তত সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য হলেও।’

এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মস্কোর বাসমানি জেলা আদালত তাদেরকে দুই মাসের জন্য পুলিশি হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আনুষ্ঠানিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। নামগুলো হচ্ছে দালেরদজন মিরজোয়েভ, সাইদাক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি ও মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ। মিরজোয়েভ তার সব দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি মূলত তাজিকিস্তানের নাগরিক।

অন্যদিকে ক্রোকাস সিটি হলে হামলা ও ব্যাপক গুলির ঘটনার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী। তাণ্ডব চালানোর পর হামলাকারীদের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারাও বলেছেন, হামলার সঙ্গে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী জড়িত এবং এটি নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।

কিন্তু এখানে বেশ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কোনো না কোনোভাবে ইউক্রেনই নৃশংস এই হামলার পেছনে রয়েছে বলে রুশ কর্মকর্তারা একটি ধারণা প্রচার করছেন। শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টাকালে চার বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুতিন আরো দাবি করেছেন, ‘সীমান্ত অতিক্রম করানোর উদ্দেশ্যে ইউক্রেন অংশে তাদের (হামলাকারীদের) জন্য একটি জায়গা প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।’

কিয়েভ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু তার পরও এটি ক্রেমলিনপন্থী পক্ষগুলোকে এ কথা বলা থেকে বিরত রাখতে পারেনি যে হামলার সঙ্গে ইউক্রেনের সংযোগ রয়েছে।

রাশিয়ার সরকারপন্থী সংবাদপত্র মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস তাদের ওয়েবসাইটে ইউক্রেনবিরোধী একটি মতামতধর্মী লেখা প্রকাশ করেছে। ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখাটিতে উপসংহার টানা হয়েছে এভাবে—‘কিয়েভ শাসনামলকে ধ্বংস করার সময় এসেছে…ওই দলের প্রত্যেককে অবশ্যই মরতে হবে। আর এই কাজ করার সামথ্যও রাশিয়ার রয়েছে।’

এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এনেছে। ভয়াবহ এই হামলার প্রতিক্রিয়া ক্রেমলিন কিভাবে দেখাবে? মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে যে ঘটনা ঘটেছে, ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলা আরো বৃদ্ধি করার ন্যায্যতা আদায়ে রাশিয়ার নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা কি এটাকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন?

সূত্র : বিবিসি

 

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন