মিডিয়ায় হঠাৎ এত মৃত্যু কেন?
আশরাফি দিবা ।। ধরুন আপনি রাতে ঘুমালেন, কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানলেন আপনি মৃত। অথচ তখনও আপনি একদম সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন। তাহলে ঠিক কেমন অনুভুতি হবে আপনার?
বেশ কদিন ধরে কিছু তারকার সঙ্গে এমনটাই ঘটছে। জীবিত থাকা স্বত্তেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত দেখাচ্ছে তাদের। আলোচিত সাবেক পর্ণ তারকা মিয়া খলিফা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সমালোচিত তারকা হিরো আলম কেউ বাদ পরেননি এই তালিকা থেকে।
সর্বশেষ ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনির স্বামী শরিফুল রাজের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে। এমনকি চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সঙ্গে এই ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে।
হঠাৎ করেই এইসব তারকাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘রিমেম্বারিং’ করে দেওয়া শুরু করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। যেসব ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অধিকারী মৃত্যুবরণ করেন, তাদের প্রোফাইলেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই ট্যাগ জুড়ে দেয়।
রিমেম্বারিং মেসেজে ফেসবুক লিখে দেয়, ‘আমরা আশা করি যারা তাকে (যার অ্যাকাউন্ট তার নাম) ভালোবাসেন, তারা তাকে স্মরণ ও সম্মানিত করার জন্য তার প্রোফাইল দেখে সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন।’
অথচ তারকাদের মৃত দেখে যখন অনুরাগী মহলে শোকের মাতম চলে তখন নিজেদের মৃত দেখে তারকারা বিভ্রান্ত হয়ে পরে।
গত জানুয়ারি মাসে নিজের ফেসবুকে নিজেকে রিমেম্বারিং দেখে হতবাক হয়েছিলেন ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তখন হঠাৎ করেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে, মারা গেছেন পলাশ। পরে তিনি নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
এরপর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আমেজের মাঝেই খবর ছড়িয়ে পরে মারা গেছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। এই অভিনেতা বলেন, ‘কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে লেগে ফেসবুকে মেরে ফেলছে।’
ধীরে ধীরে এই তালিকায় নাম জুড়ে আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, মিয়া খলিফা, মডেল ও অভিনেত্রী সুবাহ শাহ হুমায়রা, হিরো আলমসহ আরও অনেকের।
কিন্তু প্রশ্ন হল জীবিত থাকার পরেও ফেসবুকে কেন মৃত দেখায়? অর্থাৎ ফেসবুকে ‘রিমেম্বারিং’ কেন দেখায়?
পৃথিবীজুড়ে করোনার কারণে অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। করোনার থাবার কারনে প্রায় গুগল, ফেসবুক, বিং, ইয়াহু সহ সব বড় ধরনের সোশ্যাল মাধ্যম গুলোর অফিস নিউইয়র্ক সহ বড় বড় দেশগুলোতে অবস্থিত।
এসব দেশেও অঘোষিত লকডাউন চলার কারণে দেশের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এককালীন ছুটি দিয়ে দেয়া হয় এবং এর জন্য এসব প্রতিষ্ঠান এক ধরনের বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট সিষ্টেম চালু করে এবং কর্মীরা বাসায় বসে অনলাইনে নিয়মিত চেক করে।
ফেসবুক প্লাট ফর্মেও ঠিক এমনই একটি রোবট বা বট সিষ্টেম চালু রয়েছে, যে কাজ গুলো রোবটের মাঝে কমান্ড করা হয়েছে ঠিক সেগুলোই রোবট করে দিচ্ছে।
যেহেতু প্রতিদিনি বেড়ে চলছে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা এবং তাদের কাছে ঠিক এর জন্যও হাজার হাজার মেইল জমা হচ্ছে যেন মৃত ব্যক্তির একাউন্ট রিমেম্বারিং করে দেয়া হয় এবং এই কাজ টি স্বাভাবিক সময়ে যাচাই বাচাই এবং সঠিক ডেট-সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেই বলেই এই কাজটি কমান্ড করা রোবট করে দিচ্ছে।
যার ফলে বর্তমানে কয়েকটি রুল বেধে দিয়েছে ফেসবুক কতৃপক্ষ এবং সেই রুল অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে এবং এসব একাউন্ট একা একা রিমেম্বারিং হয়ে যাচ্ছে।
