কানাডার সংবাদ লেখালেখি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু বেশি দেরি হয়ে গেলো না তো?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডো আজ একাদশতম দিনে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন। ছবিঃ সিটিভি’র সরাসরি সম্প্রচার থেকে নেওয়া স্ক্রীন শর্ট

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু বেশি দেরি হয়ে গেলো না তো?   কানাডার প্রধানমন্ত্রী আজ অটোয়াস্থ তাঁর নিজ ভবনের সামনে থেকে টানা একাদশতম দিনে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেওয়াকালীন সময়ে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বসহকারে বলেছেন ‘ বিদেশ ফেরৎ যাত্রিরা যদি সরকারে জনস্বাস্থ্য বিভাগের আইনানুসারে ১৪ দিন সেল্ফ আইসোলেশনে না থাকেন তাহলে  জরিমানা কিংবা জেল দেওয়া হবে’ । আজ যখন কথাগুলো বলছেন তখন সারা কানাডা লকডাউন। কানাডার মানুষ ঘরবন্দি হয়ে নির্বাসনে আছেন। যে কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী আরো অনেক পূর্বেই বলা উচিত ছিলো এবং বিদেশফেরৎ যাত্রিদেরকে বাধ্যতামূলক স্কেনিং এবং সরকারের তত্ত্ববধানে হোম কোয়ারাইন্টানে রাখার কথা ছিলো তা করা হয়নি এখন যা সর্বনাশ হবার হয়ে গেছে!  জানুয়ারী থেকে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের তান্ডব ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে সারা বিশ্বে এখন অপ্রতিরোধ্য মহামারি যা সারা বিশ্ব এই অদৃশ্য বিশ্বযুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত। কানাডায় জানুয়ারি থেকেই ভাইরাসের রোগি শনাক্ত করা হলেও ফেব্রুয়ারি থেকে তান্ডব বাড়তে থাকে যা এখন ভয়ানক চিন্তনীয় বিষয়। শত শত থেকে হাজার হাজার অতিক্রম করতে চলছে। এটার জন্য কিছুটা হলেও সরকারের অদূরদর্শীতার কারণে নয় কি? কানাডার নাগরিক যারা বিভিন্ন দেশে বেড়াতে গেছেন কিংবা বিভিন্ন কারণে অবস্থান করছিলেন যা মহামারী আক্রান্ত দেশ কিংবা শহর যেমন চীন- ইতালি- স্পেন-ইরাক- যুক্তরাজ্য কিংবা যুক্তরাস্ট্র থেকে  হাজার হাজার মানুষ কানাডার বিভিন্ন শহরে এসেছেন কিন্তু দুর্ভাগ্য কোন পোর্টে স্ক্রিনিং করা হয়নি।

শুধু মুখে মুখে বলা হয়েছে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য। কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে জনস্বাস্থ্য দপ্তর থেকে তা তদারকি করা হয়নি এমনকি গতকাল পর্যন্ত। ভাবা যায় কি? কানাডার মতো বিশ্বের অন্যতম এক শ্রেষ্ঠ উন্নত দেশে তা ছিলো অবিশ্বাস্য? এই হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডায় ফেরৎ আসার মধ্যে ১% মানুষ  হোম কোয়ারেন্টেইনে থেকেছেন কি-না সন্দেহ। হয়তো নিজের পরিবার পরিজনকে বাঁচানোর জন্য দু’একজন থেকেছেন বাকী সব পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সব ধরনের গণজমায়েত, কর্মস্থলে যাওয়া আসা অবাধে শপিংমলে বাজারে যাতাযাত করেছেন কিন্তু কানাডার জনস্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এই বিদেশ ফেরৎ মানুষরা কি হোম কোয়ারাইন্টাইনে থেকেছে কি না একবার কি খুঁজ নেওয়া হয়েছে? শুধু সচেতনার ব্যাপারে বললেই কি হলো? তাদের কি কোন দায় দায়িত্ব ছিলোনা? কানাডায় করোনা ভাইরাসের এ তান্ডবের মূল কারণ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের কাছ থেকেই যে সংক্রমিত হয়ে মহামারী দেখা দিয়েছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় আছে কি? এমন কী আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারও বিদেশ সফর করে আসার পর নিজেরা হোম কোয়ারাইন্টানে থাকেন নি। পরে আক্রান্ত হবার পর থেকে থাকছেন? বিষয়টি ভাবার মতো নয় কি?

 

মৃত্যুর মিছিলে শব্দহীন বিশ্বযুদ্ধ

আজ বলা হয়েছে বিদেশ ফেরৎ যদি কেউ হোম কোয়ারাইন্টানে বা হোম আইসোলেশনে না থাকেন তাহলে জরিমানা কিংবা জেল হতে পারে!  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু বেশি দেরি হয়ে গেলো না তো? আক্রান্তের সংখ্যা যখন অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েই চলছে আর তখন তা বলা হলো সত্যিই কানাডার মতো দেশে আমাকে একটু অবাক করলো!