যেহেতু করোনা পরিস্থিতি চলছে, সেহেতু মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাবার ফলে তেমন যাচাই বাচাই হচ্ছে না একদমই,বা ডেথ-সার্টিফিকেট ও ঠিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।
মূলত সিষ্টেম টা করা হয়েছিলো, যে কোন ব্যক্তি যদি মারা যায় তবে তার পরিবারের লোকজনেরা মৃত ব্যক্তিকে স্মরণ করে রাখতে রিমেম্বারিং বা মৃত ব্যক্তি ঘোষনা করে রেখে জানান দেয়।
কিন্তু আমাদের দেশের এক শ্রেনী যাদেরকে স্প্যামার বলা যায়, তারা শত্রুতার বসত এই কাজটি করে যাচ্ছে আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলতে এবং বর্তমানে এই কাজ টি খুবই সহজ ভাবে করা যাচ্ছে।
যদি আপনি লক্ষ্য না করেন তাহলে কেউ যদি আপনার নামে ভুয়া মৃত্যু সনদপত্র বা ডেথ-সার্টিফিকেট অথবা আপনার টাইমলাইনে যদি পোস্ট করে যে আপনি মারা গেছেন তাহলে এমন ধরনের পোষ্ট বা কমেন্ট করে ফেসবুকের কাছে জমা বা রিপোর্ট করে দেয় এতে আপনার আইডির এর কার্যক্রম সাময়িক ভাবে আপনি হারাবেন।
তবে আপনি চাইলেই এর থেকেও রেহাই পেতে পারেন তবে এর জন্য জন্য আপনাকে কয়েকটি সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি পরিবর্তন করতে হবে।
আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন যে, আপনার প্রোফাইল শুধু মাত্র আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের মানুষ গুলি ছাড়া ‘রিমেম্বারিং’ করতে স্বাভাবিকভাবে পারবে না তবে ডকুমেন্টেসন থাকলে বাইরের যে কেউ পারবে।
অতএব আপনার একাউন্টটি যদি ‘রিমেম্বারিং’ হয় তাহলে আপনাকে ধরে নিতে হবে যে এই কাজটি আপনার ফ্রেন্ড লিস্টেরই ভেতর থেকে কেউ করেছে।
কিভাবে করা হচ্ছে রিমেম্বারিং?
বর্তমানে এই কাজটি করার জন্য ফেসবুক ও তাদের বেশ কিছু কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে, কিন্তু রিমেম্বারিং এর অপশনটিকেও তারা বেশ গুরুত্ব হিসাবে দেখছে। তাছাড়া অপশন গুলির যথাযথ প্রুভের ক্ষেত্রেও কমিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এর কারন হিসাবে তারা ওয়ার্নিং দিয়ে রেখেছে (কোভিড ১৯) জন্য, কিন্তু আবার দেখা যাচ্ছে অনেকেই একে টেকনিক্যাল বাগ হিসাবে আখ্যায়িত করছে।
প্রথমে ভিক্টিম এর আইডী টার্গেট করে লিংকটি কপি করে নেয়া হচ্ছে এবং তারা ভিক্টিমের প্রোফাইল এর টাইমলাইনে একটি পোষ্ট করে দিচ্ছে।
এমন ভাবে ১ বা কয়েকটি আইডি থেকে পোষ্ট করে এর একটি স্ক্রিনশট নিয়ে নেয়।
এবার তারা এই লিংকে ঢুকে একাউন্ট এর নাম সার্চ করে এবং সাবমিট এর ২, ১ দিন আগে স্ক্রিনশট এটার্চড করে দেয়…
ঠিক উপরের মত এ রকম ইন্টারফেস এ চলে আসে, এখানে সব কিছু সঠিক ভাবে দিয়ে সাবমিট করলেই জীবিত ব্যক্তিও ফেসবুকে মৃত বলে ঘোষণা হবে।
তবে এই সমস্যায় পরলে চিন্তার কারণ নেই। চাইলেই এই থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
কীভাবে রিমেম্বারিং থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব?
প্রথমে আপনাকে সেটিং এ যেতে হবে এরপর নিচের দিকে স্ক্রলিং করলে একটি অপশন পাবেন…
এর পর টাইমলাইন এন্ড ট্যাগিং (Timeline and Tagging) এ ক্লিক করলে দেখতে পাবেন প্রথম অপশনে এ লেখা আছে…
হু ক্যান পোস্ট ইউর টাইমলাইন?
এই অপশন যদি ফ্রেন্ডস করা থাকে তাহলে অনলি মি করে দিতে হবে। কারন এতে আপনার টাইমলাইনে কেউ পোষ্ট করতে পারবে না,
এবার আপনি আবার সেটিং এ ফিরে আসবেন এবং স্ক্রলিং করলে দেখবেন যে পাব্লিক পোষ্ট(Public Posts) অপশন আছে সেখান থেকে আপনার পাব্লিক করা কমেন্ট সেকশন অফফ করে দিন।
এবার আবার সেটিং এ ফিরে আসবেন এবং প্রথম অপশন (Personal Information) এ ক্লিক করুন।
এর পর ,ম্যানেজ লিগাসি কন্টাক এ ক্লিক করুন।
এর পর আপনি এখান থেকে আপনার চুজ লিগ্যাসি কন্টাকে একজন বিশ্বাসী ব্যক্তিকে বা নিজের আরেক একাউন্টে এড করে দিন। কারন মনে রাখবেন একমাত্র লিগ্যাসি কন্টাকের ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ আর আপনাকে রিমেম্বারিং এর বিড়ম্বনায় ফেলতে পারবেন না। একমাত্র ইনি আপনাকে করতে পারবেন।
এভাবে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টকে ‘রিমেম্বারিং’ সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
-আমারসংবাদ