পুনশ্চঃ দেশ ও প্রবাসের (কানাডা ছাড়া) বিভিন্ন শহর থেকে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন এবং স্বজনরা ফোনে-স্কাইপে- ইনবক্সে- ম্যাসেঞ্জারে খোঁজখবর নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন এবং প্রশংসা করছেন এবং পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে রীতিমতো তুলোধুনো  দিচ্ছেন। বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সবাই দেখেছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জাতির জন্য কাঁদছেন (একটি ক্রন্দনরত পুরানো ছবি ভাইরাল হয়েছে) সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য বলেছেন। যা প্রত্যেক ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পোঁছে গেছে সব পরিবার দু’হাজার ডলার করে পাচ্ছে আরও কত কি? সবাই ‘আমাদের আভ্যন্তরীন’ বিষয় না জেনেই বলছেন তোমরা কতো ভাগ্যবান (!) তোমাদের সরকার বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সরকার যিনি ভাইরাসটিতে যখন ২/৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন সে সময়েই সরকার জনগণের সব দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশের মানুষকে বলেছি, তাদের সঙ্গে আমরাও প্রশংসা করেছি। শুধু বলতে পারিনি কয়েকসপ্তাহ হলো বিভিন্ন ষ্টোর এবং ফার্মাসি ঘুরে ঘুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক গ্লভস পাওয়া যাচ্ছে না? বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশে এই ছোট্ট পপুলেশনে তা পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশ -ভারত কিংবা পাকিস্তানের মতো জায়গায় ১৬ কোটি কিংবা একশত্রিশ কোটি মানুষের দেশে তা পাওয়া যাচ্ছে এবং খুব ভালো উন্নত মানের!

 

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর তুলনা হয় না। আমি, আমরা যারা কানাডায় থাকি তারা গর্ব করেই বলতে পারি আমাদের এমন একজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন যিনি সত্যিই কানাডার নাগরিক মানে আমাদের মতো মানুষদের অক্সিজেন। সব দেশের মানুষের ভাগ্যে এরকমের প্রধানমন্ত্রী পাওয়া যুগে যুগে হয় কিনা সন্দেহ। মানবিক আর মানবতার একজন শীর্ষ বিশ্ব রাস্ট্র প্রধান যিনি নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি নিজেও প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সেল্ফ আইসালেশনে থেকেও জাতির উদ্দেশে প্রতিদিন ভাষণ দিচ্ছেন, সাহস যোগাচ্ছেন সারা দেশের বিষয় মনিটরিং করছেন। সব ধরনের মাস্ক-স্যানিটাইজার ভেন্টিলেটর, ভেকসিন, ঔষধ তৈরী এবং  বিতরনের জন্য জোর দিচ্ছেন। দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন বহুমুখি প্রদক্ষেপ নিচ্ছেন যা প্রশংসার দাবিদার। ব্রেভো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রডো।

 

পরিশেষে বলতে চাই,  প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ঘরে বসে আছি, কাজকর্ম বন্ধু-বান্ধবহীন নির্বাসনে! শরীরের ওজন বাড়ছে, সাদা দাড়িগুলো ঠিক মাশরুমের বাগানের মতো মনে হচ্ছে। ঘরে থাকা বন্দিজীবনে টিভি-ইন্টারনেট ফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া এখন আমাদের অক্সিজেন। সবাইকে বলছি সারা জীবন চায়নার জিনিসপত্র কম মূল্যে ব্যবহার করেছেন এবং চায়নাকে কতরকম গালিগালাজ করেছেন এখন ঠেলা সামলান, এমন মাল বিনামূল্যে ছেড়েছে যা বিশ্বের দেশে দেশে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব  ক্ষমতায় থাকার জন্য কিংবা যাবার জন্য  মানুষ  হত্যা , শক্তি প্রদর্শন হুংকার বোমা আন্তঃমহাদেশীয়  ক্ষেপণাস্ত্র সব অচল এমন কি রাস্ট্রপ্রধানরা অসহায় হয়ে নিজের জান বাঁচাতে ব্যস্ত! শুধুই সচল চায়নার সেই মাল করোনা ভাইরাস। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন, সাবধানে থাকবেন। ঘরে থেকে সরকারের সব নিয়ম মেনে চলবেন এ প্রত্যাশা রইলো ।

 

কানাডায় আজ দুপুর পর্যন্ত করোনায়-আক্রান্ত ৩৫৮৫, মৃত্যূ ৩৫ । ক্যুইবেক – ১৬২৯, মৃত্যূ -৮ । মন্ট্রিয়ল -৭৮২, মৃত্যূ-১

 

-সদেরা সুজন । প্রধান নির্বাহী, কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি, সিবিএনএ২৪ডটকম।

মন্ট্রিয়ল ২৬.৩.২০২০

 

সি/এসএস



 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =